ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবন সবার জন্য গর্ব

কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘের স্বীকৃতি

জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ১৭ মে ২০২৩

কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘের স্বীকৃতি

জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা

জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক একটি রেজুলেশন সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবন ‘কমিউনিটি ক্লিনিককে’ স্বীকৃতি প্রদান করল। প্রধানমন্ত্রীর অসামান্য উদ্ভাবন কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘের ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেছেন, এটা বাংলাদেশের সবার জন্য গর্বের।
গত ১৬ মে ‘কমিউনিটিভিত্তিক প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা : সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনের লক্ষ্যে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতি’ শিরোনামের ঐতিহাসিক রেজুলেশনটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে বাংলাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবনী নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো।
বুধবার বিকেলে এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। মুখ্য সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী মডেল বা উদ্ভাবনী উদ্যোগ কমিউনিটি ক্লিনিক সেটি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি রেজুলেশন হয়েছে সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণার একটা চূড়ান্ত স্বীকৃতি প্রদান হয়েছে।
তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগের জাতিসংঘের স্বীকৃতি সেটা নিয়ে আমরা বাংলাদেশের সবাই গর্ব করতে পারি। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে এক অনুকরণীয় রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেল এই রেজুলেশনের মাধ্যমে।
কমিউনিটি ক্লিনিককে ‘পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ মডেলের একটা অনন্য উদাহরণ হিসেবে মন্তব্য করে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক বাংলাদেশে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এখানে জমি জনগণ দিচ্ছে, ভবন নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার, সেবাদানে স্বাস্থ্যসেবা কর্মী সেটি সরকার দিচ্ছে। ওষুধ, যন্ত্রপাতিসহ সকল উপকরণ সরকার দিচ্ছে।
জাতিসংঘের রেজুলেশনে অন্য দেশগুলোকে বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণাকে  বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মুখ্য সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উদ্যোগকে জাতিসংঘ স্বাস্থ্য সেবা ও পরিচর্যা প্রদানের ক্ষেত্রে অংশীদারিত্বের একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলছে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্ভাবনী চিন্তাকে জাতিসংঘের অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোকেও অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো যেন বাংলাদেশের এই কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণাকে গ্রহণ করেন এবং বাস্তবায়ন করেন।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের উন্নতির পেছনে কমিউনিটি ক্লিনিকের অবদানের কথা উল্লেখ করে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি, মানুষের গড়আয়ু বৃদ্ধি পাওয়া বা স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নতুন নতুন সৃষ্টিশীলতার তৈরি হয়েছে সেগুলো সবই কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমেই শুরু।
তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের যে স্বাস্থ্যসেবা এর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, গর্ভবতী এবং প্রসূতির স্বাস্থ্য, নবজাতক এবং শিশুদের স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, পুষ্টি সেবা, ইপিআই কার্যক্রম পরিচালনা, সংক্রামক-অসংক্রামক যাবতীয় রোগের চিকিৎসার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক একটা অসাধারণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পৌঁছাতে কমিউনিটি ক্লিনিকের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে মুখ্য সচিব বলেন, বাংলাদেশে আমরা যে বলি ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে, সে ক্ষেত্রে এই কমিউনিটি ক্লিনিক বড় মাইলফলক। 
তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবর্তিত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু হ্রাস পেয়েছে, শিশুমৃত্যু হ্রাস পেয়েছে, আমাদের নবজাতকের যে মৃত্যু সেটি হ্রাস পেয়েছে। সংক্রামক, রোগ প্রতিরোধ হয়েছে, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ হয়েছে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা হচ্ছে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ১৬ মে সাধারণ পরিষদে রেজ্যুলেশনটি উপস্থাপন করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত। কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনস্বরূপ জাতিসংঘের ৭০টি সদস্য রাষ্ট্র এই রেজ্যুলেশনটি কো-স্পন্সর করে। রাষ্ট্রদূত মুহিত তার বক্তব্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা অর্জনে এই রেজ্যুলেশনের ইতিবাচক প্রভাব তুলে ধরেন। তিনি জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলো কর্তৃক এই রেজুলেশনের অনুমোদনকে ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অর্জনের বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন।

মুহিত বলেন, রেজ্যুলেশনটির সফল বাস্তবায়ন কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের নিমিত্তে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে এই রেজ্যুলেশনের সুদূরপ্রসারী  প্রভাব রয়েছে। কারণ এটি সদস্য দেশগুলো, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এই কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক মডেল স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রবর্তন ও বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বহুপক্ষীয় এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন ব্যাংক এবং দাতাদের যথাযথ কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
উল্লেখ্য, দেশের মানুষকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকভিত্তিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা চালু করেছিলেন, যা তৃণমূল পর্যায়ে বিপ্লব ঘটিয়েছে। মানুষকে নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার এ পর্যন্ত সারাদেশে পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারিত্বে ১৪ হাজারেরও বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেছে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের পক্ষ থেকে রেজ্যুলেশনটি সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে নেগোশিয়েশন করেন উপস্থায়ী প্রতিনিধি ড. মো. মনোয়ার হোসেন। 

×