ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দিনভর মাহী নাটক

গ্রেপ্তারের পর কারাগারে  শেষে জামিন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ১৮ মার্চ ২০২৩

গ্রেপ্তারের পর কারাগারে  শেষে জামিন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও মারামারির মামলায় আদালত থেকে মাহিয়া মাহীকে কারাগারে নেওয়া হচ্ছে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ব্যবস্থা ॥ শিল্পী সমিতির নিন্দা

ডিজিটাল আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর তিন ঘণ্টা পরই জামিনে মু্িক্ত পেয়েছেন আলোচিত নায়িকা মাহিয়া মাহী। শনিবার রাত প্রায় আটটার দিকে তিনি গাজীপুর কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। সময় স্বজনরা তাকে কাছে পেয়েই অপেক্ষমাণ ভক্তরা ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেয়। সময় স্বজনরা তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে দ্রুত নিয়ে যান। এর আগে বিকেলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত- এর বিচারক ইকবাল হোসেন মাহীর জামিন মঞ্জুর করেন। প্রেগনেন্সি সেলিব্রেটি বিবেচনায় আদালত আদেশ দিয়েছেন বলে জানান মাহীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার শাহাদাত সরকার। তিনি বলেন, তার মক্কেল আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই মামলা হওয়ার পরও দেশে চলে এসেছেন। ওমরা পালন শেষে দেশে ফেরার সময় এদিন দুপুর পৌনে বারোটায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিমানবন্দরের ভিআইপি গেট থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। পরে মারধর চাঁদাবাজি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মাহীকে দুপুরেই গাজীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। অবশ্য সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি গাজীপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। রিমান্ড না মঞ্জুর করে তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মারামারির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মো. ইকবাল হোসেন। গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত- আদেশ দেন।

জামিন শুনানিতে মাহিয়া মাহীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট আনোয়ার সাদাত, অ্যাডভোকেট রিপন চন্দ্র সরকার এবং অ্যাডভোকেট নবীজুল ইসলাম। পরে অ্যাডভোকেট আনোয়ার সাদাত সাংবাদিকদের জানান, মাহীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুটি মামলাতেই জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।

মাহীর স্বামী রকিব সরকারের সঙ্গে ওমরাহ হজ পালনের জন্য সৌদি আরব গিয়েছিলেন। তবে মাহীর সঙ্গে দেশে ফেরেননি রকিব, তিনি গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সৌদি আরব থেকে ফেরার পর দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাহীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দুপুর দেড়টার দিকে তাকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। মাহীকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন কয়েক জন নির্মাতা শিল্পী সমিতির নেত্রী নিপুণ।

মাহীকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার আসাদুজ্জামান জানান- শুক্রবার রাতে মারধর, চাঁদাবাজি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মাহিয়া মাহী তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের বাসন থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই দুই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

আলোচিত ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ স্থানীয়রা জানায়- সম্প্রতি ওমরা পালন করতে স্বামীর সঙ্গে সৌদি আরব যান মাহী। সেখান থেকে দেশে পৌঁছলে বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বামী রকিব সরকার পলাতক রয়েছেন। মারধর, চাঁদাবাজি জমি দখলের অভিযোগে তাদেরসহ ২৮ জনকে আসামি করে স্থানীয় ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে একটি  মামলা দায়ের করেন। ছাড়া বাসন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রোকন মিয়া বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের (মাহী রাকিব) বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।

এরপর ওমরাহ পালন করতে যাওয়া চিত্রনায়িকা মাহী শুক্রবার সৌদি আরবের মক্কা শহর থেকে ফেসবুক লাইভে এসে তার স্বামী রকিবের গাড়ির শো-রুম ভাঙচুর হামলার অভিযোগ করেন। এর কিছু সময় পর রকিব মাহী ফেসবুক লাইভে এসে বলেন- গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে আমাদের গাড়ির শো-রুম দখল করতে দিচ্ছে ইসমাইল ওরফে লাদেনকে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে দেড় কোটি টাকা ঘুষের কথা বলার পর পরই তাকে মাহীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তরানি¦ হয় বলে তার স্বজনদের অভিযোগ।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মাহী রকিব সরকার আবারও ফেসবুক লাইভে আসেন। তারা বলেন- গাজীপুর পুলিশ আমাদের সিকিউরিটিসহ অন্যদের অ্যারেস্ট করেছে। আমাদের শো-রুম থেকে সবাইকে বের করে দিচ্ছে। বলেছে, না বের হলে গুলি করবে। পুলিশ কখনো এগুলো করতে পারে? আমরা সকালে এয়ারপোর্টে নামব। হয়তো আমাদেরও গ্রেপ্তার করবে।

বর্তমানে নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা মাহিয়া মাহী। কিছু দিনের মধ্যেই মা হবেন তিনি। এর মধ্যেই গ্রেপ্তার হলেন এই নায়িকা। এর আগে গত বছর সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদের সঙ্গে তার ফোনালাপ ফাস হওয়ার পর আলোচনায় আসেন। প্রতিমন্ত্রী তাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছেন এমন খবরে তোলপাড় দেখা হয় এবং সরকার বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে শেষ পর্যন্ত তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। তারপর থেকেই মাহী আলোচনা-সমালোচনায় সরব ছিলেন। সর্বশেষ তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আবারও আলোচনায় আসেন। কিন্তু তাকে মনোনয়ন না দিয়ে এলাকায় গিয়ে দলের জন্য কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

জানা গেছে- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আসামি হওয়ার খবর আগেই জেনেছিলেন চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহী। এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই ওমরাহ পালন শেষে শনিবার দেশে ফেরেন তিনি। দুপুর ১২টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মাহীকে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে।

মাহিকে গ্রেপ্তার অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশের দসস্য এবং বিমানবন্দরে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলেন- মাহী বোরকা পরে বিমান থেকে নেমেছিলেন। মামলার বিষয়টি তিনি আগেই জেনেছিলেন। বিমানবন্দরে নেমে গ্রেপ্তার হতে পারেন সেই আশঙ্কা থেকে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়াতে ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সময় মাহীকে হুইল চেয়ারেও দেখা যায়।

ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সৌদি আরব থেকে বিজি ৩৩৬ ফ্লাইটে জেদ্দা থেকে মাহী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। নম্বর বোর্ডিং ব্রিজের নম্বর বেল্টে তার লাগেজ ছিল। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা জানান, বিমানবন্দরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে পারেননি মাহী। বিমান থেকে নামার পর ইমিগ্রেশন অফিসাররা মাহীর ইমিগ্রেশন শেষ করেন। এরপর আমাদের হাতে মাহীকে তুলে দেওয়া হয়।

এর আগে মাহী ফেসবুক লাইভ করার পর স্থানীয় ইসমাইল হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ তোলেন রকিব সরকার তার প্রায় সোয়া ১১ শতাংশ জমি দখল করে গাড়ির শো-রুম করেছে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তিনি বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি মীমাংসার জন্য চেষ্টা করা হয়। শুক্রবার ভোররাতে রকিব সরকারের লোকজন ওই শো-রুমে নতুন কিছু গাড়ি উঠাতে থাকে। খবর পেয়ে আমিসহ কয়েক জন সেখানে যাই। সময় রকিব সরকারের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা নিজেরা শো-রুম ভাঙচুর করেছে। জমি ছেড়ে দেওয়ার শর্তে রকিব আমার কাছে এক কোটি টাকা দাবি করে।

এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহীকে গ্রেপ্তারের পর গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন- ‘বোরকা পরে বিমান থেকে নেমেছিলেন মাহি। ইমিগ্রেশন পার হয়ে বের হওয়ার সময় আমাদের টিমের এক সদস্য তাকে দেখে ফেলেন। আমরা যখন বিমানবন্দরে যাই তার আগেই বিমানবন্দরের সিকিউরিটি ফোর্সকে জানিয়ে রেখেছিলাম যেন মাহী কখন ল্যান্ড করবে আমাদের জানায়। বিমানবন্দরে মাহী পৌঁছানোর পর তারা জানায় যে, তিনি কোন ফ্লাইটে এসেছেন। মাহীর পৌঁছানোর খবর নিশ্চিত করে সিকিউরিটি ফোর্স। এরপর বোরকা পরে হুইলচেয়ারে বসে ইমিগ্রেশন পার হচ্ছিলেন মাহী। এই সময় আমাদের টিমের এক সদস্য তাকে দেখে ফেলেন। এরপর আমরা তার কাছে গিয়ে শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চাই। তিনি ভালো আছেন বলে জানান। এরপর তাকে আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠাই। মাহী তার স্বামী রকিব সরকারের সঙ্গে ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব গিয়েছিলেন। তবে মাহীর সঙ্গে দেশে ফেরেননি রকিব। তিনি গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

এদিকে গাজীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার মোস্তাফিজুর রহমান জানান- পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ করে অপমান-অপদস্ত হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা, বানোয়াট, আক্রমণাত্মক, কুরুচিপূর্ণ মানহানিকর তথ্য প্রচার করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (আইসিটি) বাসন থানার এসআই রোকন মিয়া বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এবং ইসমাইল হোসেন বাদী হয়ে চাঁদাবাজি ভাঙচুরের অভিযোগে ওই পৃথক মামলা দুটি দায়ের করেন। শুক্রবার রাতে জিএমপির বাসন থানায় ওই মামলা দুটি দায়ের করা হয়।

তিনি জানান, বাসন থানাধীন দিঘীরচালা এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী ইসমাইল হোসেনের কোটি টাকা মূল্যের জমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় মাহিয়া মাহী তার স্বামী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রকিব সরকারকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। মামলায় পুলিশ আরও নয়জনকে শনিবার ভোররাতে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলেন- বাসন থানার তেলিপাড়া এলাকার মোতালিব হোসেনের ছেলে সাজ্জাদ হোসেন সোহাগ (৩৮), পালের পাড়া এলাকার রজব আলীর ছেলে আশিকুর রহমান (৩২), বাড়ীয়ালী এলাকার ইয়ার উদ্দিনের  ছেলে ফাহিম হোসেন হৃদয় (২২), সদর থানার শিমুলতলী এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে জুয়েল রহমান (২৫), একই থানার নাগা এলাকার খালিদ সাইফুল্লাহ জুলহাস (৩০), গাছা থানার শরিফপুর এলাকার আবুল হোসেন -লের ছেলে সুজন - (৩৪), টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার ইদারজানি গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে জমশের আলী (৪৪), চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সাতকানিয়া গ্রামের মৃত পেটাল আলীর ছেলে মোস্তাক আহমেদ (২২) নেত্রকোনার আটাপাড়া উপজেলার আড়াগাঁও গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মাহবুব হাসান সাব্বির (১৮) গ্রেপ্তারকৃতদের শনিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে শনিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেনচিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহী জমিসংক্রান্ত ঘটনায় পুলিশ বিভাগ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ব্যাপারে ফেসবুক লাইভে মিথ্যা মন্তব্য করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহী তার স্বামী রকিব সরকার পুলিশ বিভাগ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, আক্রমণাত্মক, মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। একজন চলচ্চিত্র শিল্পীর কাছ থেকে এমন বক্তব্য আশা করি না। ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।  তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চিত্রনায়িকা মিথ্যা বলে মানুষের সহানুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ করেছেন তিনি। তারা পুলিশকে বিতর্কিত করার মিশনে নেমেছেন। অথচ মাহী বা তার স্বামী জমিজমাসংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসেননি। আজ যাদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন, তাদেরও আমি চিনি না। পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (আইসিটি) তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জমিসংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে তাদের প্রতিপক্ষের কাছ থেকে পুলিশ টাকা নিয়েছে বলে যে অভিযোগ করেছেন, এটা তারা কিভাবে বলতে পারেন ? সময় তিনি জানান, মামলাগুলোর সুষ্ঠু স্বচ্ছ তদন্ত করা হবে। জিএমপি কমিশনার আরও বলেন, মাহিয়া মাহীর স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে এর আগে অস্ত্র, হত্যা ধর্ষণের তিনটি মামলা রয়েছে। ওই মামলার ঘটনা সত্য ছিল, কিন্তু কেউ সাক্ষ্য দেয়নি। তবে এখন মামলাগুলো পুনরায় তদন্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। ছাড়া রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ আসছে। তার আরেক ভাই গাজীপুরের পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি দখলের ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। আমরা গাজীপুরবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে বিভিন্ন মহাসড়ক থেকে অননুমোদিত অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। এতে সড়কে স্বাভাবিক গতি ফিরে এসেছে।

দুই মামলার এজাহারে যা আছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে- শুক্রবার সকালে মাহিয়া মাহী রকিব সরকার ফেসবুক আইডির মাধ্যমে ভিডিও শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ করে আইনশৃঙ্খলার অস্থিরতা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর জন্য অভিযুক্তরা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার হোসেন, উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ উত্তর), অফিসার ইনচার্জ বাসন থানাসহ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত বিভিন্ন পদের কর্মকর্তাদের অপমান হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মিথ্যা, বানোয়াট, আক্রমণাত্মক, কুরুচিপূর্ণ মানহানিকর তথ্য প্রচার করেছেন। মামলায় রকিব সরকারকে এক নম্বর আসামি এবং মাহিয়া মাহী সরকারকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। মামলাটি করেছেন বাসন থানার এসআই মো. রোকন মিয়া।

অপর মামলার বাদী মো. ইসমাইল হোসেন এজাহারে উল্লেখ করেছেন, বাসন থানার দীঘিরচালা এলাকার ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে তার (ইসমাইল) রড বাইন্ডিং কারখানা রয়েছে। দীর্ঘদিন তার নিকট আসামিরা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু তারা চাঁদা না পেয়ে শুক্রবার সৌদি আরবে থাকা রকিব সরকার মাহিয়া মাহীর নির্দেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করেন। এতে তিন লাখ টাকার আসবাবপত্র ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাদের হামলায় তিনি আহত হয়েছেন। মামলায় মাহিয়া মাহী রকিব সরকারকে হুকুমের আসামিসহ ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০/১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। 

মামলার বাদী ইসমাইল বলেন, দেশীয় অস্ত্রসহ রাকিব সরকারের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায় মারধর করে। তারা নিজেরাই নিজেদের শো-রুম ভাঙচুর করেছে। ঘটনায় আমিসহ কয়েক জন আহত হই। ওই জমি রকিব সরকারের নয়। জমি ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে রকিব সরকার আমার কাছে এক কোটি টাকা দাবি করেছিলেন। যেখানে এক কোটি টাকা দিলে সমস্যা সমাধান হয়, সেখানে আমি কেন পুলিশকে দেড় কোটি টাকা ঘূষ দেব? পুলিশ আমার পক্ষে থাকলে আজ কেন আমি মার খেলাম? কেন মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দিলাম? গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই রাকিব তার স্ত্রী চিত্রনায়িকা মাহীকে ব্যবহার করছেন।

×