
দৈনিক জনকণ্ঠ
বাংলাদেশের আধুনিক সংবাদপত্রের পথিকৃৎ দৈনিক জনকণ্ঠের আজ শুভ জন্মদিন। প্রতিষ্ঠার ৩০ বছর পেরিয়ে জনকণ্ঠ ৩১ বছরে পা দিল। মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বলিয়ান হয়ে দ্রুত পাঠক সমাদৃত এই পত্রিকাটি তাই প্রতিষ্ঠার ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে। এই তিন দশক পূর্তিতে জনকণ্ঠের প্রাণশক্তি অনলাইন ও প্রিন্টের পাঠকদের প্রতি রইল শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।
তিন দশক পূর্তিতে আজ আমরা শোকাহত চিত্তে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি, দৈনিক জনকণ্ঠের স্বপ্নদ্রষ্টা, প্রতিষ্ঠাতা, দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি গ্লোব-জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের চেয়ারম্যান প্রয়াত মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ স্যারকে। দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধা, কর্মবীর স্বপ্নদর্শী এ মানুষটি গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন, একদিন তিনি থাকবেন না, কিন্তু তার কাজ থাকবে। দেশের জন্য, মানুষের জন্য তার অবদান দেশের মানুষ মনে রাখবে।
তাই তো তাঁর অবর্তমানে উত্তরসূরিরা তার সেই স্বপ্ন, বিশ্বাস ও কর্মস্পৃহাকে নিজেদের জীবনে ধারণ করে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তারই হাতেগড়া এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে। আজ এই বিশেষ দিনে তিনি শারীরিকভাবে উপস্থিত নেই। কিন্তু তার উত্তরসূরিদের কর্মস্পৃহায় দুর্নিবার অনুপ্রেরণা হয়ে তিনি উপস্থিত আছেন আমাদের প্রতিটি কাজে। ফলে সম্পাদক শামীমা এ খানের নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে দৈনিক জনকণ্ঠ। জনকণ্ঠ তার সম্পাদকীয় নীতিতে অবিচল থেকে নতুন দশকে নতুনত্বের ছোঁয়ায় আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।
তিন দশক পূর্তির এই ক্ষণে দৈনিক জনকণ্ঠ স্মরণ করছে, দেশের অবিসম্বাদিত নেতা বাংলাদেশের স্বপ্নদষ্টা ও স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার দুই দশকেরও বেশি সময়ের আন্দোলনের ফসল এই বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে স্মরণ করছে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় যারা আত্মবিসর্জন দিয়েছেন সেই সকল শহীদকে। তাদের আত্মত্যাগের ফলে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি।
বঙ্গবন্ধু সব সময় স্বপ্ন দেখতেন একটি অসাম্প্রদায়িক এবং দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নকে ধারণ করেই ১৯৯৩ সালে দেশের এক সংকটকালে প্রকাশ ঘটে দৈনিক জনকণ্ঠের। যে সময় মৌলবাদ এবং বঙ্গবন্ধুর ঘাতকেরা খামছে ধরেছিল এই মানচিত্রকে। বাংলাদেশ যেন পথ হারিয়েছিল তার সৃষ্টির মূল আদর্শ থেকে। এমনি অবস্থায় বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল দর্শনকে ধারণ করে শিল্পপতি মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ উদ্যোগ নেন দৈনিক জনকণ্ঠ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের।
১৯৯৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নানা বৈচিত্র্য নিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে একসঙ্গে দেশের পাঁচটি বিভাগীয় ও গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল দৈনিক জনকণ্ঠ। প্রযুক্তির সঙ্গে দৈনিক জনকণ্ঠের সাংবাদিকতায় ছিল আধুনিকতার ছোঁয়া। যা দেশের সংবাদপত্র শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। দেশের সংবাদ প্রকাশের ধারায়ও এনেছে বৈচিত্র্য। যে কারণে দৈনিক জনকণ্ঠ দ্রুত পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে এবং সব মানুষের দৈনিকে পরিণত হয়েছে।
অনেক চড়াই-উতরাই বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠ আজ তিন দশক পূর্তি করতে যাচ্ছে। পা রাখতে যাচ্ছে চতুর্থ দশকে। নানা সময়ে জনকণ্ঠের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হয়েছে, বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়ে চেষ্টা হয়েছে প্রকাশনা বন্ধের। এমনকি শক্তিশালী বোমা রেখে জনকণ্ঠ ভবনকে ধ্বংস করে দেয়ারও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু জনকণ্ঠ এসব বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সাফল্যের জয়যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। এতসবের মধ্যেও জনকণ্ঠ তার নীতি ও আদর্শ থেকে একচুলও বিচ্যুত হয়নি।
দৈনিক জনকণ্ঠ মনে করে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে সংবাদ প্রকাশের ধারা, লেখনীতে ও রিপোর্টিয়ে আরও পরিবর্তন আসা দরকার। প্রচলিত ধারার রিপোর্টিংয়ের পরিবর্তে আরও ‘স্মার্ট’ রিপোর্টিং হওয়া উচিত। দৈনিক জনকণ্ঠ সেই ‘স্মার্ট’ রিপোর্টিংয়ের ধারা প্রচলনের চেষ্টা করছে। জনকণ্ঠের এই প্রচেষ্টা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। যার মূলে থাকবে উন্নয়ন, শিল্পায়ন ও প্রযুক্তি।
দেশাত্মবোধের কারণে জনকণ্ঠ দেশের উন্নয়নের সংবাদকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। দেশের মাইলফলক উন্নয়নগুলোকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে জনকণ্ঠ। প্রাধান্য পায় অর্থনৈতিক অগ্রগতি, প্রযুক্তির বিকাশ ও অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধ্যান। জনকণ্ঠ মনে করে, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও কাদা ছোড়াছুড়ি করতেই বাংলাদেশের ৫১ বছর চলে গেছে। আর ক’দিন বাদেই ৫২ বছর অতিক্রম করে বাংলাদেশ ৫৩ বছরে পা রাখবে। ফলে গত ১৪ বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে তা আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল।
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়, স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ। জনকণ্ঠ সব সময় দায়িত্বশীলতার পক্ষে অবস্থান করে পত্রিকা প্রকাশ করছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য দায়িত্বশীলতার কোনো বিকল্প নেই।
নতুন বর্ষে পদাপর্ণে দৈনিক জনকণ্ঠ পাঠকের প্রতি জানাচ্ছে কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা।
টিএস