
ছবি: সংগৃহীত
প্রতি বছর ১ মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, যেটি বাংলাদেশে পরিচিত ‘মে দিবস’ নামে। দিনটি শুধুমাত্র একটি ছুটি নয়, বরং এটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার, আত্মত্যাগ এবং ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের এক শক্তিশালী প্রতীক।
শিল্পবিপ্লব পরবর্তী সময়ে ১৮ ও ১৯ শতকে ইউরোপ ও আমেরিকায় কল-কারখানার ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটলেও শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। দিনে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ, ন্যূনতম মজুরি, নিরাপত্তাহীনতা এবং শিশুশ্রম—এই ছিল তৎকালীন শ্রমজীবী মানুষের বাস্তবতা। সেই সময় শ্রমিকদের জন্য ছিল না কোনো আইনি সুরক্ষা বা সংগঠিত ট্রেড ইউনিয়ন।
এই শোষণের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে শুরু করেন শ্রমিকরা। আন্দোলনের মূল দাবি ছিল, দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ, আট ঘণ্টা বিশ্রাম এবং আট ঘণ্টা ব্যক্তিগত জীবনের জন্য সময়। এই দাবির পক্ষে প্রথম জাতীয় শ্রম সম্মেলন হয় ১৮৬৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে, যদিও বাস্তবায়নে তখনও অনেক বাধা ছিল।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস তৈরি হয় ১৮৮৬ সালের ১ মে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে। হাজার হাজার শ্রমিক আট ঘণ্টার কাজের দাবিতে রাস্তায় নামেন। আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হলেও ৩ মে শিকাগোর একটি কারখানায় পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শ্রমিক নিহত হন। এর প্রতিবাদে পরদিন, ৪ মে, হে মার্কেট স্কয়ারে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের শেষ মুহূর্তে পুলিশের ওপর বোমা ছোড়া হলে গোলাগুলি শুরু হয়। এতে বহু শ্রমিক এবং পুলিশ নিহত হন, আহত হন শতাধিক।
এই ঘটনাকে ইতিহাসে ‘হে মার্কেট গণহত্যা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ঘটনার পর আটজন শ্রমিক নেতাকে দায়ী করে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের মধ্যে চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই রক্তাক্ত ঘটনার মাধ্যমে শ্রমিক আন্দোলন বিশ্বব্যাপী এক নতুন মাত্রা পায়। হে মার্কেট শহীদরা পরিণত হন শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের চিরস্মরণীয় প্রতীকে।
তিন বছর পর, ১৮৮৯ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক সংগঠন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১ মে-কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৮৯০ সাল থেকে ইউরোপ, আমেরিকা এবং পরে অন্যান্য দেশে দিবসটি পালিত হতে থাকে।
বাংলাদেশে মে দিবস পালনের শুরু হয় স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর দিনটি জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এখনো শ্রমিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়নগুলো এদিন র্যালি, সমাবেশ ও আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিক অধিকার, ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং কল্যাণমূলক নীতির দাবিতে সোচ্চার হয়।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=wRS3ZlL-cww
রাকিব