
ছবি: নালিতাবাড়ী উপজেলার আন্ধারুপাড়া গ্রামের কৃষক কিতাব আলী তার ক্ষেতের মরা ধানের শীষ দেখাচ্ছেন।
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও, নন্নী, নয়াবিল, বাঘবের, রামচন্দ্রকুড়া, নালিতাবাড়ী ও কাকরকান্দি ইউনিয়নের চলতি বোরো আবাদের বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠে ব্যাপক মাজরা পোকার আক্রমণের কারণে ধানক্ষেত থেকে মরা শীষ বের হচ্ছে। এতে চিটা হয়ে ধানের ফলন কম হওয়ার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবারের বোরো আবাদে নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২৩ হাজার ১৩৩ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ করেছেন কৃষক। আবাদাও মোটামুটি ভালো হয়েছে। তবে এই উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১২ টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৭টি ইউনিয়নের ফসলের মাঠে এই মাজরা পোকার আক্রমণ লক্ষ করা গেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর দিনের বেলায় গরম আর রাতের বেলায় শীত পড়েছে বেশি। এই আবহাওয়া কৃষির জন্য প্রতিকূল আর পোকামাকড়ের জন্য অনুকূল। তাই এবার বোরো ক্ষেতে মাজরা পোকার আক্রমণ হয়েছে বেশি। আক্রমণ বেশি হওয়ার কারণে কীটনাশক প্রয়োগ করেও কাজ হয়েছে কম। ফলে বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষি জমিতে মরা ধানের শীষ বের হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, নালিতাবাড়ীতে কিছু এলাকায় সরিষা আবাদ করার কারণে ধান রোপণে বিলম্ব হয়েছে। আর আবাদের শেষ দিকে বৃষ্টিসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া শুরু হয়েছে। তাই মাজরা পোকাসহ অন্যান্য পোকামাকড়ের আক্রমণও অনেক বেশি হয়েছে। কৃষকরা তাদের জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি। তাছাড়া কীটনাশকের কার্যকারিতা নিয়েও সন্দেহ জাগছে। কৃষি বিভাগ এ বছর নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে একই গ্রুপের কীটনাশক ১৬ টি কোম্পানির নমুনা ল্যাব টেস্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ল্যাব টেস্টে কোন কোম্পানির কীটনাশকে ভেজাল পাওয়া গেলে নালিতাবাড়ীসহ সারা দেশে ওই কোম্পানির কীটনাশক বাজারে সরবরাহে নিষিদ্ধ করা হবে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে উপজেলার বারোমারী আন্ধারুপাড়া এলাকার কৃষক কিতাব আলী, হাবিল উদ্দিন, বাদল মিয়া ও ফেরদৌস আলমসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, তারা তাদের বোরো ধানক্ষেতে প্রয়োজন মতো ডিএপি, এমওপি, ইউরিয়া, কীটনাশক, ভিটামিন ও ছত্রাকনাশক প্রয়োগের পরেও এখন মরা শীষ বের হচ্ছে। এতে ফলন কমের আশঙ্কা করছেন তারা। তারা আরো জানান, বিভিন্ন কোম্পানির মাজরা পোকার কীটনাশক একাধিক বার প্রয়োগ করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাননি। তাদের সন্দেহ হচ্ছে কীটনাশকের মধ্যে ভেজাল রয়েছে। তাই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ভেজাল কীটনাশক কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে কৃষক তাদের আবাদে ভালো ফলন পাবে না। এতে দেশও খাদ্য স্বয়ং সম্পন্ন হতে পারবে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের ধানক্ষেতে মরা শীষ বের হচ্ছে। এটি মূলত মাজরা পোকার আক্রমণের কারণে এমন হয়েছে। এতে ফলন কম হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। যদি মরা শীষ একরে শতকরা ৫ ভাগের বেশি বের হয় তাহলে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরো জানান, এ বছর নালিতাবাড়ী উপজেলা থেকে ১৬টি কোম্পানির একই গ্রুপের কীটনাশক ল্যাব টেস্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। যদি কোনো কোম্পানির কীটনাশকে ভেজালের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে ওই কীটনাশক নিষিদ্ধ করা হবে। একইসাথে ওই কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রবিউল হাসান