
ছবি: সংগৃহীত
পোষা বিড়ালের খাওয়ার সময় মালিকের পাশে বসে থাকার প্রবণতা অনেকের কাছেই অদ্ভুত মনে হতে পারে। কিন্তু পশু চিকিৎসকদের মতে, এটি একেবারেই স্বাভাবিক একটি আচরণ এবং এর রয়েছে মনোজগতিক একটি আদুরে ব্যাখ্যা—যাকে বলা হয় ‘আফেকশন ইটিং’।
অস্ট্রেলিয়ান খ্যাতনামা ভেটেরিনারিয়ান ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ড. ক্যাটরিনা ওয়্যারেন সম্প্রতি এই বিষয়ে আলোচনায় জানান, “অনেক বিড়াল আছে যারা তখনই খেতে চায় যখন তাদের মালিক তাদের পাশে থাকেন। এটি ‘আফেকশন ইটিং’ নামে পরিচিত, যা সাধারণত দেখা যায় মানসিক চাপে থাকা বিড়ালদের মধ্যে।”
ড. ওয়্যারেন আরও জানান, নতুন বাড়িতে ওঠা, পরিবারের নতুন সদস্য আসা বা পরিবেশগত যেকোনো পরিবর্তনের সময় এই আচরণ দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে যে-সব বিড়াল ছোটবেলায় মা-বিড়াল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষের হাতে বড় হয়েছে বা খুব তাড়াতাড়ি দুধ ছাড়ানো হয়েছে, তাদের মধ্যে এই আচরণ বেশি দেখা যায়।
তবে বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেন, যদি বিড়াল খাওয়ার সময় মালিক ছাড়া অন্য কারও উপস্থিতিতে খেতে না চায় বা হঠাৎ আচরণগত পরিবর্তন দেখা দেয়, তাহলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এর পেছনে থাকতে পারে শারীরিক বা মানসিক কোনো সমস্যা।
চাপ কমাতে মালিককে কিছু বাড়তি ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন ড. ওয়্যারেন। যেমন—একটি নিরিবিলি ঘরে বিড়ালের জন্য আলাদা জায়গা তৈরি করা, যেখানে থাকবে ক্লাইমিং ট্রি, স্ক্র্যাচিং পোস্ট এবং লিটার বক্স—যা বিড়ালের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে কাজ করবে।
Cats.com ওয়েবসাইট জানায়, এই আচরণের পেছনে রয়েছে বিড়ালের পূর্বপুরুষদের অভ্যাস। বন্য অবস্থায় বিড়াল একা শিকার করলেও দলবদ্ধভাবে খেতো, যাতে খাওয়ার সময় শিকারি আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সেই প্রবৃত্তি আজও রয়ে গেছে গৃহপালিত বিড়ালের মধ্যে। Cats.com আরও জানায়, মালিকের উপস্থিতিতে খেতে চাওয়া বিড়ালদের মধ্যে সামাজিকতা, নিরাপত্তাবোধ এবং সম্পর্কের সংহত অনুভব কাজ করে। অনেক সময় বিড়াল মনে করে, মালিক তার সঙ্গে থাকলে সে খাবার সময়ও পরিবারের মূল অংশ হয়ে ওঠে।
ড. ওয়্যারেনের টিকটক ভিডিও ইতোমধ্যেই প্রায় ৭.৬ লাখবার দেখা হয়েছে, যেখানে অনেকেই নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। একজন মন্তব্য করেন, “আমার বিড়াল সবসময় চায় কেউ পাশে বসে থাকুক, না হলে সে খায় না।” আরেকজন বলেন, “আমার পথ থেকে তোলা বিড়ালটিও একা খেতে চায় না।” আরও একজন লেখেন, “আজ অবধি এই আচরণের কোনো নাম জানতাম না, এখন বুঝতে পারছি এটা কতটা সাধারণ।”
তাই বলা যায় বিড়ালদের ‘আফেকশন ইটিং’ শুধু একটুখানি আদরের অভ্যাস নয়, বরং এটি তাদের আবেগি এবং গভীর সম্পর্কের একটি প্রকাশ।
সূত্র: https://shorturl.at/ENMM
মিরাজ খান