
ছবিঃ সংগৃহীত
আধুনিক সময়ে সমাজে একাকীত্ব ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এই নিঃসঙ্গতার অন্যতম প্রধান শিকার হয়ে উঠছেন বয়স্করা। জীবনের অনেকটা পথ অতিক্রম করে এক সময় তারা হয়ে পড়ছেন নিঃসঙ্গ। অনেকের সন্তানরা থাকেন বিদেশে বা দেশের অন্য কোনও শহরে কর্মসূত্রে অবস্থান করেন দূরে। ফলে পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের দিন কাটে নিঃসঙ্গতায়।
আগে এই সময়টুকু কাটানোর জন্য তারা বই পড়ে সময় কাটাতেন। কিন্তু বর্তমানে বইয়ের জায়গা দখল করে নিয়েছে স্মার্টফোন। মোবাইলেই তারা খুঁজে নিচ্ছেন বিনোদন ও সঙ্গ। বিভিন্ন ধরনের ভিডিও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কিংবা অনলাইন সংবাদ—সবকিছুই এখন হাতের মুঠোয়।
তবে প্রবীণদের এই মোবাইল নির্ভরতা এখন অনেক পরিবারের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়স্কদের স্ক্রিন টাইম বেড়ে গেছে। চলতি বছরে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৬ ঘণ্টা ৪০ মিনিট মোবাইল ফোনে সময় কাটায়। ২০১৩ সালের তুলনায় এটি প্রায় ৩০ মিনিট বৃদ্ধি পেয়েছে।
কেন এই মোবাইল নির্ভরতা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বয়স্কদের মোবাইল আসক্তির পেছনে মূল কারণ হচ্ছে একাকীত্ব। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, স্ক্রিন টাইম বাড়ার ফলে প্রবীণদের মধ্যে অনিদ্রার সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। অনেকে ঘুমের সমস্যার কথা বলে চিকিৎসকের কাছে আসছেন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যবহার বৃদ্ধিই দাম্পত্য জীবনে কলহের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এক সময় বয়স্করা হাঁটাহাঁটি করতেন, বন্ধুদের সঙ্গে সন্ধ্যায় দাবা বা তাস খেলতেন। এই পারস্পরিক যোগাযোগ তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতো। কিন্তু এখন সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে টিভি এবং মোবাইল।
কি কি সমস্যা হতে পারে?
চিকিৎসকরা সতর্ক করছেন, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে প্রবীণদের চোখে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রেটিনার কোষ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে চোখের জল শুকিয়ে যায় এবং জ্বালাভাব দেখা দেয়। আবার অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরতে শুরু করে।
রাতের বেলায় মোবাইলের উজ্জ্বল পর্দায় তাকিয়ে থাকার ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে অনিদ্রায় রূপ নিতে পারে। বয়সের সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও কমতে থাকে, আর অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার তা আরও দুর্বল করে দিতে পারে।
মোবাইল ব্যবহারকারী অনেকেই মাল্টিটাস্কিংয়ে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। একাধিক ট্যাব, পপআপ, এবং নোটিফিকেশনের কারণে একাগ্রতা বিঘ্নিত হচ্ছে। মোবাইলের ছোট পর্দা, উজ্জ্বল আলো এবং ক্ষুদ্র হরফ চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। তুলনামূলকভাবে টিভি কিংবা ল্যাপটপে এই ঝুঁকি কিছুটা কম, যদিও সেগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহারও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
উপসংহার
প্রযুক্তির সুফল যেমন রয়েছে, তেমনি এর অপব্যবহারও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বয়স্কদের মোবাইল আসক্তি নিছক বিনোদন বা সময় কাটানোর মাধ্যম নয়, এটি ধীরে ধীরে একাকীত্বের ডিজিটাল ফাঁদে পরিণত হচ্ছে। তাই প্রযুক্তির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে পারিবারিক সংযোগ ও সামাজিক মেলামেশা বাড়ানোই হতে পারে এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায়।
ইমরান