
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনকে বহুদিন ধরেই বলা হয় ‘নীরব ঘাতক’। কারণ এটি শরীরের ভেতরে ধীরে ধীরে ভয়ংকর ক্ষতি করে, কিন্তু তার খুব একটা লক্ষণ প্রকাশ পায় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু হৃদযন্ত্রই নয়, হাইপারটেনশন মারাত্মকভাবে ক্ষতি করে মস্তিষ্ককেও।
মস্তিষ্কে উচ্চ রক্তচাপের প্রভাব
ফর্টিস হাসপাতাল, ফরিদাবাদের নিউরোলজি বিভাগের পরিচালক ডা. বিনীত বাঙ্গা বলেন, “হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের সম্পর্ক নিয়ে আমরা অনেক সচেতন হলেও, মস্তিষ্কে এর প্রভাব অনেক সময়ই উপেক্ষিত থেকে যায়। অযত্নে থাকা উচ্চ রক্তচাপ একসময় স্ট্রোক, ভাসকুলার ডিমেনশিয়া এমনকি অ্যালঝেইমারের মতো রোগের ঝুঁকি তৈরি করে।”
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বজায় রাখতে নিয়মিত রক্ত সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ দীর্ঘমেয়াদে রক্তনালিগুলোর ক্ষতি করে, ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি হয়।
যেসব বিপদ ডেকে আনতে পারে উচ্চ রক্তচাপ:
১. স্ট্রোক ও ক্ষুদ্র স্ট্রোক (TIA):
নিয়ন্ত্রণহীন উচ্চ রক্তচাপ রক্তনালিগুলো দুর্বল করে তোলে, ফলে তা ব্লক হয়ে যেতে পারে বা ফেটে যেতে পারে। এতে নির্দিষ্ট অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে ঘটে স্ট্রোক। এমনকি ছোট ছোট ‘অজানা’ স্ট্রোকও মস্তিষ্কের কোষে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে, যাকে বলে ট্রানজিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাক বা TIA।
২. ভাসকুলার ডিমেনশিয়া:
চলমান উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্তনালিগুলো সঙ্কুচিত ও শক্ত হয়ে যায়, যার ফলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এই অবস্থাই ডেকে আনে ভাসকুলার ডিমেনশিয়া, যা অ্যালঝেইমারের পরে ডিমেনশিয়ার দ্বিতীয় প্রধান কারণ। এতে বিভ্রান্তি ও যুক্তির অপচয় দেখা দেয়।
৩. অ্যালঝেইমারের ঝুঁকি বৃদ্ধি:
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে অ্যালঝেইমার রোগের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি হাইপারটেনশন মস্তিষ্কে অ্যামিলয়েড প্লাক জমার গতি বাড়িয়ে দেয়, যা স্মৃতিভ্রংশের অন্যতম প্রধান কারণ।
৪. হোয়াইট ম্যাটার ক্ষতি:
উচ্চ রক্তচাপের ফলে মস্তিষ্কের ‘হোয়াইট ম্যাটার’,যা বিভিন্ন অংশের মধ্যে বার্তা আদানপ্রদানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ পরিবর্তন ঘটে। এর ফল হতে পারে স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা, হতাশা এবং চলাফেরার সমস্যা।
প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণই বাঁচার উপায়
নিউরোমেট ওয়েলনেস কেয়ার সেন্টারের নিউরোলজিস্ট ডা. ভূপেশ কুমার বলেন, “উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে তা শুধু হৃদপিণ্ড নয়, মস্তিষ্কের জন্যও বড় হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিদিনের জীবনে কিছু পরিবর্তন এনেই এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “সুস্থ জীবনযাপন, সুষম খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক পরিশ্রম, ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। প্রয়োজনে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (DHA, EPA) জাতীয় সাপ্লিমেন্টও গ্রহণ করা যেতে পারে।”
উচ্চ রক্তচাপের মতো একটি নিরব কিন্তু ভয়ঙ্কর শত্রু যদি সময়মতো নিয়ন্ত্রণে না আনা হয়, তাহলে তার ভয়াবহ প্রভাব পড়তে পারে মস্তিষ্কেও। তাই হৃদযন্ত্রের পাশাপাশি মস্তিষ্ক রক্ষায়ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা আজ অত্যন্ত জরুরি।
সূত্র:https://tinyurl.com/ycxu9b48
আফরোজা