ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নেতাকর্মীরা মিছিল করে আসছেন, পথে পথে বাধা দেওয়ার অভিযোগ

রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশ আজ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ২৩:৪৬, ২ ডিসেম্বর ২০২২

রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশ আজ

রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশ উপলক্ষে আসা নেতাকর্মীরা মাদ্রাসা মাঠে ঢুকতে না পারায় পার্শ্ববর্তী রাস্তা লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে

উত্তরাঞ্চলজুড়ে পরিবহন ধর্মঘটকে উপেক্ষা করেই আজ শনিবারের গণসমাবেশে যোগ দিতে রাজশাহীতে আসতে শুরু করেছেন বিএনপির বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা। বিকল্প যানবাহন হিসেবে ভটভটি, নছিমন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, থ্রি-হুইলার, মোটরসাইকেলসহ যে যা পাচ্ছেন তাতে করেই সমাবেশস্থল রাজশাহীর মাদ্রাসামাঠের দিকে  আসছেন তারা। এ দিকে অনেক স্থানেই যানবাহন থেকে পুলিশ নেতাকর্মীদের নামিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা।
দুদিন আগে থেকে উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা এসে অবস্থান নিয়েছেন মাদ্রাসামাঠের পাশের কেন্দ্রীয় শাহমখদুম ঈদগাহ মাঠে। সেখানে তাঁবু গেড়ে রাত যাপনও করেছেন অনেকে। শুক্রবার সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা আসছেন খন্ড খন্ডভাবে। সকালে নওগাঁ সদর থেকে সমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন মো. আবুজার (৬৬) নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সকাল ৭টায় নওগাঁ থেকে আমরা ১২ জন সমাবেশে যোগ দিতে একসঙ্গে রওনা দেই রিকশায় করে। বান্দাঘরা এলাকায় এসে রিকশা থেকে নেমে সিএনজিতে উঠি। এরপর বাগমারায় এসে নামি। সেখান থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় মোহনগঞ্জ আসার পর আবারও সিএনজিতে উঠি। এরপর সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেছি।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘তিনি বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় মোটরসাইকেল নিয়ে রাজশাহী পৌঁছেছেন। ১১৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে রাজশাহীতে পৌঁছেছি রাত ৯টার দিকে। পুলিশ পথে পথে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে।
নওগাঁর পত্মীতলা উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন একটি দল নিয়ে এসেছেন গরু বহনকারী নছিমনে চেপে। মতিন বলেন, ‘তিন জায়গায় পুলিশ বাধা দিয়েছে। আমরা বাধা মানিনি। চলে এসেছি।’
নাটোরের সিংড়া উপজেলার বেলোয়া গ্রামের বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, ‘থ্রি-হুইলারে আসার সময় পুলিশ রাজশাহীর প্রবেশমুখ কাঁটাখালী এলাকায় নামিয়ে দিয়েছে। সেখান থেকে আমরা ১৬ জন প্রায় ১০ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছেছি। এতে অনেক কষ্ট হয়েছে। কারণ, আমাদের সঙ্গে ব্যাগপত্র, চাল, ডাল ও অন্য জিনিসপত্র ছিল।
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের খ- খ- মিছিল করতে দেখা গেছে। বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা থেমে থেমে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে মিছিল করছেন। মিছিল শেষে আবার ঈদগাহ মাঠে ঢুকে পড়ছেন। মিছিলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে স্লোগান দেন নেতাকর্মীরা।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে আসা বিএনপি নেতা শরিফ উদ্দিন বলেন, আমরা বিভিন্ন বাধার পরও রাজশাহীতে গণসমাবেশে এসেছি। এখানে বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা মিছিল করছেন। আমাদের দাবি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। একই সড়কে বিএনপির নারী নেতাকর্মীদেরও মিছিল করতে দেখা গেছে। বিএনপির নারী নেত্রীরাও বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে এসেছেন। তারাও বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করছেন। সকিনা নামে বিএনপির এক নারীকর্মী জানান, এখানে তাদের অনেক নারীকর্মী এসেছেন। তারা পুরুষকর্মীদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নিচ্ছেন। শনিবার গণসমাবেশ সফল করতে তারা দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন।
অন্যদিকে দুপুরের পর থেকে নগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে বিএনপির গণসমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে একটি অটোরিশায় মাইকিং করতে দেখা গেছে। এতে বিএনপির গণসমাবেশে নেতাকর্মীদের যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর মাদ্রাসামাঠে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে বাঁশ-কাঠ দিয়ে মঞ্চ নির্মাণ চলছে। মাঠে পুলিশের অবস্থান রয়েছে। অনুমতি না থাকার মাঠের বাইরের চারদিকে ও পাশের ঈদগাহ মাঠে তাঁবু টাঙিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছে। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী সেখানেই রাত যাপন করেছেন।
রাজশাহী বিএনপি নেতারা জানান, আজকের (শনিবার) রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশ হবে ঐতিহাসিক। এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন। এতে বিএনপির কেন্দ্রীয়, স্থানীয় ও আশপাশের জেলার নেতারা বক্তব্য রাখবেন। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুুর  রহমান মিনুু বলেন, শত বাধা সত্ত্বেও রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল হবে। মিজানুর রহমান মিনু বলেন, সরকারের পেটোয়া বাহিনীর সদস্যরা গণসমাবেশ বানচাল করতে নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। রাজশাহীর প্রবেশপথে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। যানবাহন থেকে নামিয়ে দিয়ে নেতাকর্মীদের নিদারুণ কষ্ট দিচ্ছে। নেতাকর্মীরা সব বাধা উপেক্ষা করে রাজশাহী শহরের প্রবেশ করছেন।  
তিনি বলেন, গণসমাবেশের জন্য মাদ্রাসামাঠে ডেকোরেশেনের কাজ শুরু করলে তাঁবু ও ডেকোরেশনের উপকরণও ভেঙে ফেলা হয়। নেতাকর্মীদের মারপিট করে মাদ্রাসামাঠ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, যতই বাধা দিক, কানায় কানায় মানুষে ভরে যাবে পুরো শহর।
মিজানুর রহমান মিনু বলেন, এরই মধ্যে মাদ্রাসামাঠ এলাকা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীতে ভরে গেছে। রাতের মধ্যেই মঞ্চ ও মাঠের ডেকোরেশন কাজ শেষ হবে। নেতাকর্মীরা ঠিক সময়ের মধ্যে মাদ্রাসামাঠে প্রবেশ করবেন। নেতারাও সময়ের মধ্যে রাজশাহী এসে পৌঁছাবেন।  
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ রাজশাহী শহরের সবগুলো প্রবেশপথেই চেকপোস্ট বসিয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের সমাবেশে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ সঠিক নয়। কিন্তু অবৈধ যানবাহন, যেগুলো শহরে ঢোকা নিষেধ, সেগুলো আটকে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান।
এদিকে বিএনপির সমাবেশের আগে বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহী বিভাগে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ধর্মঘট যে হবে তা আগেই জানতেন নেতাকর্মীরা। তাই দূরের নেতাকর্মীদের অনেকে ধর্মঘট শুরুর আগেই চলে এসেছেন। বৃহস্পতিবার বাস বন্ধ থাকলেও ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহনে এসেছেন অনেকে। সবাই আশ্রয় নিয়েছেন ঈদগাহ মাঠে।
বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি থানায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারপরও রাজশাহীর দিকে ছুটছেন নেতাকর্মীরা। কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ তাদের পথে পথে বাধা দিচ্ছে। তিনি দাবি করেন, মানুষ পায়ে হেঁটে, সাইকেল, ভ্যান, টেম্পো, রিকশায় চড়ে হলেও এই সমাবেশে আসছে।
তবে বিএনপির এই সমাবেশকে ‘পিকনিক’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর বিএনপি মাঠে বেরিয়েছে। একটু আগে ওদের সমাবেশের ওইদিক দিয়ে এলাম। দেখলাম, রান্নাবান্না চলছে। একটা পিকনিক পিকনিক ভাব। সেটা করুক। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে অসুবিধা নেই। কিন্তু জনমালের ক্ষতি, জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মতো সংকট তৈরি করলে তাৎক্ষণিক জবাব দেওয়া হবে।



 

×