
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন
শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি জন্মাষ্টমী উদ্যাপনে চট্টগ্রামে গ্রহণ করা হয়েছে বর্ণাঢ্য কর্মসূচী। বৃহস্পতিবার বিকেলে উদ্বোধনী পর্বের অনুষ্ঠানে পরিষদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নগরীর জেএম সেন হলে জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদের ধর্মমহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। তবে মূল উৎসব হবে আজ শুক্রবার। কর্মসূচীতে রয়েছে বিশাল শোভাযাত্রা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, শেখ হাসিনার সরকার থাকলে দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে, সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকমুক্ত হবে। ভারতে গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আমি বলেছি, আমাদের দেশে কিছু দুষ্ট ও উগ্রবাদী লোক আছে। আমরা যদি একটু বলি, আমাদের দেশের উগ্রবাদীরা আরও অনেক বেশি সোচ্চার হয়। তাতে দেশের ক্ষতি হয়। এতে আইনশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বিঘিœত হয়। সে জন্য আমি ভারতবর্ষকে বলেছি, আমরা এমনভাবে কাজ করব, যাতে উস্কানিমূলক ব্যবহার প্রশ্রয় না পায়। তাতে ভারত-বাংলাদেশের উভয়ের মঙ্গল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা আছেন বলে ভারতেরও যথেষ্ট মঙ্গল হয়েছে। সীমান্তে অতিরিক্ত খরচ করতে হয় না। আমাদের উন্নতি হচ্ছে বলে ভারতে লোক যায়। বছরে ২৮ লাখ লোক ভারতে বেড়াতে গেছে। কয়েক লাখ ভারতীয় আমাদের দেশে কাজ করেন। এটি সম্ভব হয়েছে আমাদের সোনালী অধ্যায়ের কারণে, সুন্দর অবস্থানের কারণে।
তিনি আরও বলেন, কুমিল্লায় দুর্গাপূজায় কোরান শরীফ নিয়ে যে ঘটনা কিছু উগ্রবাদী মুসলিম করেছে, তা ভাইরাল হয়। কিছু উগ্রবাদী আক্রমণ করে। আক্রমণ থামাতে গিয়ে পুলিশ গুলি করে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, তখনও আমরা কুড়িগ্রামের কাহিনী জানি না। তখন আমার মন্ত্রণালয় যে কথা বলেছে, সত্য কথা বলেছে। তখন ৬ জন লোক মারা যায়। এর মধ্যে স¦রাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল ৪ জন মুসলমান ২ জন হিন্দু। একটা লোকও মারা যাক, তা আমরা চাই না। কিন্তু বিভিন্ন মাধ্যমে বের হয়, কয়েক শ’ নারী নির্যাতিত হয়েছে। কুমিল্লায় নারী ধর্ষণ হয়েছে কেউ কি বলতে পারবেন? কুমিল্লার ঘটনার পর উত্তরবঙ্গে ১৭-১৮ বাড়ি জমি দখলের জন্য ভেঙ্গে ফেলে। পরে সরকার মেরামত করে দিয়েছে। আমরা এমন কোন কাজ করব না, যাতে ছোট্ট জিনিস ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার এবং উচ্ছৃঙ্খলতার সৃষ্টি হয়।
এর আগে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠ এসবে আমি বিশ^াস করি না। আমি বিশ^াস করি, এ দেশ আমাদের সকলের। আমরা সবাই বাঙালী। এ দেশে সব সম্প্রদায়ের লোক যুগ যুগ ধরে একসঙ্গে বাস করে আসছে। সম্প্রীতি বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আমরা বসবাস করছি। কেউ আমাদের শত শত বছরের বন্ধনকে নষ্ট করতে পারবে না। সম্মিলিতভাবে আমরা অপশক্তিকে নির্মূল করতে পারব। শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব হয়েছিল দুষ্টের দমন করতে। অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে আঘাত ও প্রতিরোধ করার জন্য তার আবির্ভাব হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, শ্রীকৃষ্ণের আদর্শ উপদেশ ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমরা যদি সকলেই চলি তাহলে মঙ্গলময় সত্য সুন্দরের পথে চলতে পারব। সত্য আলোয় অন্ধকার দূরীভূত হবে।
সনাতনী সমাজের কালো পতাকা ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আগমনে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষুব্ধ সনাতনী সমাজের ব্যানারে কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ হয় চেরাগী পাহাড় মোড়ে। সেখানে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, জন্মাষ্টমী উদ্যাপন পরিষদের অনুষ্ঠানের সঙ্গে আমরাও অংশীদার। আমরা চাই এ আয়োজন সর্বাত্মকভাবে সফল ও সার্থক হোক। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বারংবার দেশের বাইরে এই মর্মে প্রচার করেছেন, বাংলাদেশে কোন সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও সহিংসতা হয় নাই। তিনি এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সাম্প্রদায়িক নির্যাতন নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। অতীতেও এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়েছিলাম। গত বুধবার রাতে হঠাৎ করে জানতে পারলাম, এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানমঞ্চে তিনি উপস্থিত থাকবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই চট্টগ্রাম আগমনকে আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না এবং এই আগমনের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ তা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তার বক্তব্যের জন্য প্রতিবাদ।
এই প্রতিবাদ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থের প্রশ্নে যে দীর্ঘদিনের লড়াই- সংগ্রামেরই অংশ বলে আমরা মনে করি। আজ যে প্রতিবাদ মিছিল কালো পতাকা হাতে শুরু হবে আমার মনে হয়েছে এটা সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আজকের কর্মসূচী থেকে আহ্বান কোন ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায় এ ধরনের ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানাবেন না। আমন্ত্রণ জানালে প্রতিবাদ করা হবে।
শারদীয় দুর্গাপূজার পর যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতির এক নাজুক সময়ে সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, নির্বাচনের সময় সংখ্যালঘুদের ঘরে ঘরে গিয়ে মা, মাসি, মামা ডাকো। নির্বাচনের পরে তাদের আপদে বিপদে পাশে দেখা যায় না। এই কথাগুলো বলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা সে সময়ে লক্ষ্য করলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন বিদেশে গেলেন। তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, এদেশে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের বিষয়ে। তিনি বললেন, এগুলো সব মিথ্যা। এগুলো সব মিথ্যা প্রচারণা।