ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অস্বাভাবিক নিম্নমুখী ভূগর্ভের পানির স্তর

বরেন্দ্র অঞ্চলে থামানো যাচ্ছে না গভীর নলকূপ স্থাপন

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ২ জুলাই ২০২২

বরেন্দ্র অঞ্চলে থামানো যাচ্ছে না গভীর নলকূপ স্থাপন

রাজশাহী : বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবস্থাপনায় খনন করা খাল

ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিম্নমুখী ও পানি সঙ্কট দেখা দেয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলে কয়েক বছর থেকেই গভীর নলকূপ বসানো বন্ধ রেখেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)এর বিকল্প হিসেবে খাল খনন করা হচ্ছেতবে বরেন্দ্রজুড়ে থামানো যাচ্ছে না ব্যক্তি উদ্যোগে পাম্প বসিয়ে পানি তোলার মচ্ছব

সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, পরিবেশগত ঝুঁকি টের পেয়ে ২০১৪ সাল থেকে গভীর নলকূপ বসানো বন্ধ রেখেছে বিএমডিএএ অবস্থায় সেচ সঙ্কটের পেছনে ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যাপক হারে গভীর নলকূপ স্থাপন করে পানি উত্তোলনকে দুষছেন তারা

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার অধিকাংশ এলাকা এবং নাটোরসহ বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার কিছু এলাকা নিয়ে গঠিত বরেন্দ্র অঞ্চলবিরূপ আবহাওয়ার কারণে কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষি আবাদের সুবিধার জন্য ১৯৮৫ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমীক্ষার পর রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় গভীর নলকূপ বসানো শুরু হয়প্রকল্পটির লক্ষ্য ছিল পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলের ২ লাখ ২৫ হাজার একর জমি সেচের আওতায় আনা

১৯৮২ সালে ইউএনডিপি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বরেন্দ্র জোনকে জিরো এক্যুইফার হিসেবে দেখানো হয়তাতে উল্লেখ করা হয়, এ এলাকার ভূগর্ভস্থ স্তরে শুধু গৃহস্থালির প্রয়োজন মেটানোর মতো পানি রয়েছেএর পর ১৯৮৫ সালে বিষয়টি নিয়ে সমীক্ষা চালায় পানি উন্নয়ন বোর্ডসংস্থাটি কারিগরি প্রতিবেদনে জানায়, শুধু হস্তচালিত গভীর নলকূপে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভ থেকে পানি তোলা সম্ভবওই বছরই বরেন্দ্র সমন্বিত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সোয়া দুই লাখ একর জমি সেচের আওতায় আনার লক্ষ্যে রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় গভীর নলকূপ বসানো শুরু হয়এর মাধ্যমে ফসলের নিবিড়তা ১১৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৭৬ শতাংশে উন্নীত হয়এক পর্যায়ে এ প্রকল্প বিএমডিএ নামে স্থায়ী রূপ পায়বর্তমানে ১৫ হাজার ৫৫৩টি গভীর নলকূপে পানি তুলছে বিএমডিএবাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএমডিসি) ক্ষুদ্র সেচ সমীক্ষা প্রতিবেদন (২০১৯-২০) অনুযায়ী, রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মোট সেচ পাম্প রয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৮৫৮টিএর মধ্যে বিএমডিএর ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয় মাত্র ৮ হাজার ৫২৫টিবাকি ৯৬ হাজার ৩৩৩টি পাম্প চলছে ব্যক্তি মালিকানায়এ তিন জেলার ৫ লাখ ৭ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছেএর মধ্যে বিএমডিএ সেচ দিচ্ছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৬১ হেক্টর জমিতেবাকি ২ লাখ ১১ হাজার ৩৮৬ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে ব্যক্তিগত সাবমার্সিবল পাম্প (এসটিডব্লিউ) থেকেপ্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ৫৩ হাজার ৯২৩টি ব্যক্তি মালিকানার পাম্প রয়েছে নওগাঁয়এ জেলার সেচের ৫১ শতাংশ তাদের দখলেবাকি ৪৯ শতাংশ জমি সেচ পাচ্ছে বিএমডিএর সেচ পাম্প থেকেচাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহীতেও একই চিত্ররাজশাহীতে ২ হাজার ৮৫২টি বিএমডিএর পাম্প চললেও এসটিডব্লিউর চলছে ২৭ হাজার ১০৫টিচাঁপাইনবাবগঞ্জের ১  হাজার ৫৮৩টি বিএমডিএর পাম্পের পাশাপাশি ১৫ হাজার ৩১৫টি এসটিডব্লিউর চলছেবিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনভাবেই ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে এককভাবে বিএমডিএকে দায়ী করা যায় নাযদিও তারাই এর শুরুটা করেছেপরিবেশগত ঝুঁকির কারণে ২০১৪ সাল থেকে গভীর নলকূপ বসানো বন্ধ রেখেছে বিএমডিএকিন্তু বন্ধ নেই ব্যক্তিমালিকানায় পাম্প বসানোনিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই পাম্প চলছেবিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, এখন ভূ-উপরিস্থ সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছিপদ্মা, মহানন্দা, আত্রাই নদীর পানি তুলে সেচের কাজে লাগানো হচ্ছেবৃষ্টির পানি আহরণে বড় বড় পুকুর-দীঘি এবং খাল পুনর্খনন হচ্ছেএখন সেচের প্রায় ১০ শতাংশ পানি আসছে ভূ-উপরিস্থ উস থেকেআমরা চেষ্টা করছি ধীরে ধীরে ভূ-উপরিস্থ সেচের পরিধি বাড়ানোরআগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সেচ ৩০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে

×