ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১

রামপুরা-আমুলিয়া ডেমরা চার লেনের মহাসড়ক

৬ বছরেও নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ২ জানুয়ারি ২০২২

৬ বছরেও নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি

রহিম শেখ ॥ নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ বিকল্প সংযোগ সড়কটি। যাত্রাবাড়ী কাঁচপুর রোডের চাপ কমাতে ২০১৫ সালে গ্রহণ করা হয়েছিল প্রকল্পটি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সড়কটি শুরু হবে রামপুরা সেতুর কাছ থেকে। আমুলিয়া হয়ে এর এক মাথা যাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোড মোড়ে। আরেক মাথা গিয়ে মিলবে নারায়ণগঞ্জের তারাবো ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। সড়কটির দৈর্ঘ্য হবে ১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার উড়ালপথ। বাকি চার কিলোমিটার মাটিতে হবে। এর দুই পাশে স্থানীয়দের যাতায়াতের জন্য থাকবে দুটি সার্ভিস সড়ক। দুটি সার্ভিস রোডসহ রাস্তাটি হবে চার লেনের। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সড়কটি চালু করার সিদ্ধান্ত থাকলেও নানা জটিলতা দেখা দেয়। তবে গত নবেম্বরে প্রকল্প বাস্তবায়নে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) উদ্যোগে বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা কনসোর্টিয়াম নিয়োগের জন্য অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিইএ) নীতিগতভাবে প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে। ২৫ বছর পর্যন্ত প্রকল্পটি রক্ষণাবেক্ষণ করবে চীনা কনসোর্টিয়াম। জানা যায়, রাজধানী ঢাকা থেকে পূর্ব দিকে বের হওয়ার খুব বেশি ব্যবস্থা নেই। যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার নির্মিত হলে এই রাস্তায় চলাচলে কিছুটা সুবিধা হয়। পরিবহনের অত্যধিক চাপে ফ্লাইওভারের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। সিদ্ধিরগঞ্জ সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ক্রটিপূর্ণ ক্রসিংয়ের কারণে আট লেনের রাস্তায়ও যানজট নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিকল্প রাস্তা হিসেবে কুড়িল থেকে রূপগঞ্জ ঢাকা বাইপাস সড়ক পর্যন্ত রাস্তাটি কিছুদিন ব্যবহৃত হয়েছে। বর্তমানে এই রাস্তাটিতেও সংস্কার কাজ চলছে। আরও একটি রাস্তা রয়েছে রামপুরা থেকে আমুলিয়া-স্টাফ কোয়ার্টার হয়ে ডেমরা পর্যন্ত। রাস্তাটি দুই লেনের হওয়ায় যানবাহনের চাপে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে। এই বাস্তবতায় ২০১৫ সালে রাস্তাটিকে দুই পাশে সার্ভিস রোডসহ চার লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সড়কটি চালু করার কথা রয়েছে। এ প্রকল্পের বিনিয়োগকারী ঠিকাদার নির্বাচন করতে ২০১৮ সালের নবেম্বর মাসে দরপত্র আহ্বান করে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। ২০১৯ সালের পহেলা জুলাই চীনের চারটি প্রতিষ্ঠান আর্থিক ও কারিগরি প্রস্তাব জমা দেয়। মূল্যায়নে একটি প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ে। তিনটি প্রতিষ্ঠান যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। দরপত্র মুল্যায়ন কমিটি একটি প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলে আপত্তি জানায় অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো। শুরু হয় ঠিকাদার নিয়োগে জটিলতা। এরপর একটি প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সওজকে ৪৫ দিন সময় বেঁধে দেয়। এরপর প্রস্তাব ক্রটিপূর্ণ উল্লেখ করে কয়েক দফায় এটি ফেরত পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিইএ)। গত ১০ নবেম্বর চার লেনের রামপুরা-আমুলিয়া-ডেমরা মহাসড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) উদ্যোগে বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনা কনসোর্টিয়াম নিয়োগের জন্য অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিইএ) নীতিগতভাবে প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সিসিইএ-এর ৩২তম বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে অর্থমন্ত্রী জানান, শহরের যানজট নিরসন ও পরিবহন ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার হাতিরঝিল-রামপুরা সেতু-বনশ্রী- শেখেরজায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে পিপিপি’র ভিত্তিতে চার লেন প্রকল্পের উন্নীতকরণ কনসোর্টিয়াম অব চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিঃ (সিসিসিসিএল) ও চায়না রোড এ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশন (সিআরবিসি) বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় প্রায় ২ হাজার ৯৩ টাকা কোটি টাকা, যা সম্পূর্ণ চীনা কনসোর্টিয়াম বিনিয়োগ করবে। এছাড়া এই কনসোর্টিয়াম মহাসড়কটি ২৫ বছর ধরে রক্ষণাবেক্ষণ করবে বলেও মন্ত্রী জানান। জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জনকণ্ঠকে জানান, নির্দিষ্ট কোন কারণ না থাকলে অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটি থেকে প্রস্তাব ফেরত যায় না। যাই হোক অবশেষে অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিইএ) নীতিগতভাবে প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে। তিনি বলেন, সাড়ে ৯ কিলোমিটার ফ্লাইওভারসহ সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কটি চালু হলে রাজধানী থেকে পূর্ব দিকে বের হওয়ার পথ অনেকটাই সুগম হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুস সবুর জানান, ভিত্তিপ্রস্তরের কাজ শেষ করতে কোন অবহেলার কারণে এই প্রকল্পের বিলম্ব হয়নি। তিনি আরও জানান, বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে এ ধরনের বিলম্ব খুবই সাধারণ বিষয়। পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোঃ শামসুল হক বলেন, আরএডি এক্সপ্রেসওয়ে একটি পিপিপি প্রকল্প যাতে বিদেশী বিনিয়োগ জড়িত এবং প্রকল্পের বিলম্বের ফলে বিনিয়োগকারীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
×