বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে মঞ্চের খুনীদের পেছনে যারা নেপথ্যে নায়ক, তাদের খুঁজে বের করা দরকার উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এ সকল নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাদের স্বরূপ উন্মোচন করতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য। আর বাংলাদেশ থেকে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করার জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা আবশ্যক হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের মুখপাত্র ‘উত্তরণ’ আয়োজিত ‘শোকাবহ আগস্ট-ইতিহাসের কালো অধ্যায়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, এ দেশে যারা রক্তাক্ত আগস্ট ঘটিয়েছিল এবং এর বেনিফিসিয়ারি ছিল, প্রকৃতির আদালতেই তাদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে।
উত্তরণের সম্পাদক ড. নূহ-উল-আলম লেনিনের সভাপতিত্বে ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেনের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।
ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড শুধু বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ওপর নয়, এই হত্যাকাণ্ড বহুকষ্টে অর্জিত মুক্তিযুদ্ধের ওপর নৃশংসতম হামলা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধেই পরিচালিত হয়েছিল ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশকে নেতৃত্ব শূন্য করতে ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় ৩ নবেম্বর কারা অভ্যন্তরে জাতীয় চার নেতা ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। এ সকল ষড়যন্ত্র অভিন্ন ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা।
আগস্ট হত্যাকাণ্ডের কুশীলবরা এখনও সক্রিয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, মঞ্চের খুনীরা বিচারের মুখোমুখি হয়েছে, ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে। কিন্তু এখনও কয়েকজন বিদেশে পলাতক। তাদের ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আর মঞ্চের খুনীদের পেছনে যারা নেপথ্যে নায়ক, তাদেরও আজ খুঁজে বের করা দরকার আগামী প্রজন্মের জন্য। তিনি বলেন, গণতন্ত্র, মূল্যবোধ ও আদর্শকে একে একে আক্রমণ করা হচ্ছে। তাই ষড়যন্ত্রের রাজনীতিকে চিরতরে নির্মূল করতে হবে।
পরে ওবায়দুল কাদের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। এ সময় তিনি বলেন, যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল তারাই আজ মুছে যাচ্ছে ইতিহাসের পাতা থেকে।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর গড়িয়ে গেছে কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের, মুক্তিযুদ্ধের পরিপূর্ণ ইতিহাস রচিত হয়নি। এটা আমাদের ব্যর্থতা ও অপারগতা। বিশেষ করে যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবী ও গবেষক হিসেবে দাবি করে, এটা তাদের জন্য একটা কলঙ্কসম। তিনি আরও বলেন, আসুন আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করি- আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বস্তুনিষ্ট ইতিহাসটি যেন আমরা তুলে ধরতে পারি আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য। নইলে শুধু দিবস পালন, শুধু আবেগের প্রকাশ, শুধু বক্তাদের নামের আগে বিশেষণ প্রয়োগ, এগুলো দিয়ে কিন্তু কোন লাভ হবে না। এগুলো থাকবে না। থাকবে বই, যদি সেটা বস্তুনিষ্ট হয়।
জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, খুনী জিয়া, খুনী মোশতাক, চাষী ওবায়দুল রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম, তখন খাদ্য সচিব ছিল মোমেন আরও অন্যান্য যারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, তাদের সবার কথাই কিন্তু পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর রায় এবং তাহের হত্যা মামলার রায়ে উল্লেখ আছে। এরা তো মরে গিয়ে বেঁচে গেছে, কিন্তু তাদের কি আমরা এভাবে জীবিত রাখতে দেবো ?
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যায় যারা নেপথ্যে ছিলেন, তাদের মুখোশ আজ উন্মোচিত হয়েছে। একজন সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা, চিফ অব আর্মি স্টাফ থাকাকালীন যখন মার্চ মাসে কিছু কর্মকর্তা তাকে এসে বলল যে, একটি রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী এবং রাষ্ট্রপতি পদ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে চাই! তখন উর্ধতন কর্মকর্তার দায়িত্ব ছিল- তাদের বিরুদ্ধে সেনা আইনে ব্যবস্থা নেয়া ও তাদের আটক করা। কিন্তু মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিনি কিছুই করেননি। বরং নিম্নস্থানীয় কর্মকর্তাদের বলা হয়- ‘গো এ্যাহেড’! সিনিয়র অফিসার যখন এটা বলে তখন এটা অর্ডার হয়ে যায়।
কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মতো সকাল যেন আমাদের জীবনে আর না আসে। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল তারা আসলে বুঝেনি, মানুষকে হত্যা করলেও তার চেতনাকে হত্যা করা যায় না। বঙ্গবন্ধু যে চেতনা গেথে দিয়ে গেছেন তা বাঙালী জাতির রক্তে প্রবাহিত। সেই চেতনা নিয়েই বাঙালী জাতি এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।
পরে ওবায়দুল কাদের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। এ সময় তিনি বলেন, যারা বঙ্গবন্ধু মুজিবকে ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল তারাই আজ মুছে যাচ্ছে ইতিহাসের পাতা থেকে।