
ছবি: সংগৃহীত
স্মৃতি ফিরে দেখার সময় যদি আবেগময় সঙ্গীত বাজে, তাহলে সেই স্মৃতির আবেগগত রংও বদলে যেতে পারে-এমনটাই দাবি করলেন মার্কিন গবেষকেরা। জর্জিয়া টেক ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো নিরপেক্ষ স্মৃতিকে আবেগময় সঙ্গীতের সঙ্গে পুনরায় স্মরণ করলে পরবর্তীতে সেই স্মৃতিতে সেই সঙ্গীতের আবেগগত ছাপ যুক্ত হয়ে যেতে পারে। গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে কগনিটিভ, এফেক্টিভ, এন্ড বেহেভিওরাল নিউরোসায়েন্স জার্নালে।
গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন ৪৪ জন তরুণ, যাদের গড় বয়স ছিল প্রায় ২০ বছর। অংশগ্রহণকারীদের প্রথম দিনে ২০টি সংক্ষিপ্ত গল্প পড়ানো ও শোনানো হয়, যেগুলোর মধ্যে ১৫টি ছিল আবেগগতভাবে নিরপেক্ষ এবং ৫টি ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিবাচক বা নেতিবাচক আবেগসমৃদ্ধ। তারা কল্পনার সাহায্যে গল্পগুলো লিখে পুনর্গঠন করেন।
দ্বিতীয় দিনে অংশগ্রহণকারীদের ব্রেইন স্ক্যান করে দেখা হয়, তারা যখন গল্পগুলোর স্মৃতি রিকল করেন, তখন সঙ্গীতের প্রভাব কীভাবে তাদের মস্তিষ্কে কাজ করে। স্মৃতি রিকলের সময় কিছু গল্পের পেছনে ইতিবাচক আবেগময় সঙ্গীত, কিছু গল্পে নেতিবাচক সঙ্গীত, এবং কিছু গল্পে কোন সঙ্গীত ছিল না।
তৃতীয় দিনে তাদের মেমোরি টেস্ট নেওয়া হয়-তাদের জিজ্ঞেস করা হয়, তারা পূর্বের গল্পগুলোতে কোন শব্দগুলো মনে রাখেন এবং কোনগুলো নতুন।
যেসব অংশগ্রহণকারী গল্পের স্মৃতি রিকল করার সময় আবেগময় সঙ্গীত শুনেছিলেন, তারা সেই আবেগ-সঙ্গত অতিরিক্ত শব্দগুলোকে ভুলভাবে আসল গল্পের অংশ হিসেবে মনে করেছেন। যেমন, যারা ইতিবাচক সঙ্গীত শুনেছেন তারা গল্পে অতিরিক্ত ভালো কিছু ‘মনে করেছেন’, আর নেতিবাচক সঙ্গীত শোনাদের মধ্যে দেখা গেছে বিপরীত প্রভাব।
ব্রেইন স্ক্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই সময় মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা, ফ্রন্টাল কর্টেক্স ও ভিজ্যুয়াল এরিয়াতে বেশি কার্যকলাপ ঘটছে-যেগুলো আবেগ, স্মৃতি ও কল্পনার সঙ্গে জড়িত।
প্রধান গবেষক ইয়িরেন রেন এবং তার সহকর্মীরা জানান, এই প্রক্রিয়া ‘রিকনসোলিডেশন মেকানিজম’-এর মাধ্যমে ঘটছে। অর্থাৎ স্মৃতি যখন পুনরায় সক্রিয় হয়, তখন তা নতুন আবেগ বা তথ্যের প্রভাবে বদলে যেতে পারে।
তবে তারা এটাও উল্লেখ করেন, অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত শব্দ চিনতে খুবই দক্ষ ছিলেন, যার ফলে ফলাফলে কিছুটা সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।
এই গবেষণা আরও প্রমাণ করে যে, সঙ্গীত শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়-এটি আবেগ, স্মৃতি এবং মস্তিষ্কের কাজকে সরাসরি প্রভাবিত করতে পারে।
সঙ্গীত ইতোমধ্যেই হাসপাতাল ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় থেরাপি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি শিক্ষাক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে, খেলাধুলায় মনোযোগ ধরে রাখতে, এমনকি বিপণনে গ্রাহকদের আবেগ প্রভাবিত করতেও ব্যবহৃত হয়। এই গবেষণা আমাদের জানাল, সঙ্গীতের প্রভাব আমাদের মস্তিষ্কের গহীনে গিয়েও স্মৃতিকে রঙিন করে তুলতে পারে।
সূত্র: https://shorturl.at/tXpVf
মিরাজ খান