
স্ক্যাবিস! এক ধরনের ছোঁয়াচে চর্মরোগ। খোস, পাঁচড়া জাতীয় এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে শুরু করে পৌর শহর পর্যন্ত৷চারআনি হাসনাবাদ গ্রামের সাইফুল ইসলাম শাকিলের শিশু ছেলে শাহরিয়ার ইসলাম শায়ান। তার হাত-পা ছেয়ে গেছে ছোট লাল র্যাশে। চিকিৎসা নিতে বাবার সাথে এসেছেন পৌর সদরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। শায়ানের বাবা শাকিল জানান, তিনি, ছেলে ও স্ত্রীসহ পরিবারের সবাই এই রোগে আক্রান্ত। প্রথমে ছেলে শাহরিয়ার ইসলাম শায়ান এ রোগে আক্রান্ত হয়। এরপর তার শরীর ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকে ছেলে শাফরাজ ইসলাম শান ও স্ত্রী শাকিরিন আক্তারের শরীরে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। হাত, পায়ে শুরুতে ছোট ছোট ঘামাচির মত দেখা দেয়। তীব্র চুলকানি দেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে গেলে চিকিৎসক এটিকে ছোঁয়াচে চর্মরোগ স্ক্যবিসের কথা বলে। তবে চিকিৎসা নেয়ার পরও কোন সমাধান দেখা যাচ্ছে না। পরিবারের সবাই খুব কষ্ট পাচ্ছে৷
চিকিৎসকরা জানান, দাউদকান্দি উপজেলার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চর্মরোগের চিকিৎসা নিতে যাওয়া ৭০ শতাংশই স্ক্যাবিসে আক্রান্ত। শুরুতে শিশুদের মধ্যে থাকলেও এখন সব বয়সীরাই আক্রান্ত হচ্ছেন। রোগীর সংস্পর্শে যাওয়ার পাশাপাশি তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকেও ছড়াতে পারে ভয়াবহ এই চর্মরোগ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,দাউদকান্দি উপজায় সর্বত্রই আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রামক ব্যাধি স্ক্যাবিস। ভয়াবহ এ রোগ শুরুতে ঘামাচির দানা থেকে তীব্র চুলকানি। হাতের তালু, আঙ্গুলে ফাঁক, পেট, ঘাড়, কোমড়সহ দেহের বিভিন্ন ভাঁজে জন্ম নেয়া খোস, পাঁচড়াই স্ক্যাবিসের উপসর্গ। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়ার পাশাপাশি তার ব্যবহৃত যেকোনো কিছু থেকে সংক্রমিত হতে পারে অন্যরা।
দাউদকান্দি শায়লা ডায়াগনষ্ঠিক সেন্টারের চিকিৎসক, চর্ম ও যৌনরোগ ও মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা.এ,কে,এম,সুলতান আহমেদ বলেন,ছোঁয়াচে এ চর্মরোগের সংক্রমণ বাড়ছে।প্রতি সপ্তাহে তিনি স্ক্যাবিস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। চিকিৎসা নিতে আসা শতকরা ৭০ শতাংশ রোগী স্ক্যাবিসে আক্রান্ত। এ রোগ ছোঁয়াচে হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে বা তার ব্যবহৃত পোশাক, বিছানার চাদর ও তোয়ালে থেকেও পরিবারের অন্যদের শরীরেও ছড়ায় এ সংক্রমণটি। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নেয়া উচিত।তবে স্ক্যাবিস চিকিৎসা নিরাময়যোগ্য। সংক্রমণ ঠেকাতে এক ঘরে অবস্থানকারী সব সদস্যদের এক সাথে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন৷
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা(টিএইচও) ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘স্ক্যাবিস’একটি ছোঁয়াচে চর্মরোগ,আমাদের হাসপাতালে এ রোগীর সংখ্যা অনেক বেশী প্রতিদিন শত শত রোগী আসে ‘স্ক্যাবিস’ এর চিকিৎসা নিতে৷তবে বর্তমানে বাজারে যে কয়েকটি কোম্পানির ঔষধ আছে,তা একবার খেলে ও ব্যবহার করলেই সাথে সাথে সেরে যেত৷এখন কয়েকবার খেলে বা ব্যবহার করলেও সেরে যায় না৷ এদিকে চর্মরোগে আক্রান্ত ‘স্ক্যাবিস’এর নতুন ঔষধ আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আগের ঔষধ গুলো নিয়মিত ব্যবহার ও খেতে হবে৷
তিনি আরো বলেন, গরম-শীত, গরমের বৃষ্টি এ রোগের মৌসুম। এবার এটা যৌনবাহিতও। চিকিৎসায় নিরাময়যোগ্য স্ক্যাবিসে সংক্রামিত ব্যক্তি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ না নিলে জীবাণু ছড়িয়ে আক্রান্ত হতে পারেন পুরো পরিবার। তাই চিকিৎসকের পরামর্শের সাথে জনসচেতনাও বাড়াতে হবে এ রোগ প্রতিরোধে৷
সজিব