
রায়পুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানহার উপর প্রাইভেট শিক্ষক ইকরাম পাটোয়ারীর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। অভিযুক্ত ইকরাম পাটোয়ারী (পিতা শাহাদাত পাটোয়ারী), পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ কেরোয়া ভূঁইয়া গাজী পাটোয়ারী বাড়ির বাসিন্দা।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ছাত্রী তানহা দীর্ঘদিন ধরে ইকরামের কাছে প্রাইভেট পড়তেন। শিক্ষক হিসেবে আস্থাভাজন হওয়ার পর তিনি ধীরে ধীরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। হঠাৎ করে তানহা পাঁচদিন প্রাইভেট না গেলে পরিবারের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। একপর্যায়ে ছাত্রীটির মা জানতে পারেন, ইকরাম তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছেন, ঘুরতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, এমনকি আরও কুপ্রস্তাব দিয়েছেন।
তানহার বাবা স্থানীয় সাংবাদিক পরান মাহমুদ বুধবার ১৪ মে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং সেনাবাহিনীর স্থানীয় কমান্ডার বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। ইউএনও সরেজমিন তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন এবং ‘অপরাধের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না’ বলে সাফ জানিয়েছেন।
এই ঘটনার পেছনে আরেকটি আলোচিত নাম উঠে এসেছে—নাছির আল ইমরান। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের পতনের প্রেক্ষিতে ওসমান চত্বরে পানি বিতরণের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। নিজেকে ‘ছাত্র প্রতিনিধি’ পরিচয় দিলেও, তার অতীত রাজনৈতিক পরিচয় ছিল ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে।
ঘটনার প্রেক্ষিতে অভিযোগ উঠেছে, নাছির আল ইমরান ভুক্তভোগী ছাত্রীর শিক্ষিকাকে ‘ছাত্র প্রতিনিধির’ পরিচয়ে চাপ প্রয়োগ করেন যাতে অভিযুক্ত ইকরামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। শিক্ষিকাও রায়পুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
নাছির আল ইমরান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ উদেশ্য প্রণোদিত। আমি সংবাদকর্মী। স্কুলের শিক্ষিকার বিরুদ্ধে কয়েকজন অভিযোগ জানালে আমি ওই বিষয়ে তার সাথে ফোনে কথা বলেছি।
পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রুবিনা ইয়াসমিন বলেন, “আমরা একটি ছাত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু এক বহিরাগত এসে পরিচয় গোপন রেখে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছে। এটা শুধু অন্যায় নয়, অপরাধ।”
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন ভূঞা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ইউএনও ইমরান খান জানান, “ছাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। অভিযুক্তের রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক, আইনের চোখে সে অপরাধী হলে ছাড় নেই।”
ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনা ও তার পেছনে প্রভাব খাটানোর অপচেষ্টা রায়পুরবাসীকে ক্ষুব্ধ করেছে। এই ঘটনায় প্রশাসনের সক্রিয় ও নিরপেক্ষ ভূমিকা যেমন প্রত্যাশিত, তেমনি সমাজের সকল স্তরের সচেতনতা ও প্রতিবাদ জরুরি।
রাজু