ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রেকর্ডে থাকা ৭০ বছরে তাপমাত্রা এমন কমেনি কখনও;###;তেঁতুলিয়া উপজেলায় তাপমাত্রা নেমে দাঁড়ায় ২.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস;###;ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস

স্মরণকালের শীতল দিন

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৯ জানুয়ারি ২০১৮

স্মরণকালের শীতল দিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্মরণকালের ইতিহাসে শীতলতম দিন ছিল সোমবার। এদিন তাপমাত্রা নেমে এসেছিল ২.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। দেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা তেঁতুলিয়ায় প্রথমবারের মতো এত কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। অতীতে এই ভূখ-ের তাপমাত্রা এত নিচে নেমেছিল কিনা, তার রেকর্ড কেথাও নেই। আবহাওয়া অফিস বলছে তাদের কাছে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত রেকর্ড রয়েছে। ’৪৮ থেকে ’১৮ সাল পর্যন্ত ৭০ বছরে তাপমাত্রা এত নিচে নামেনি কখনও। এর আগে ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে একবারই তাপমাত্রা ২.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল। সোমবার সেই রেকর্ড ভেঙ্গে গেছে। শুধু তেঁতুলিয়া নয়, এদিন উত্তরের জেলা নীলফামারী সৈয়দপুরের তাপমাত্রা ২.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে। দেশের আরও একাধিক স্থানে এদিন একযোগে তাপমাত্রা রেকর্ড পর্যায়ে নেমে এসেছে। এছাড়া সোমবার ডিমলায় ছিল ৩ ডিগ্রী, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৩ দশমিক ১, দিনাজপুরে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রী, বদলগাছীতে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং রংপুরে ৪.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল। তবে এদিন রাজধানী ঢাকায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯.৫ ডিগ্রীতে নেমে এসেছিল। এভাবে তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার কারণে সারাদেশের ওপর শীত জেঁকে বসেছে। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছে। রুটি রুজির সন্ধানে কাজের বের হতে পারছে না তারা। প্রচ- ঠা-ার কারণে অনেকে ডায়রিয়া, ঠা-াজনিত এ্যাজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন জেলায় শীতজনিত রোগে আক্রন্ত হয়েছে ২৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়ে পাবনাতে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কুড়িগ্রামে ১১ জনের, চুয়াডাঙ্গায় ৪ জনের এবং নওগাঁয় ২ জনের এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঠা-াজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে হাসপাতালে রোগীর চাপও বাড়ছে। এ অবস্থায় আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আগামী দুদিনের শৈত্যপ্রবাহ কমার কোন সম্ভাবনা নেই। ১০ জানুয়ারি পর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। তখন শীতের তীব্রতা কিছুটা কমতে পারে। আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বলেন আজ ও আগামীকাল পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। একই থাকবে। বরং এই সময়ের মধ্যে ঢাকার তাপমাত্রাও আর কমে যেতে পারে। ফলে রাজধানী ঢাকায় শীত আরও বাড়তে পারে। তিনি জানান ১০ জানুয়ারির পর থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। বাড়লে শীত আস্তে আস্তে কমে আসবে। তারা জানিয়েছেন টাঙ্গাইল, শ্রীমঙ্গল ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সন্দ্বীপ, সীতাকু-, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগ এবং ঢাকা, সিলেট ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিদ্যমান শৈত্যপ্রবাহ পরিস্থিতি আগামী কয়েকদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদফতরের কাছে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তাপমাত্রার রেকর্ড আছে। তাতে তাপমাত্রা এত কমে যাওয়ার নজির সেখানে আর নেই। এর আগে ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সেটাই ছিল এ যাবৎকালের সর্বনিম্ন। তিনি জানান, গত ৫০ বছরের মধ্যে তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রীর নিচে নামেনি। সম্প্রতি ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারি সৈয়দপুরেও তাপমাত্রা নেমে এসেছিল ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। এর নিচে আর নামেনি। উত্তরের জেলায় শীতের তীব্রতা এতটাই বেশি যে রাতের বেলায় আকাশ থেকে ঝরছে বৃষ্টির মতো কুয়াশা। দিনের বেলায়ও কুয়াশার রেশও কাটছে না। উত্তর দিক থেকে আসছে কনকনে ঠা-া বাতাস। তীব্র শীতের হাত থেকে রক্ষা পেতে স্বল্প আয়ের মানুষের নিত্যদিনের ভরসা হয়ে উঠছে খড়কটা জ্বালিয়ে আগুলোর কুন্ডলীর মাধ্যমে উত্তাপ তৈরি করা। শীতের ছোবল থেকে বাঁচতে দিনরাত সব সময়ই তারা আগুনের কাছে দাঁড়িয়ে নিজেদের রক্ষা করছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন পশ্চিমা দেশের আবহাওয়া সব সময় চরমাভাবপন্ন। যখন তখন তাপমাত্রা মাইনাস জিরো ডিগ্রীর নিচে চলে যায়। সব সময় বরফ পড়ে। কিন্তু আমাদের দেশের আবহামানকাল থেকে আবহাওয়া ছিল নাতিশীতোষ্ণ। না গরম, না শীত ধরনের আবহাওয়া। এই আবহাওয়ায় এদেশের জনগণ অভ্যস্ত। কিন্তু হঠাৎ করেই তাপমাত্রা এত নিচে নেমে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এর আগে এত শীত অতীতে কখনও দেখেনি। হঠাৎ করে তাপমাত্রা এত নিচে নেমে যাওয়ায় উত্তরের জনসাধারণ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তবে তারা জানিয়েছে দেশে শূন্য ডিগ্রী বা এর কম তাপমাত্রা নেমে যওয়া আশঙ্কা অনেকটা কম। অধিদফতরের সাবেক পরিচালক শাহ আলম বলেন, বাংলাদেশে শীত পড়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর একটি হলো সাইবেরিয়ার বাতাস। তবে বাংলাদেশে পৌঁছানোর আগেই এই বাতাসে শীতের মাত্রা কমে যায়। কিন্তু এ সময় সাইবেরিয়ার বাতাসে যে মাত্রার ঠা-া থাকে সেটি এ দেশের মানুষের কাছে সহনীয় নয়। তাই এই অবস্থা তৈরি হচ্ছে। সোমবার উত্তরের বেশিরভাগ জেলায় সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। কুয়াশা ঢাকা ছিল গোটা এলাকা। দৃষ্টিসীমা যেন আর দূরে যেতে চায় না। কুয়াশার যেন প্রাচীর দিয়ে আছে চারদিকে। তাই যানবাহনগুলো দুর্ঘটনা এড়াতে সারাক্ষণই হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হয়েছে। হেডলাইট জ্বালানোর পরও কুয়াশার চাদর ভেদ করা সম্ভব হচ্ছিল না। তবে রাজধানীসহ দেশের বেশি কিছু জেলায় সকাল থেকেই সূর্যের আলো দেখা মিলেছে। পাশাপাশি শৈত্যপ্রবাহও যেন ঝড়ের গতিতে বয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির এই কুলিং সিস্টেমের কছে সূর্যের হিটিং সিস্টেমকে অনেক অসহায়ের মতো মনে হয়েছে। সূর্যোলোক এতটুকু উত্তাপ তৈরি করতে পারছিল না যেন। কনকনে ঠা-া হাওয়ায় খোদ রাজধানীবাসীকে কাবু করে ছাড়ছে। মোটা গরম কাপড় জড়ানোর পরও অনেককে ঠক ঠক করে কাঁপতে দেখা গেছে। এর অবস্থার মধ্যে অফিস আদালতে ছুটতে হচ্ছে অনেকের। রাস্তাঘাটে অনেকে জড়োসড়ো হয়ে বসে রোদের উত্তাপ নিতে দেখা গেছে। অনেককে ফুটপাথের দোকানে গরম চায়ের উত্তপ নিতে দেখা গেছে। এর বাইরে বেশিরভাগ লোক প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হয়নি। উত্তরের মানুষজন জানিয়েছে এ ধরনের শীত তারা আগে কখনও দেখেনি। শৈত্যপ্রবাহে তীব্রতা মানবদেহে কাঁটার মতো বিঁধছে। তারা জানায় এ ধরনের শীতের সঙ্গে তারা আগে কখনও অভ্যস্ত ছিল না। শীত মোকাবেলা করা নি¤œ আয়ের মানুষের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। হিমালয়ের কাছের জেলা হওয়ার কারণে এর সবচেয়ে বিরূপ প্রভাব পড়ছে পঞ্চগড় জেলায়। এ জেলায় স্মরণকলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি শীত নেমেছে। এছাড়া পুরো রংপুর বিভাগ জুড়েই শীতের ঘূর্ণবর্তের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। শীত থেকে নিবারণের জন্য সরকারের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। শুধু মানুষ নয় প্রাণীকুলের অবস্থায় কাহিল। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত উত্তরের জনজীবন পঞ্চগড় ॥ হিমালয়ের কাছে জেলার অবস্থান হওয়ায় হিমালয় থেকে বয়ে আসা শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। নির্দয় শীতে ছিন্নমূল মানুষের অবস্থা আরও কাহিল করে তুলেছে। গ্রামে যাদের গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই তারা খড়কুটো জ্বালিয়ে সকাল-সন্ধ্যা শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। সোমবারের দিনটি ছিল সবচেয়ে শীতল দিন। ভোরের দিকে গোটা জেলায় ঘন কুয়াশায় ঢেকে পড়ে। কোথাও কোথাও বৃষ্টির মতো শিশির পড়ছে। যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। রাস্তায় খুব একটা যানবাহন চলাচল করেনি। মানুষজনও ঘর থেকে বের হয়নি। হাড়কাঁপানো শীতে পশুপাখিদেরও জবুথবু অবস্থা। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রাও একটু বৃদ্ধি পায়। দুপুরে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও বিকেলে আরও আকাশ কুয়াশা ঢাকা পড়ে। ইতিহাসের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা নেমে যাওয়ায় প্রবীণদের অভিমত এত কম তাপমাত্রা এ অঞ্চলে কোনদিন ছিল না। জন্মের পর এবারই প্রথম এত কম তাপমাত্রা অনুভূত হয়েছে তাদের কাছে। প্রচ- শীতে গরম কাপড়ের অভাবে নিদারুন কষ্ট ভোগ করছে স্বল্প আয়ের মানুষেরা। সরকারের পাঠানো কোন শীতবস্ত্র তাদের হাতে পৌঁছায়নি। শীতের কারণে হঠাৎ নানান রোগ দেখা দিয়েছে। শিশু বৃদ্ধদের সর্দি, জ্বর, হাঁপানি, কাঁশি নিউমোনিয়া, চর্মরোগ ও শীতজনিত কারণে ব্যাপক ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। নীলফামারী ॥ হিমালয় থেকে নামছে হিমশীতল বায়ু। বয়ে যাচ্ছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। ঠা-ায় কাবু করে দিয়েছে এলাকাবাসীর। তীব্র শৈত্যপ্রবাহের ঝাঁকুনি মানবদেহে ভূমিকম্পকেও হার মানিয়ে দিয়েছে। হিমালয় পর্বতের কাছে নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলা। দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা সৃষ্টি করেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা, এরপর নীলফামারীর সৈয়দপুর ও ডিমলা উপজেলা রয়েছে। শীত মোকাবেলা করা বিশেষ করে নি¤œ আয়ের পরিবারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আগুনের কু-লীর ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। দিনমজুর শ্রেণীর মানুষের জনজীবন অনেকটাই দুর্বিষহ। তারা এখন উভয় সঙ্কটে পড়েছেন। একদিকে পেটের ভাতের চিন্তা, অন্যদিকে তীব্র শীত মোকাবেলা। জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রছাত্রীরা কমে গেছে। কুড়িগ্রাম ॥ প্রচ- শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে বাড়ছে রোগ-ব্যাধি। গত এক সপ্তাহে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে বিভিন্ন রোগে ভর্তি হয়ে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার জেলায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ৩ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। হিম ঠা-ায় কাবু হয়ে পড়েছে এ জনপদের মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। নদ-নদী তীরবর্তী ও শহরের দরিদ্র অসহায় মানুষ এক কাপড়ে পার করছেন কনকনে শীত। ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে লোকজন ঘর থেকে কাজে বের হতে পারছে না। রাজশাহী ॥ তীব্র শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। বেড়ে গেছে শীতের তীব্রতা। রাজশাহীতে সোমবারের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ফলে শীতের তীব্রতায় রাজশাহী অঞ্চলে প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। গত কয়েক দিনে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৭১ জন শিশু। এদের মধ্যে চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডাঃ ছানাউল হক বলেন, শীতজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিলাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এদিকে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকায় সন্ধ্যার পরে জনশূন্য হয়ে পড়ছে বাজার এলাকা। শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে খড়-কুটা জ্বালিয়ে হাত-পা তাপিয়ে নিচ্ছে শীতার্তরা পাবনা ॥ হাড়কাঁপানো তীব্র শীত ও হিমেল বাতাসে জেলার সর্বত্র জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। স্মরণকালের সর্বনি¤œ তাপমাত্রায় ২৪ ঘণ্টায় ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সোমবার পাবনা জেলায় ৫.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সূর্যের আলোর দেখা মেলেনি সোমবার বিকেল পর্যন্ত। সোমবার পাবনা জেলায় তাপমাত্রা ছিল ৫.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গাইবান্ধা ॥ প্রচ- শীতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শিশু ও বৃদ্ধরা কনকনে ঠা-ায় দুর্বিষহ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘরের বাইরে খুব একটা বের হয়নি। শহরে বিকেলের পর থেকে সব ধরনের যানবাহন ও মানুষের চলাচল কমে যাচ্ছে। দিনাজপুর ॥ টানা ৫ দিনের শৈতপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কনকনে বাতাসের সঙ্গে হাড়কাঁপানো শীতের কামড়ে জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। কর্মহীন হয়ে পড়ে দিনমজুররা। প্রচ- শীতে শিশু ও বয়স্কদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বগুড়া ॥ মৃদু শৈত্যপ্রবাহে বগুড়ায় তাপমাত্রা প্রতিদিনই নেমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে বাতাসের গতি। এতটাই শীত কাহিল হয়ে পড়েছে যে দুপুরের আগে কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। ঘরে ফিরছে সন্ধ্যা রাতেই। দিনে রাতে বইছে বাতাস। এদিকে শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বিশেষ করে শিশু ডায়রিয়া (রোটা ভাইরাস) বেড়ে গেছে। বেড়ে গিয়েছে নিউমোনিয়া। বড়দের শ্বাসপ্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে। নওগাঁ ॥ শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে শীতের তীব্রতা আরও বেড়ে গিয়ে মানুষের দুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। শীতের তীব্রতায় গোটা জেলা এখন কাঁপছে। ঘন কুয়াশা আর একটানা হিমেল বাতাসে মানুষের দুর্দশাকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা ॥ তীব্র হাড়কাঁপানো শীতে চুয়াডাঙ্গায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রবল শীতে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের জীবনযাত্রা। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে। দুর্ভোগ-দুর্দশা বাড়ছে এ জেলার ছিন্নমূল মানুষের। কষ্টে পড়েছে বৃদ্ধ, শিশু, হতদরিদ্র মানুষ ও দিনমজুর। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে রবি ফসলসহ বোরো ধানের চারা, আমসহ মশুর ডাল, আলু এবং সরিষার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। ধানের বীজতলায় নানা রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। বরিশাল ॥ দিনে দিনে তাপমাত্রা কমে আসছে বরিশালে। ফলে বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত ঠা-া বাতাস ও তীব্র শীতে কাতর হয়ে পড়েছে দক্ষিণের জনপদের মানুষ। দুপুরের রোদেও গরম কাপড় মুড়িয়ে চলাফেরা করছে সাধারণ মানুষ। হাসপাতালগুলোতে ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যার মধ্যে শিশু ও বয়োজেষ্ঠ্যদের সংখ্যাই বেশি। যথাসময়ে সূর্যের দেখা মিললেও বেলা বাড়ার পরে শীতের কারণে রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা থাকছে।
×