ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন

অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে তালগোল

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১২ এপ্রিল ২০১৭

অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে তালগোল

বিভাষ বাড়ৈ ॥ জাতীয় শিক্ষানীতিতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকটা তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষাসহ শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন কাজে শিক্ষা এবং প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের অভাবে বাড়ছে নতুন সঙ্কট। প্রাথমিক শিক্ষা সমপনী পরীক্ষা নিয়ে নিত্য নতুন ঘোষণায়ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে দুই কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের মাঝে। এদিকে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষানীতির বাইরে গিয়ে পঞ্চম শ্রেণীর শিশুদের ওপর পাবলিক পরীক্ষার বোঝা চাপানো নিয়ে। শিক্ষাবিদরা পরীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক স্তর হলে পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষা অগ্রহণযোগ্য। এখন সময় হয়েছে শিশুদের নিয়ে ‘এক্সপেরিমেন্ট’ বন্ধ করার। গত বছর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত হওয়ায় অষ্টম শ্রেণী শেষেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা হওয়ার কথা। সে হিসাবে শিশুদের পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষা বাতিলে সারাদেশে ব্যাপক দাবির প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ‘পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষা হবে না’ বলে ঘোষণা দেয়ার পর আশ্বস্তও হয়েছিলেন সকলেই। তবে তার ঘোষণা মন্ত্রিসভায় বহাল রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় সেই আগের সঙ্কটেই পড়তে হয় শিশু ও তাদের অভিভাবককে। ফলে যথারীতি গত বছরের শেষ মুহূর্তে এসে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে দুটি পাবলিক পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছে শিশুদের। আবার অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিলেও শেষ মুহূর্তে এসে তারা ঘোষণা দেয় জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা তারা নেবে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত সে পরীক্ষা নিতে হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। যে পরীক্ষা প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রী বাতিলের ঘোষণাও দিয়েছিলেন। তিনি এখন বলছেন, কবেনাগাদ পরীক্ষাটি বাতিল হবে তা আমি নিশ্চিত নই। মন্ত্রিসভায় পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চলবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইলটিংভিত্তিতে বেশকিছু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণী চালু হলেও অর্থ সঙ্কট, অবকাঠামোর অভাব, শিক্ষক সঙ্কট ও শিক্ষকদের মর্যাদা অক্ষুণœ রাখাই নীতি বাস্তবায়নে এখন প্রধান অন্তরায় হয়ে সামনে এসেছে। নীতি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় সঙ্কট হয়ে দাঁড়িয়েছে সারাদেশের শত শত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভয়াবহ অবকাঠামো সঙ্কট। খোদ রাজধানীতেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থা বেহাল। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শিশুদের উপযোগী শ্রেণীকক্ষ। যাদের আছে তাও আকারে ছোট। অষ্টম শ্রেণীতো পরের কথা, ১৫ হাজার প্রধান শিক্ষকসহ অর্ধ লক্ষ শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত কার্যক্রমেই পড়েছে সঙ্কটের মুখে। শিক্ষানীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা চালুর সরকারী উদ্যোগের বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে এমন উদ্বেগজনক চিত্রই বেরিয়ে এসেছে। প্রথমিক শিক্ষার ব্যাপ্তি ও পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য বা উত্তর জানা নেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এমনকি সুনির্দিষ্ট উত্তর জানা নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের কাছেও। অথচ এসব প্রশ্নের জবাবের সঙ্গে জড়িত প্রায় আড়াইকোটি শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ভাগ্য। প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা হবে কি-না? এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আমি নিশ্চিত নই। যেহেতু পরীক্ষার এ সিদ্ধান্ত ছিল মন্ত্রিসভার সেহেতু যখন মন্ত্রিসভা এ পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিবেন সেদিনই বাতিল হবে। গত বছর মে মাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথসভা করে ঘোষণা দিয়েছিল, প্রাথমিক শিক্ষা এখন অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত করা হলো। এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, এটা বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাঠাবে। শিক্ষামন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, উনি ২০১৮ সালের মধ্যেই এটা বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করেছেন। আমিও সেই আশাই করছি। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আন্তরিকতার অভাব আছে বলে তিনি মনে করেন না। জানা গেছে, এরই মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষার নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন করছে। খাতা-কলমে দেশে এখন প্রাথমিক শিক্ষা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই বলছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে। জটিলতা এড়ানোর জন্য বর্তমানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত যেভাবে রয়েছে ঠিক সেভাবে রেখেই তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা হচ্ছে। অর্থাৎ যেসব হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করানো হচ্ছে সেসব প্রতিষ্ঠানেও অষ্টম শ্রেণী থাকবে, শুধু অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন কিলোমিটারের মধ্যে হাইস্কুল নেই শুধু সেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণীর অনুমোদন দেয়া হবে। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর অনুমোদন দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে প্রায় ৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করা হচ্ছে। কিন্তু এসব বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর পাঠদানের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। কোন কোন বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষকও দেয়া হয়নি। ফলে অনেক বিদ্যালয়ে এসব শ্রেণী চালু রাখাই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা হবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। ছয় বছর আগে শিক্ষানীতি জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কোন কূল-কিনারা পাচ্ছে না মন্ত্রণালয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেছেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন নিয়ে কিছুটা জটিলতা আছে। অর্থ সঙ্কট, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকা, শিক্ষক সঙ্কট ও শিক্ষকদের মর্যাদা অক্ষুণœ রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, নানা সঙ্কটের কারণে শিক্ষানীতি বাস্তায়নে গঠিত সাব-কমিটি এমনকি দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কয়েক দফা বৈঠক করেও কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এ বিষয়ে কমিটির সদস্যরা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলছেনও না। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমস্যার বিষয়ে কিছু বলা না হলেও অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের নানা সঙ্কটের চিত্র। এসব সঙ্কটই ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্টদের। দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এমনকি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই অনেকে বলছেন, দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যে অবকাঠামো আছে তা দিয়ে কোনভাবেই প্রাথমিকে অষ্টম শ্রেণী বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। আগে অবকাঠামোর উন্নয়ন করা প্রয়োজন। যে শিক্ষক আছে তা দিয়েও অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না কোনভাবেই। দেশের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনও ৪৮ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। প্রায় ১৫ হাজার প্রাথমিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষকই। নতুন জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূন্য পদের সংখ্যা ২৩ হাজার ৫৪১ জন। শিক্ষকরা বলছেন, প্রধান শিক্ষককে মাসিক সভা, প্রতিবেদন তৈরি ও দাফতরিক নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। সহকারী শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান করেন। প্রধান শিক্ষক না থাকায় অনেক স্কুলে সহকারী শিক্ষকেরা এই দায়িত্ব পালন করছেন। এতে তাদের পাঠদান ও দাফতরিক কাজ দুটোই একসঙ্গে চালাতে গিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। মূলত ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা চালু হওয়ার পর শিশুদের অসহনীয় চাপের শিকার হতে হচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবক সবারই চাহিদা থাকে শিশুর জিপিএ ৫ প্রাপ্তির। ফলে শিশুদের দিনরাত পড়ালেখা করতে হচ্ছে। অনেক স্কুলেই পঞ্চম শ্রেণীর ক্লাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করে দেয়া হচ্ছে আলাদা কোচিং। আর এই পরীক্ষা ঘিরে গড়ে উঠেছে বড় ধরনের কোচিং বাণিজ্য। ভাল ফলের জন্য অভিভাবকরাও শিশুদের চাপ দিচ্ছেন। এতে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অভিভাবকদের সংগঠন অভিভাবক সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শামীমা সুলতানা নীপা জনকণ্ঠকে বলছিলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণীর সমপনী পরীক্ষার জন্য একটি শিশুকে স্কুলের কোচিং, বাইরের কোচিং আর প্রাইভেট নিয়ে সারাদিনই ব্যস্ত থাকতে হয়। একটা ১০ থেকে ১১ বছরের শিশুর পক্ষে এই বাড়তি চাপ নেয়া সম্ভব কি না সে চিন্তা কারোর মাথায়ই নেই। গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক হাসনা হেনা। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলছিলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত হওয়ায় আমরা গত বছর আশা করেছিলাম এবার বোধ হয় পঞ্চম শ্রেণী শেষে পিএসসি পরীক্ষা বাতিল হবে। শিশুদের ওপর চাপ কমবে। কিন্তু সরকার পরীক্ষা বাতিল না করে আবারও বোঝা চাপিয়ে দিল। এ বছর হবে কিনা তাই নিয়ে সবাই চিন্তিত। মন্ত্রীদের একেক জন একেক সময় একেক রকম কথা বলেন। শিশুদের কথা কারো মাথায় নেই। শিক্ষণ পদ্ধতি ও মূল্যায়ন সম্পর্কে জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, শিশুর সৃজনশীল চিন্তা ও দক্ষতা প্রসারের জন্য সক্রিয় শিক্ষণ পদ্ধতি অনুসরণ করে শিক্ষার্থীকে এককভাবে বা দলগতভাবে কার্য সম্পাদনের সুযোগ দেয়া হবে। ফলপ্রসূ শিক্ষাদান পদ্ধতি উদ্ভাবন, পরীক্ষণ ও বাস্তবায়নের জন্য গবেষণা উৎসাহিত করা হবে এবং সেজন্য সহায়তা দেয়া হবে। আর মূল্যায়নের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং তৃতীয় থেকে সকল শ্রেণীতে ত্রৈমাসিক, অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা চালু থাকবে। পঞ্চম শ্রেণী শেষে উপজেলা/পৌরসভা/থানা (বড় বড় শহর) পর্যায়ে সকলের জন্য অভিন্ন প্রশ্নপত্রে সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অষ্টম শ্রেণী শেষে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা নামে একটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার এমন অবস্থায় শিক্ষানীতি প্রণয়নকারী শিক্ষাবিদরা হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, যেখানে সরকার শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ধাপে ধাপে সেখানে নীতি বহির্ভূতভাবে কিভাবে পশ্চম শ্রেণীর একটি কোমলমতি শিশুর ওপর পাবলিক পরীক্ষার বোঝা চাপাচ্ছেন? শিক্ষানীতি অনুসারে পঞ্চম শ্রেণীতে মেধা মূল্যায়নের জন্য উপজেলা ভিত্তিতে বা বিদ্যালয়েই একটি পরীক্ষা নিতে পারে। অথচ ভর্তিযুদ্ধের উৎকণ্ঠা তো আছেই, তার ওপর মেধার মূল্য দিতে প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত দফায় দফায় পরীক্ষা আর ‘এক্সপেরিমেন্ট’র বিষয় বস্তুতে পরিণত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলছিলেন, যেহেতু সরকার শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আবার শিক্ষানীতিতে বলা আছে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সেহেতু পঞ্চম শ্রেণীর কোমলমতি শিশুর ওপর পাবলিক পরীক্ষার বোঝা চাপানো মানে হয় না। এটা নিয়ে ভাবা দরকার। শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবীর বলছিলেন, শিক্ষানীতিতে যেহেতু অষ্টম শ্রেণীতে পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে তাই সেভাবে আগানোই ভাল ছিল। পঞ্চম শ্রেণীতে উপজেলা ভিত্তিতে একটি পরীক্ষা হতে পারত। এভাবে শিশুদের দিয়ে পাবলিক পরীক্ষা নেয়া ঠিক হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, দেশের শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে এইবার ভাবার সময় হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করার সুপারিশ করে তিনি বলেন, পঞ্চম শ্রেণীতে প্রাথমিক সমাপনী বন্ধ করে দেয়া উচিত। এটি প্রাথমিক পর্যায়ে নোট ও কোচিং বাণিজ্য বাড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষার ব্যয় বাড়ছে ফলে দরিদ্র পরিবারের ওপর চাপ বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন হচ্ছে। যেহেতু ওই স্তরে একটি পাবলিক পরীক্ষা হচ্ছে তাহলে শিশুদের জন্য পঞ্চম শ্রেণীতে একটা পরীক্ষা নেয়ার মানে হয় না। এদিকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার এক লেখার মাধ্যমে পরীক্ষাটি বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, যারা আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চালান, আমি অনুমান করতে পারি, এই দেশের লেখাপড়া নিয়ে তাদের নিশ্চয়ই বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। যদি থাকত তাহলে নিশ্চয়ই এ রকম একটা কিছু ঘটতে দিতেন না। আমাদের শিক্ষানীতিতে পঞ্চম শ্রেণির শিশুদের জন্যে কোন পাবলিক পরীক্ষার কথা বলা নেই, আমলারা নিজেদের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে এটি বের করে জোর করে এটা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাবা-মায়েরা আগে আরও বড় হওয়ার পর ছেলেমেয়েদের কোচিং করতে পাঠাতেন, এখন এই শিশুদেরই গোল্ডেন ফাইভ পাওয়ার জন্যে কোচিং করতে পাঠাচ্ছেন।
×