
ছবি: জনকণ্ঠ
গাছ প্রকৃতিতে এবং মানুষের জীবনে এক অনন্য উপকারী উপাদান। এর ঔষধি, আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত গুরুত্ব বহুমাত্রিক ও প্রশংসনীয়। ঘরবাড়ির আশপাশে নিম গাছ রোপণের কথা পরিবেশবিদরা বারবার বললেও, আমাদের উদাসীনতার কারণে এই গাছটি আজ সংকটের মুখে।
নিমের আন্তর্জাতিক নাম Neem, বৈজ্ঞানিক নাম Azadirachta indica, এবং এটি মালিয়াসি (Meliaceae) পরিবারের অন্তর্গত। এটি ব্যাপকভাবে ঔষধি গাছ হিসেবে পরিচিত হলেও, এর বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে—ডাল, পাতা, কুঁড়ি, বীজের তেল, এমনকি কাঠ—সবই মানবদেহ ও মন সুস্থ রাখতে সহায়ক।
পুরোনো যুগে বাদ্যযন্ত্র নির্মাণেও নিমের কাঠ ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে দরজার কাঠামো, আসবাবপত্র ও জানালার ফ্রেম তৈরিতে এটি জনপ্রিয়।
বহুবর্ষজীবী ও চিরহরিৎ এই গাছ সাধারণত ৪০–৫০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত বেড়ে ওঠে। ডালপালা প্রসারিত হলে কাণ্ডের ব্যাস হয় প্রায় ২০–৩০ ইঞ্চি। প্রতিটি ডালে ১০–১২টি যৌগিক পাতা জন্মায়, যেগুলো খাঁজকাটা ও দাঁতের মতো দেখতে। পাতার দৈর্ঘ্য ২.৪–৪ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং আকৃতিতে সামান্য বাঁকানো।
জুন-জুলাই মাসে নিম গাছে আঙুরের মতো দেখতে ফল ধরে, যার প্রতিটিতে একটি বীজ থাকে। কাঁচা অবস্থায় এই ফল তেঁতো, তবে পাকলে তা হলুদাভ ও কিছুটা মিষ্টি স্বাদযুক্ত হয়। একটি গাছ পূর্ণবয়স্ক হতে প্রায় ১০ বছর সময় নেয় এবং এটি যে কোনো পিএইচ মানের (৬.২–৮.৫) মাটিতে, উন্মুক্ত বাতাসে স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে ওঠে। ১৮–৪৬ ইঞ্চি বার্ষিক বৃষ্টিপাত এবং সর্বোচ্চ ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা এ গাছের জন্য উপযোগী।
নিম ফুলের মধু অন্যান্য সাধারণ ফুলের তুলনায় অধিক পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ। বসন্তকালে এটি বায়ু পরিশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি, মাটি ক্ষয় রোধ, মরুপ্রবণতা হ্রাস, নদীপ্রান্তে ভাঙন ঠেকানো—সব ক্ষেত্রেই এটি উপকারী। প্রসাধনী তৈরিতে, প্রদীপ জ্বালাতে (নিম তেল), কৃমিনাশক হিসেবে (নিম রস), দাঁতের মাড়ি মজবুত করতে (নিম ডাল) এটি বহুল ব্যবহৃত।
নিমের কাঠ পোকামাকড়ে আক্রান্ত হয় না এবং উঁইপোকাও এটি এড়িয়ে চলে, কারণ এর মধ্যে প্রাকৃতিক কীটনাশক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এমনকি উদাসীন পরিবেশেও এটি বংশ বিস্তার করে এবং যত্ন ছাড়াও বেঁচে থাকতে পারে।
তবুও, আমাদের অবহেলা, বন উজাড় ও নগরায়নের কারণে নিম গাছ আজ হুমকির মুখে। তাই সবাইকে সচেতন হয়ে বেশি করে নিম রোপণ করতে হবে, যাতে এই ‘ঔষধি বন্ধু’ আমাদের পাশে থেকে পরিবেশকে রাখে বিশুদ্ধ এবং উপকার করে মানবদেহকে।
মুমু