ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোরবানির বাজারে ভারতকে চাপে ফেলে গরুতে সাফল্যে বাংলাদেশের !

প্রকাশিত: ১২:০৮, ২৮ মে ২০২৫

কোরবানির বাজারে ভারতকে চাপে ফেলে গরুতে সাফল্যে বাংলাদেশের !

ছবি:সংগৃহীত

কোরবানির ঈদ ঘিরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও কূটনীতিতে শুরু হয়েছে এক নতুন অধ্যায়। দেশের শহরজুড়ে বইছে উৎসবের হাওয়া, আর রাজধানীর গাবতলী হাটে দেখা মিলছে বিজয়ের গর্জন। সম্প্রতি এক খামারির কণ্ঠে ভেসে উঠেছে নতুন আত্মবিশ্বাস, "এই যে দাম, এই যে হাটে আমার গরুর কদর, এইটাই ভারতরে বুঝাইয়া দিব!"

 

 

বিষয়টি কেবল একজন খামারির আবেগ নয়, বরং রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, এটি "পশু কূটনীতির বিপ্লব"

 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের কোরবানির ঈদে বাংলাদেশের পশু চাহিদা ছিল প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ। বিস্ময়করভাবে, এই বিপুল সংখ্যক পশুর চাহিদা পূরণ হয়েছে সম্পূর্ণ দেশীয় উৎপাদন থেকে। একটিও ভারতীয় গরুর প্রয়োজন হয়নি, যা ইতিহাসে এই প্রথম।

এই পরিবর্তন এসেছে এক দীর্ঘ পরিকল্পনা ও লুকায়িত অর্থনৈতিক লড়াইয়ের মাধ্যমে।

 

 

বাংলাদেশে গরু পাচার বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, ভারতের সীমান্তবর্তী পশু উৎপাদন অঞ্চলগুলিতে দেখা দিয়েছে তীব্র সংকট। আনন্দবাজার পত্রিকা ও হিন্দুস্তান টাইমস জানাচ্ছে, শুধু পশ্চিমবঙ্গেই গরু বিক্রি না হওয়ার কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৮ হাজার কোটি রুপি।

 

 

পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও আসামের পশু খামারগুলোতে প্রায় ৩০ লাখ গরু অবিক্রিত থেকে গেছে। বাজারে গরুর দাম পড়েছে অর্ধেকে, এবং ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা ক্ষোভে ফুঁসছে।

 

 

দিল্লি স্কুল অফ ইকোনমিক্সের অধ্যাপক শিবাংশু রাও মন্তব্য করেছেন, “বাংলাদেশ এখন কেবল ভারতীয় পশুর বিকল্প নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ মডেল। ভারতের ধর্মীয় সীমাবদ্ধতাকে বাংলাদেশ পরিণত করেছে অর্থনৈতিক শক্তিতে।”

বাংলাদেশের প্রান্তিক অঞ্চল, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জসহ কমপক্ষে ৩০টি জেলা এখন গবাদি পশু উৎপাদনের হাবে পরিণত হয়েছে।

 

 

অনলাইন হাট, স্বাস্থ্য সনদ, ডিজিটাল মূল্য যাচাই, ডোর-টু-ডোর ডেলিভারি, সব মিলিয়ে গবাদি পশু খাত এখন একটি আধুনিক ও স্বনির্ভর শিল্প। চলতি বছর ঈদে এই খাত থেকে অর্থনীতিতে অবদান প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি।

 

সরকারি সূত্র জানায়, ২০২৬ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ গরু রপ্তানিকারক দেশ হতে চায়। ইতোমধ্যে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ওমান এবং কয়েকটি আফ্রিকান দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

চীন ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে হালাল মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র* স্থাপনে আলোচনা চলছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) বলছে, ২০২৭ সালের মধ্যে কেবল গবাদি পশু খাত থেকে *৫০০ মিলিয়ন ডলার* আয় করতে পারবে বাংলাদেশ।

 

 

এখানে বিষয়টি আর কেবল ব্যবসা নয়। এটি *দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যের প্রশ্ন*। বাংলাদেশ একের পর এক ভারতীয় পণ্যের উপর নির্ভরতা কমিয়ে চলেছে, পেঁয়াজ, ওষুধ, গম, নির্মাণসামগ্রী, পশু ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিকল্প উৎস খুঁজে নিচ্ছে।

ভারতের জন্য এটি একটি কৌশলগত সংকেত, তাদের সবচেয়ে লাভজনক পশু বাজারটি হাতছাড়া হয়েছে। সীমান্তে এক বিএসএফ কর্মকর্তার মন্তব্য এখন আলোচনায়, “ওরা আর আমাদের গরু নেয় না, এবার ওরা আমাদের বাজারও নেবে।”

 

 

ঢাকার নীতিনির্ধারকরা জানেন, দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে হলে শুধু গরু উৎপাদন নয়, জিনতত্ত্ব, উন্নত জাতের মালিকানা এবং ভ্যাকসিন উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। “ফেজ টু: লাইফস্টক ভ্যাকসিন ও জেনেটিক অটোনমি” প্রকল্পের আওতায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

 

এই বিপ্লব কেবল অর্থনৈতিক নয়, এটি একটি নতুন জাতীয় আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। 
 

আঁখি

×