
ছবি: সংগৃহীত
স্টিভ বার্নসের তালিকাভুক্ত পাঁচটি বই শুধু পড়ার জন্য নয়, জীবনের গতিপথই বদলে দেওয়ার জন্য। সঠিক সময়ে সঠিক বই পড়া যেমন এক মানুষের মনোজগতে বিপ্লব আনতে পারে, তেমনি সঠিক প্রয়োগ জীবনকে নতুন রূপ দিতে পারে।
১. অ্যাটমিক হ্যাবিটস” – জেমস ক্লিয়ার
২০১৮ সালে প্রকাশিত এই বইটি দেখিয়েছে, বড় পরিবর্তনের জন্য বিশাল পদক্ষেপ নয়, বরং ক্ষুদ্র অভ্যাসই বড় সাফল্যের ভিত্তি। জেমস ক্লিয়ারের মূল বক্তব্য—“প্রতিদিন ১ শতাংশ উন্নতি করলে দীর্ঘমেয়াদে চমকপ্রদ ফল পাওয়া যায়।”
তিনি পরিচয় করিয়ে দেন ‘হ্যাবিট স্ট্যাকিং’পদ্ধতি—অর্থাৎ একটি নতুন অভ্যাসকে পুরনো অভ্যাসের সাথে জুড়ে দেওয়া। যেমন: “কফি বানানোর পর আমি ২ মিনিট মেডিটেশন করব।” এছাড়া তিনি চারটি নিয়ম দেন: স্পষ্ট করা, আকর্ষণীয় করা, সহজ করা এবং সন্তোষজনক করা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল পরিচয়ভিত্তিক অভ্যাস গঠন—“আমি ওজন কমাতে চাই” বলার পরিবর্তে বলা উচিত, “আমি এমন একজন, যে নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবে।”
২. “মাইন্ডসেট” – ক্যারল ডোয়েক
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ডোয়েক দেখিয়েছেন, আমাদের মানসিকতা আমাদের অর্জনের পথে বড় বাধা বা সহায়ক হতে পারে।
ফিক্সড মাইন্ডসেট মানে—“আমি যেমন, তেমনই থাকব।” গ্রোথ মাইন্ডসেট বলে—“আমি চেষ্টা করে আরো ভালো হতে পারি।” ডোয়েক বলেন, “তুমি এটা পারো না” বলার বদলে বলুন, “তুমি এটা এখনো পারো না।” এই “ইয়েট” শব্দটি শেখায় সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে।
বইটি অভিভাবকতা, শিক্ষা, কর্মজীবন—সব জায়গায় মানসিকতা পরিবর্তনের মাধ্যমে উন্নতির কথা বলে।
৩. “অ্যাজ অ্যা ম্যান থিঙ্কেথ” – জেমস অ্যালেন
১০০ বছরেরও পুরোনো হলেও এই বইয়ের প্রাসঙ্গিকতা এখনো অটুট। মূল বার্তা—আপনি যা চিন্তা করেন, আপনি তাই হয়ে ওঠেন।
জেমস অ্যালেন বলেন, চিন্তা হলো চরিত্রের ভাস্কর। ভয়, সন্দেহ বা অলসতা জন্ম দেয় দুর্বল অভ্যাসে; আর সাহস, সংকল্প ও উদ্দেশ্য সৃষ্টি করে শক্তিশালী মানুষ।
এই বই শেখায়, আপনি যদি আপনার চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করেন, তবে আপনি আপনার জীবনও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
৪. “দ্য আলম্যানাক অব নাভাল রবিকান্ত” – এরিক জর্জেনসন
এটি একটি বই নয়, বরং একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ও দার্শনিক নাভাল রবিকান্তের জীবনদর্শনের সারসংকলন—টুইট, পডকাস্ট, ও সাক্ষাৎকার থেকে সংগৃহীত।
তিনি বলেন, ধন মানে এমন সম্পদ যা ঘুমানোর সময়ও আয় করে, আর জ্ঞান মানে এমন কিছু যা অন্য কেউ অনুকরণ করতে পারে না। তার মতে, “দীর্ঘমেয়াদে বিশ্বাসযোগ্য মানুষদের সঙ্গে কাজ করো, কারণ বিশ্বাস হলো প্রকৃত পুঁজি।”
তিনি খুশির কথাও বলেন: “সুখ একটি দক্ষতা, যা চর্চার মাধ্যমে অর্জিত হয়।”
৫. “দ্য পাওয়ার অব নাও” – একহার্ট টোল
এই বই আমাদের শেখায়—প্রকৃত জীবন এখন এই মুহূর্তেই ঘটে। অতীত নিয়ে অনুশোচনা বা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা আমাদের মানসিক যন্ত্রণা বাড়ায়।
এই বই আত্মউন্নয়নকে আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতায় রূপ দেয়। আপনার সম্পর্ক, কাজ, এমনকি চিন্তা করার ধরনও বদলে যেতে পারে।
এই পাঁচটি বই পাঁচটি ভিন্ন পথ দেখায়, কিন্তু উদ্দেশ্য একটাই—ব্যক্তিগত রূপান্তর। ডোয়েক শেখান মানসিকতা বদলের শক্তি, অ্যালেন বলেন চিন্তা গঠন করে ভাগ্য, নাভাল দেখান ধন ও সুখের প্রকৌশল, টোল বলেন—শান্তির পথ হলো বর্তমান, আর জেমস ক্লিয়ার দেখান ছোট অভ্যাস দিয়েই গড়া যায় বড় ভবিষ্যৎ।
মুমু