ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ধা রা বা হি ক

মর্গ স্ট্রিটের হত্যা রহস্য

মূল: এডগার অ্যালান পো, অনুবাদ: খুররম মমতাজ

প্রকাশিত: ২১:৪১, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

মর্গ স্ট্রিটের হত্যা রহস্য

মর্গ স্ট্রিটের হত্যা রহস্য

পূর্ব প্রকাশের পর
বেডরুম দখল করে বসে আছে। তাকে বেডরুমের পাশে একটা খাঁচায় রেখেছিল নাবিক, খাঁচা ভেঙে সে বেরিয়ে পড়েছে। তার হাতে নাবিকের দাড়ি কাটার ধারালো ক্ষুর। ক্ষুর হাতে ওরাং ওটাং আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাড়ি কাটার ভঙ্গি অনুকরণ করছে। নিশ্চয়ই জন্তুটা আগে নাবিককে এই কাজ করতে দেখেছে। হিংস্র জন্তুটার হাতে এই বিপজ্জনক অস্ত্র দেখে নাবিক হতবুদ্ধি হয়ে যায়। অবাধ্য ওরাং ওটাংকে শায়েস্তা করার জন্য একটা চাবুক ছিল। চাবুকটা সে হাতে নেয়। চাবুক দেখা মাত্র জন্তুটি ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে যায়, তারপর খোলা জানালা দিয়ে বাইরে পালায়। 
রাত তখন তিনটা। রাস্তাঘাট সুনসান। ওরাং ওটাংয়ের পিছে পিছে ধাওয়া করতে থাকে নাবিক। জন্তুটা কিছুদূর যায়, থেমে পেছন ফিরে মালিককে দেখে, তারপর আবার ছুটতে থাকে। এভাবে যেতে যেতে তারা পৌঁছায় মর্গ স্ট্রিটে। সেখানে চারতলায় আলো জ্বলছিল। জানালার আলোটা ওরাং ওটাংয়ের মনোযোগ আকর্ষণ করে- সে সেদিকে এগোয়। তরতর করে জন্তুটা রড বেয়ে উঠে যায় ওপরে। জানালার পাল্লা সম্পূর্ণ খোলা ছিল। পাল্লা ধরে দোল খেয়ে ওরাং ওটাং লাফিয়ে নামে জানালায়- সেখান থেকে ঘরের ভেতর। তার পায়ের ধাক্কায় জানালা আবার খুলে যায়। 
নাবিক প্রথমে খুশিই হয়েছিল এ কথা ভেবে যে এবার জন্তুটাকে ধরা যাবে। আবার একটু শংকাও ছিল তার মনেÑ না জানি ঘরের ভেতর কী অঘটন ঘটায় হিং¯্র জন্তুটা। বহুকষ্টে সে রড বেয়ে ওপরে উঠে আসে। তার পক্ষে পাল্লা ধরে ভেতরে ঢোকা সম্ভব হয়নি। এক হাতে রড ধরে অনেকখানি ঝুঁকে ঘরের ভেতরটা সে দেখতে পায়। যে দৃশ্য দেখলো নাবিক, তাতে তার গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেল। মা-মেয়ে খুব সম্ভব লোহার ছোট্ট বাক্সটায় দরকারি কাগজপত্র গুছিয়ে রাখছিল, যখন ওরাং ওটাং ঘরে ঢোকে। 
হঠাৎ ঘরের মধ্যে এ রকম একটা জন্তু দেখে মা-মেয়ে ভয়ে জমে যায়। ওরাং ওটাং এগিয়ে গিয়ে মায়ের চুলের মুঠি চেপে ধরেÑ তার মুখের সামনে ক্ষুর হাতে সে নাপিতের মতো অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে। মহিলা ভয়ে আর ব্যথায় চিৎকার দিতে থাকেন। এতে ল্ডুদ্ধ হয়ে ওঠে ওরাং ওটাং, ভীত মহিলা জন্তুটার হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন প্রাণপণেÑ তখন সে মহিলার মাথার খুলি থেকে চুল উপড়ে নেয় এবং একটানে তার গলা কেটে ফেলে। 
এই দৃশ্য দেখে সভয়ে চিৎকার দেয় মেয়েটি। ল্ডুদ্ধ ওরাং ওটাং এক লাফে এগিয়ে গিয়ে এবার মেয়ের গলা চেপে ধরে। মেয়েটিও মারা যায়। এমন সময় পেছন ফিরে জানালার বাইরে তার মালিকের মুখ দেখতে পায় ওরাং ওটাং। চাবুকের কথা তার মনে পড়ে যায়Ñ ভয়ে সে ঘরময় ছুটোছুটি করতে থাকে, সবকিছু এলোমেলো করে দেয়, বিছানা টেনে নামায়। এবং শেষে তার অপকর্ম লুকানোর জন্য মেয়েটির মৃতদেহ চিমনির ভেতরে ঠেসে দেয় সে, মহিলার মৃতদেহটা জানালা দিয়ে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে। এই পর্যন্ত দেখে ভীত, সন্ত্রস্ত, আতঙ্কিত নাবিক পিছলে নেমে যায় রড বেয়ে। তারপর সোজা নিজের বাড়ি। 
এরপর আর কিছু যোগ করার থাকে না। বোঝাই যাচ্ছে, ঘরের দরজা ভাঙার শব্দ পেয়ে জন্তুটা জানালা দিয়ে বেরিয়ে রড বেয়ে নিচে নেমে পালিয়েছে। তার পায়ের ধাক্কায় জানালার পাল্লা আবার অটোলক হয়ে গেছে। আর যে দুটো কণ্ঠস্বর শোনা গেছে তার একটা এই ফ্রেঞ্চ নাবিকের ভয়ার্ত কণ্ঠস্বর, অন্যটা ওরাং ওটাংয়ের। 
পলাতক ওরাং ওটাংটা কিছুদিনের মধ্যে ধরা পড়েছিল তার মালিকের হাতে। জন্তুটাকে সে চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষের কাছে বিল্ডি করে দেয়, মোটা টাকার বিনিময়ে। নিরপরাধ কেরানি এডলফ বোঁ মুক্তি পায়। সেজন্য অবশ্য দুপঁকে থানায় গিয়ে ঘটনা ব্যাখ্যা করতে হয়েছে। থানার দারোগা দুপঁকে ধন্যবাদ দেওয়ার বদলে উল্টে কিছু কথা শুনিয়ে দিল। ব্যঙ্গ করে বললো- মানুষের উচিত যার যার নিজের চরকায় তেল দেওয়া- অন্যের ব্যাপারে নাক না গলানোই ভালো। 
‘বলুক যা খুশি।’ থানা থেকে বেরিয়ে মন্তব্য করলো দুপঁ। ‘এসব বলে পরাজয়ের জ্বালা যদি জুড়ায় বেচারার...জুড়াক।’

×