মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, দাঁতের ক্ষয়: ওজেম্পিক-উইগোভির ভয়ঙ্কর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ওজন কমানোর জাদুকরী ওষুধ হিসেবে পরিচিত ওজেম্পিক ও উইগোভি নিয়ে চিকিৎসা বিশ্বে আলোড়ন থাকলেও, এবার এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সামনে এলো উদ্বেগজনক তথ্য। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এই ওষুধগুলোর নিয়মিত ব্যবহার শুধু মুখের সৌন্দর্যকেই প্রভাবিত করছে না, বরং দাঁত ও মুখগহ্বরে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

মুখে ‘শুকনো মরুভূমি’: লালার স্বল্পতায় ভোগান্তি

ওজেম্পিক ও উইগোভির সক্রিয় উপাদান সেমাগ্লুটাইড মুখে লালার নিঃসরণ কমিয়ে দেয়, যার ফলে মুখ শুকিয়ে যায় — চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে বলা হয় ‘জিরোস্টোমিয়া’। গবেষণায় উঠে এসেছে, এই ওষুধ লালাকে ঘন ও আঠালো করে তোলে, ফলে মুখে আর্দ্রতা বজায় থাকে না। পানি পানের ইচ্ছেও কমে যায়, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে।

নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধের শিকার!

লালা কমে গেলে মুখে ব্যাকটেরিয়া বেড়ে যায়, যেগুলো দুর্গন্ধ এবং দাঁতের ক্ষয়ের জন্য দায়ী। বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখের লালার অভাবে ব্যাকটেরিয়ার আস্তানা তৈরি হয় জিহ্বায়, যা ‘মর্নিং ব্রেথ’-এর মতো দুর্গন্ধ ছড়ায়। এমনকি অনেক ব্যবহারকারীর জিহ্বায় দেখা গেছে সাদা আবরণ — যা ব্যাকটেরিয়ার অতিরিক্ত উপস্থিতির লক্ষণ।

দাঁতের ক্ষয়: বমির প্রভাবে মারাত্মক ক্ষতি

ওজেম্পিক ও উইগোভির আরেকটি পরিচিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো বমি। এই ওষুধ পাকস্থলীর খাদ্য খালি হওয়ার গতি কমিয়ে দেয়, ফলে বমি বা বমি ভাব দেখা দেয়। বারবার বমির কারণে মুখে থাকা অ্যাসিড দাঁতের এনামেল ক্ষয় করে ফেলে, বিশেষ করে জিহ্বার দিকের দাঁতের অংশে। এই ক্ষয় অনেক সময় রোগীর চোখে ধরা পড়ে না, কিন্তু তা স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে।

কীভাবে রক্ষা পাবেন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত পানি পান করা, দিনে ৬-৮ গ্লাস পানি খাওয়া এবং সুগার-ফ্রি চুইংগাম চিবানো লালা তৈরিতে সহায়ক হতে পারে এবং খারাপ নিঃশ্বাস রোধে কার্যকর হতে পারে। পাশাপাশি, দই বা কেফিরের মতো প্রোবায়োটিক খাবার খাওয়াও উপকারী হতে পারে।

মুখ পরিষ্কার রাখা, দাঁত ব্রাশ করা, অ্যাসিডিক খাবার কম খাওয়া, মাউথওয়াশ ব্যবহার এবং মুখ শুকিয়ে গেলে তাৎক্ষণিক পানি দিয়ে কুলি করাও খুব জরুরি।

নারী ব্যবহারকারীদের জন্য সতর্কতা

গবেষণায় দেখা গেছে, ওজেম্পিক বা উইগোভি ব্যবহারে নারীদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ। বিশেষ করে বমি বা হজম সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাই নারীদের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে খাবার পরিমাণ কমিয়ে বারবার খাওয়া উচিত।

ওষুধ বন্ধ করলে কি উপশম হবে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখের এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো ওষুধ বন্ধ করলে কমে আসলেও দাঁতের ক্ষয় যে হয়েছে, তা থেকে মুক্তি নেই। হজমজনিত সমস্যা সাধারণত কিছুদিন পর স্বাভাবিক হয়ে যায়, তবে উচ্চ মাত্রার ডোজে সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

সূত্র: দ্য কনভারসেশন।