
গ্রীষ্ম মানেই লিচুর মৌসুম। এই রসালো, মিষ্টি ফলটি যেমন খেতে দারুণ, তেমনি কখনও কখনও হতে পারে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণও। বাজারে বাড়তি চাহিদা মেটাতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লিচুতে ব্যবহার করছেন রঙ, মোম ও নানা রাসায়নিক, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তবে একটু সচেতন হলেই ঘরে বসেই আপনি সহজ কৌশলে আসল-নকল লিচু আলাদা করে নিতে পারেন।
চকচকে লিচু নয়, নজর দিন প্রকৃত রঙে
আসল লিচুর খোসা কিছুটা অসমান রঙের হয়। এতে একসাথে লাল, গোলাপি, হালকা সবুজ এবং বাদামি শেড দেখা যায়। যদি দেখেন লিচুগুলো অস্বাভাবিক উজ্জ্বল, একেবারে সমান লাল বা অতিরিক্ত চকচকে, তবে বুঝে নিন এগুলোতে কৃত্রিম রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকৃত লিচুর রঙ কখনওই নিখুঁত বা 'নিওন রেড' হয় না।
স্পর্শে বোঝার কৌশল: খোসা হওয়া উচিত খসখসে, নয় পিচ্ছিল
আসল লিচুর খোসা কিছুটা মোটা ও টেক্সচারযুক্ত, ছোঁয়ার পর খসখসে অনুভূত হয়। যদি লিচু স্পর্শে অস্বাভাবিক মসৃণ বা পিচ্ছিল মনে হয়, বুঝবেন এতে মোম বা তেল ব্যবহার করা হয়েছে। এটি লিচুকে কৃত্রিমভাবে টাটকা দেখানোর একটি পরিচিত প্রতারণা কৌশল।
পানিতে ডুবিয়ে পরীক্ষার সহজ উপায়
কয়েকটি লিচু এক বাটিতে পানি দিয়ে ফেলুন। প্রাকৃতিকভাবে পাকা লিচু সাধারণত ডুবে যায় অথবা ধীরে ভেসে ওঠে। কিন্তু যদি পানি রঙ পরিবর্তন করে, যেমন লালচে বা গোলাপি হয়ে যায়, বা লিচুগুলো অদ্ভুতভাবে ভেসে থাকে, তবে ধরে নেওয়া যায় এতে রঙ বা রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে।
ঘ্রাণেই ধরা পড়বে কেমিক্যালযুক্ত ফল
টাটকা লিচুতে মৃদু মিষ্টি ও ফলের ঘ্রাণ থাকে। কিন্তু যদি ঘ্রাণে পেট্রোল, কেরোসিন বা রঙের গন্ধ আসে, বুঝে নিন তা কেমিক্যাল মেশানো। এমন গন্ধযুক্ত লিচু খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
ভেতরের দিকেও নজর দিন: কেটে দেখুন কী আছে ভিতরে
একটি লিচু কেটে তার গঠন দেখুন। প্রকৃত লিচুর ভেতর হবে সাদা, স্বচ্ছ, রসালো ও সুগন্ধিযুক্ত। যদি দেখেন ভেতরের অংশ লালচে, শুকনো বা বিবর্ণ, তবে বুঝে নিন ফলটি রঙ বা কেমিক্যালে প্রভাবিত হয়েছে। এমনকি যদি ভিতরের অংশ অস্বাভাবিকভাবে শক্ত বা রাবারের মতো হয়, সেটিও নকল বা কৃত্রিমভাবে প্রস্তুতকৃত লিচুর লক্ষণ।
টিস্যু বা তুলার বল দিয়ে ঘষে দেখুন
একটি ভেজা টিস্যু বা তুলার বল নিয়ে লিচুর খোসা ঘষে দেখুন। যদি রঙ উঠে আসে, তবে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় এটি কৃত্রিম রঙে রাঙানো। এই পদ্ধতি বিশেষভাবে কার্যকর যদি আপনি একসঙ্গে অনেক লিচু কিনে থাকেন।
মৌসুমের বাইরে পাওয়া লিচু থেকে সাবধান
লিচু সাধারণত মে থেকে জুলাই মাসে পাওয়া যায়। এই সময়ের বাইরে যেসব লিচু বাজারে আসে, সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই রাসায়নিক সংরক্ষিত বা কৃত্রিমভাবে পাকানো হতে পারে। তাই সবসময় মৌসুমি ফলই কেনা নিরাপদ, সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যসম্মত।
ভরসাযোগ্য উৎস থেকে কিনুন এবং সচেতন থাকুন
নকল বা ভেজাল লিচু এড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো পরিচিত, নির্ভরযোগ্য বিক্রেতা বা স্থানীয় কৃষকের বাজার থেকে কেনা। অর্গানিক বা সার্টিফায়েড বিক্রেতার কাছ থেকে কেনা ফল সাধারণত নিরাপদ হয়। পাশাপাশি নিজ এলাকায় খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য জানুন এবং পরিচিতদের মধ্যেও সচেতনতা ছড়িয়ে দিন।
প্রতিটি কামড়ে হোক নিরাপদ পছন্দ
লিচু নিঃসন্দেহে গ্রীষ্মের একটি প্রিয় ফল, কিন্তু প্রতারণামূলক উপায়ে প্রক্রিয়াজাত ফল খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে মারাত্মক। তাই নিজের ও পরিবারের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে বাজার থেকে ফল আনার আগেই কিছু সহজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিন। কারণ স্বাস্থ্য রক্ষা শুরু হয় বাজারের ব্যাগেই আর সচেতনতাই এর প্রথম পদক্ষেপ।
সূত্র:https://tinyurl.com/mr48t25j
আফরোজা