ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জীবনে টিকে থাকার জন্য যে দক্ষতাগুলো এখনই জেন-জি’দের শেখা উচিত

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২৬ মে ২০২৫

জীবনে টিকে থাকার জন্য যে দক্ষতাগুলো এখনই জেন-জি’দের শেখা উচিত

ছবি:সংগৃহীত

টায়ার বদলাতে জানো? কিংবা বুঝতে পারো কীভাবে বাসা ভাড়া দিতে হয়, বা ব্যাংকের সুদের হিসাব চলে? অনেকেই হয়তো মাথা নাড়বেন—“না, ঠিক জানি না।” আর ঠিক এখানেই এসে পড়ছে ‘Adulting 101’ নামের এক উদ্যোগ।

টরন্টোর মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষের ছাত্র আলধেন গার্সিয়া বলছেন, “গাড়ি চালাই না, তাই টায়ার বদলানোর দরকার হয়নি। সেলাই পারি না। রান্না কিছুটা জানি, কিন্তু আর কিছু শেখার বাকি অনেক কিছু।” তার সবচেয়ে বড় চিন্তা? টাকার হিসাব। “মার্টগেজ, সুদের হার, বাসাভাড়া—সব কিছুতেই তো টাকার যোগ! অথচ এগুলো শিখিনি কোথাও।”

এই অভিজ্ঞতা একেবারে অচেনা নয়। ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটির ছাত্র-সাফল্য বিভাগের প্রধান পাম শার্বোনো বলেন, “এই দুশ্চিন্তা একা গার্সিয়ার নয়, তার মতো অনেকেই আছে। এটা একদম স্বাভাবিক।”

জীবনের পাঠ, শুধু বইয়ের মধ্যে নয়
যে কারণে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এখন উদ্যোগ নিচ্ছে ছাত্রদের এই 'জীবনের জন্য দরকারি' দক্ষতা শেখাতে।
২০২৩ সালে ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটি চালু করে ‘Adulting 101’—একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শেখানো হয় কিভাবে গ্যাসের বিল দিতে হয়, পুষ্টিকর খাবার চেনা যায়, বাজার করা যায়, হালকা রোগে কী করতে হয়, এমনকি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে কী জানা দরকার।

শুধু ওয়াটারলুই নয়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ও এখন অর্থনীতি, ক্যারিয়ার প্ল্যানিং, প্রথম চিকিৎসা বা নিজের যত্ন নেওয়ার মতো বিষয় নিয়েও ওয়ার্কশপ চালাচ্ছে।

তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী বেলা হাডসন বললেন, “স্কুলে তো পড়া শেখানো হয়, কিন্তু জীবনে নিজেকে চালানো শেখানো হয় না। আমি চাই, এমন ক্লাস থাকুক যেখানে শেখা যাবে কিভাবে নিজের জীবনটা সামলাতে হয়।”

'বড় হওয়া' মানে শুধু বয়স নয়
এই প্রজন্মকে নিয়ে গবেষণা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানী জিন টোয়েঞ্জ। তার মতে, ‘জেনারেশন জেড’—যারা ১৯৯৭ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে জন্ম নিয়েছে—তারা অনেকটাই নির্ভরশীল পরিবেশে বড় হয়েছে।

“এখনকার বাচ্চারা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পায় না। এমনকি অনেক সময় স্কুল শেষ করেও তারা জানে না কীভাবে রান্না করতে হয় বা নিজের ব্যাংক হিসাব সামলাতে হয়,” বলেন টোয়েঞ্জ।

তার মতে, এই ‘সবকিছু মা-বাবার উপর ছেড়ে দেওয়া’ ধারা এক ধরণের ক্ষতি করছে। বাচ্চারা যত বেশি সময় অভিভাবকদের উপর নির্ভর করে, তারা তত দেরিতে স্বাধীন হয়ে ওঠে—তাদের ক্যারিয়ার শুরু করতে দেরি হয়, বিয়ে করতে দেরি হয়, এমনকি মানসিকভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতেও অসুবিধা হয়।

কানাডার সরকারি তথ্য বলছে, ২০০১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে বাবা-মার সঙ্গে বসবাসের হার ৩৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

মাথার বোঝা হালকা করার জন্য শেখার সুযোগ
টোয়েঞ্জ বলেন, “জীবনের এসব দরকারি বিষয় আগে থেকেই শেখানো উচিত। অভিভাবকদের উচিত বাচ্চাদের হাতে রান্না, কাপড় ধোয়া, গ্যাস বিল দেওয়া—এসব ছোট কাজ তুলে দেওয়া।”

আর এসব না শেখানোর সবচেয়ে বড় মূল্যটা দিতে হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য দিয়ে। দ্য জার্নাল অফ পেডিয়াট্রিকস-এর এক রিপোর্ট বলছে—যেখানে শিশু-কিশোরদের স্বাধীনভাবে কিছু করার সুযোগ কম, সেখানেই মানসিক অসুস্থতার হার বেশি।

ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটির ‘Adulting 101’ শুধু দৈনন্দিন কাজ শেখায় না—শেখায় নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া, মানসিকভাবে সুস্থ থাকার পদ্ধতি এবং নিজের অবস্থান বুঝে নিতে শেখা।

শার্বোনো বলেন, “যখন শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে—ওদের সমস্যা নিয়ে ভাবার মতো কেউ আছে, সাহায্য করার মতো কেউ আছে—তখনই ওদের মধ্যে স্বস্তির অনুভব আসে। যেন দীর্ঘদিনের টেনশন এক মুহূর্তে কাঁধ থেকে নেমে যায়।”

 

মারিয়া

×