ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সাহসিকতাই ভবিষ্যতের পথ

নেতৃত্ব মানে ঝুঁকি নেওয়া, নীরবতা নয়

প্রকাশিত: ০১:০৪, ১৮ মে ২০২৫

নেতৃত্ব মানে ঝুঁকি নেওয়া, নীরবতা নয়

ছবিঃ সংগৃহীত

নিউ ইয়র্ক রিবুট (Reboot) কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও জেরি কোলোনা সম্প্রতি তার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধে বর্তমান যুগের নেতাদের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন যা হলো “যখন অন্যরা চুপ থাকে, তখন নেতৃত্ব মানেই মুখ খোলা।”

যেখানে কোলোনা বিশ্লেষণ করেন কিভাবে আধুনিক নেতৃত্বের একটি অপরিহার্য দিক হলো নৈতিক সাহস অর্থাৎ যখন পরিস্থিতি কঠিন, যখন অস্পষ্টতা বা সংকট উপস্থিত, তখন দায়িত্বশীলভাবে এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কথা বলা।

কোলোনা তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, আজকের বিশ্বে প্রায় প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো রকমের সংকটে ভুগছে হোক তা রাজনৈতিক, আদর্শিক বা ব্যক্তিগত। এই প্রেক্ষাপটে কর্পোরেট নেতাদের কাজ শুধুমাত্র কোম্পানি পরিচালনা নয়, বরং কর্মীদের মানবিক অবস্থাকে বুঝে সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানানো।

তিনি বলেন, "নেতৃত্বের মানে হলো কঠিন সময়ে সাহস করে কথা বলা।"

তিনি একটি সাম্প্রতিক ঘটনার কথা বলেন, যখন তিনি নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্টার্ন স্কুল অফ বিজনেসে “Purpose & Flourishing” শীর্ষক একটি আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনার শুরুতে যখন উদ্যোক্তা ও ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, কোলোনা আগে পরিবেশ বুঝে সেখানে উপস্থিতদের মানসিক অবস্থা স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক বা আদর্শিক অবস্থান যাই হোক না কেন, এই মুহূর্তে অর্ধেক পৃথিবীর মানুষ নিজেদের বিপন্ন বোধ করছে। তারা মনে করছে তাদের অস্তিত্ব, তাদের পরিচয় হারিয়ে যাচ্ছে।”

এই বক্তব্যের পর ঘরে নেমে আসে একপ্রকার স্বস্তির নিঃশ্বাস একটা বোঝাপড়ার মুহূর্ত। কোলোনা জানান, এরপর আলোচনা হয় অনেক বেশি খোলামেলা, মানবিক এবং গভীরভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

নেতৃত্বের নৈতিক ভিত্তি কোলোনা তার আলোচনায় তুলে ধরেন নৈতিকতা, সহমর্মিতা, ও সত্য স্বীকার করার ক্ষমতা নেতৃত্বের মূল শক্তি। তিনি মনে করেন, সত্যকে না দেখে বা এড়িয়ে গিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানে সত্যিকার উন্নয়ন সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, “যদি কর্মীরা দেখে যে তাদের কষ্ট, তাদের দুঃশ্চিন্তা, বা সমাজের চলমান সংকটগুলো প্রতিষ্ঠান উপেক্ষা করছে, তাহলে তারা নিজেদের আলাদা মনে করবে। তারা শুধু একটা চাকরি করবে মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করবে না।”

নেতৃত্বে কথা বলার চারটি দিক কোলোনা নেতাদের জন্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন যেগুলো তারা বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারেন:

যখন চুপ থাকা সহজ মনে হয়, তখনই কথা বলা জরুরি।

সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ই প্রকৃত নেতৃত্বের প্রকাশ ঘটে।

সরাসরি কষ্ট বা সমস্যা স্বীকার করুন।

অ্যালুড বা ইঙ্গিত নয়, সমস্যার আসল রূপটি নাম নিয়ে বলা জরুরি।

লোকজনকে দেখান যে তারা একা নয়।

কর্মীদের অনুভব করান যে তারা দেখা ও শোনা হচ্ছে।

আলোচনার জায়গা তৈরি করুন।

কথা বলার সুযোগ দিন—শুধু নিজের মত চাপিয়ে না দিয়ে আলোচনা উন্মুক্ত রাখুন।

এই উপাদানগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ হয়ে ওঠে শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক। নেতা হিসেবে নীরবতা নয়, কণ্ঠই দায়িত্ব
কোলোনা তার বই Reunion থেকে উদ্ধৃত করেন, “অন্যায়ের মুখে নীরবতা মানেই সহঅপরাধ। আর কষ্টের মুখে নীরবতা কখনও কখনও নিষ্ঠুরতা।”

তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে নেতাদের নিরপেক্ষতা নয়, পক্ষ নেওয়া প্রয়োজন। কারণ প্রতিষ্ঠান বা দল যখন জানে তাদের নেতা কষ্ট বুঝতে পারেন এবং মুখ খুলে বলেন, তখন কর্মীদের মধ্যে নিরাপত্তা, আস্থা এবং অন্তর্ভুক্তির অনুভব জন্মায়।

নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ হলো মানবিকতা যেখানে সামাজিক সংকট ও রাজনীতিক বিভাজন গভীর হচ্ছে, সেখানে নেতৃত্ব মানে কেবল কৌশলগত সিদ্ধান্ত নয়—মানে মানবিকভাবে সামনে আসা, সত্য বলা, এবং কষ্ট ভাগ করে নেওয়া।

“নেতা হিসেবে আপনার কণ্ঠ একটি উপহার। এটি ব্যবহার করুন,” এই লাইনেই কোলোনার বার্তার সারমর্ম নিহিত। প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে সেই কণ্ঠের উপর যেটি নীরব না থেকে সাহসের সঙ্গে সত্য বলে।

নোভা

×