ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নির্বিঘ্ন ঘুম, প্রশান্ত মন ও প্রোডাকটিভ সকাল 

রাতের এই ছোট অভ্যাসগুলোই বদলে দিতে পারে আপনার দিন 

প্রকাশিত: ২১:২৮, ১৬ মে ২০২৫

রাতের এই ছোট অভ্যাসগুলোই বদলে দিতে পারে আপনার দিন 

ছবিঃ সংগৃহীত

সুখী এবং ইতিবাচক এক সকাল শুধুমাত্র ভালো ঘুম দিয়েই শুরু হয় না। দিনের শুরুটা কতটা সুন্দর হবে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে আপনি আগের রাত কিভাবে কাটালেন তার ওপর। রাতের একটি শান্ত ও পরিকল্পিত রুটিন আপনার ঘুম এবং পরদিনের মানসিক স্বাস্থ্য উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা সন্ধ্যার পরের সময়টাকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে আপনি নিজেকে আরও সুখী এবং স্থির মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন, তা নিয়ে আলোচনা করেছে। নিচে বিশেষজ্ঞদের দেওয়া ছয়টি কার্যকর রাত্রিকালীন অভ্যাসের বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো- 

রাতের হালকা হাঁটা দিনকে গুছিয়ে নিতে সাহায্য করে
সন্ধ্যার পর কিংবা রাতের খাবারের পরে চারপাশে হালকা হাঁটা আপনার মন ও শরীরকে প্রশান্ত করে। যুক্তরাজ্যের মনোবিজ্ঞানী লি চেম্বার্স বলেন, রাতে হাঁটার সময় মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ে, যা দিনের চিন্তা ও অনুভূতিগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করতে সাহায্য করে।

ফোনকে সরিয়ে রাখুনঃ ঘুমের আগে স্ক্রিন বন্ধ করুন
ঘুমের আগে ফোন বা স্ক্রিন ব্যবহারে মানসিক উত্তেজনা ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, যার ফলে পরদিন মেজাজ খারাপ হতে পারে। ঘুমানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে স্ক্রিন ব্যবহার বন্ধ করুন। মোবাইল ফোন বিছানা থেকে দূরে রাখুন। অ্যালার্মের জন্য একটি পুরনো ধাঁচের ঘড়ি ব্যবহার করতে পারেন।

গরম পানি দিয়ে স্নান বা গোসল দিনকে শান্তির দিকে নিয়ে যায়
মনোবিজ্ঞানী জাস্টিন গ্রসো বলেন, শরীরকে সম্পূর্ণভাবে পানিতে ডুবিয়ে রাখা (যেমন — বাথটাবে গোসল) হতাশা কমায়, ঘুমের মান বাড়ায় এবং হৃদযন্ত্রের উপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যদি বাথটাব না থাকে? তবে গরম পানিতে হালকা গোসলও উপকারী।
স্লিপ বিশেষজ্ঞ রবার্ট ওএক্সম্যান জানান, “রাতের গোসল শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয়।” গরম পানির গোসল শরীরকে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে তোলে।

বডি স্ক্যান মেডিটেশন আপনাকে ভিতর থেকে শান্ত করে
কর্টল্যান্ড ডাল, উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের Center for Healthy Minds-এর গবেষক, বলেন, “আপনি যখন শুয়ে শুয়ে মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত শরীরের প্রতি অংশে মনোযোগ দেন, তখন আপনি শরীরের চাপ ও উত্তেজনা থেকে মুক্তি পান।” প্রতিটি অঙ্গের অনুভূতিতে মন দিন—উষ্ণতা, জড়তা বা আরাম বিচারবিহীনভাবে। এটি আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক ভারসাম্য তৈরি করে। এছাড়া ইয়োগা নিদ্রা হলো ধ্যানের এক রূপ। হালকা স্ট্রেচিং “রেস্ট অ্যান্ড ডাইজেস্ট” সিস্টেম সক্রিয় করে, মানসিক চাপ কমায়। 

দিন শেষে নিজের অগ্রগতি নিয়ে ভাবুন
আমরা অনেকেই দিন শেষে কাজের তালিকায় বাকি থাকা জিনিস নিয়ে বেশি চিন্তা করি। কিন্তু যত ছোট হোক না কেন, আপনার প্রতিটি অগ্রগতি লক্ষ করুন। আজ কী শিখলেন? কী বাধা কাটিয়ে উঠলেন? আপনি কীভাবে এগোলেন? কঠিন মুহূর্তগুলোকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখুন। এতে আপনি পরের দিন আরও সচেতন ও ইতিবাচক মন নিয়ে দিন শুরু করতে পারবেন।

রাত শেষ করুন কৃতজ্ঞতার অনুভূতির মধ্য দিয়ে
ঘুমানোর আগে তিন থেকে পাঁচটি বিষয়ের তালিকা করুন, যেগুলোর জন্য আপনি কৃতজ্ঞ। ক্যালিফোর্নিয়ার মনোবিজ্ঞানী রবার্ট এমন্স দেখিয়েছেন, এই অভ্যাস জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে। আপনার আশেপাশের আশীর্বাদগুলো লিস্ট করুন। এটি চাপ কমায় এবং মানসিক সুস্থতা বাড়ায়।

রাতের সময় নিজেকে যত্ন নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে সকালে আপনি আরও বেশি সুখী, সতেজ ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকবেন। এসব অভ্যাস কঠিন নয় — কিন্তু নিয়মিত অনুশীলনে জীবনের মান বদলে দিতে পারে।

নোভা

×