ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভারতকে নিউক্লিয়ার অস্ত্রভাণ্ডার সামলে রাখতে বললো পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ১৭ মে ২০২৫

ভারতকে নিউক্লিয়ার অস্ত্রভাণ্ডার সামলে রাখতে বললো পাকিস্তান

ছবি : সংগৃহীত

ভারতে পারমাণবিক ও তেজস্ক্রিয় পদার্থ চুরির একাধিক ঘটনার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির দাবি, এসব ঘটনায় ভারতের পারমাণবিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুতর দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই আহ্বান জানায় এবং আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-কে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার অনুরোধ জানায়।

 

 

পাকিস্তান বলছে, ভারতে পরপর যেসব তেজস্ক্রিয় পদার্থ চুরির ঘটনা ঘটেছে, তা শুধু আঞ্চলিক নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ। বিবৃতিতে বলা হয়, "IAEA এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই পুনরাবৃত্তি হওয়া ঘটনাগুলোর প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা।"

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের এক সাম্প্রতিক বক্তব্য, যেখানে তিনি পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার IAEA-এর নজরদারিতে আনার আহ্বান জানান, তার জবাবে পাকিস্তান এই প্রতিক্রিয়া জানায়। ইসলামাবাদ ওই মন্তব্যকে 'IAEA-এর কর্তৃত্ব ও ভূমিকা সম্পর্কে অজ্ঞতা' বলে আখ্যায়িত করেছে।

পাকিস্তান আরও বলেছে, “ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের প্রতিরোধক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ বা প্রশ্ন তোলা তাদের নিজস্ব নিরাপত্তাহীনতা ও হতাশারই বহিঃপ্রকাশ।”

 

 

ভারতে পারমাণবিক পদার্থ চুরির বেশ কিছু ঘটনা তুলে ধরেছে পাকিস্তান। ২০২৩ সালে উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে পাঁচজনকে একটি তেজস্ক্রিয় যন্ত্রসহ আটক করা হয়, যার উৎস ভারতের ভাভা অ্যাটমিক রিসার্চ সেন্টার বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ক্যালিফোর্নিয়াম নামক উচ্চ-মূল্যবান একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ উদ্ধার করা হয়, যার বাজারমূল্য ১০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। ২০২১ সালেও ক্যালিফোর্নিয়াম পাচারের অন্তত তিনটি ঘটনা ঘটে।

এই ধরনের পুনরাবৃত্তি হওয়া ঘটনায় পাকিস্তান আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, “ভারতের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এবং কালোবাজারের সক্রিয় উপস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।”

 

 

জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত সংস্থা IAEA মূলত সদস্য দেশগুলোর বেসামরিক পারমাণবিক কর্মসূচির নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের নিশ্চয়তা প্রদান করে। যদিও ভারতের বেসামরিক পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ২০০৮ সালের এক চুক্তির আওতায় IAEA-এর নজরদারিতে রয়েছে, তবে ভারতের কৌশলগত পারমাণবিক কর্মসূচি এই নজরদারির আওতার বাইরে।

 

 

 

এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন সাম্প্রতিক পেহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছিল। হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোকেই দায়ী করে। সীমান্তে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়।

যুদ্ধবিরতির পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “ভারত কোনো ধরনের পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল মেনে নেবে না এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” এর পাল্টা জবাবে পাকিস্তান বলেছে, “ভারতের হুমকি পাকিস্তানের সুশৃঙ্খল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভয় পাওয়ারই প্রমাণ।”
 

আঁখি

×