ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

‘৮টি বাক্য’ যা সাথে সাথেই প্রকাশ করে যে আপনি মার্জিত ও পরিশীলিত নন

প্রকাশিত: ১৮:৪৮, ৮ মার্চ ২০২৫

‘৮টি বাক্য’ যা সাথে সাথেই প্রকাশ করে যে আপনি মার্জিত ও পরিশীলিত নন

ছবি: সংগৃহীত।

আপনি কি কখনও এমন কাউকে দেখেছেন যিনি সবদিক থেকেই পরিপাটি ও মার্জিত মনে হয়? এটি শুধুমাত্র তাদের পোশাক বা আচরণের কারণে নয়—তারা কীভাবে কথা বলেন, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা যে শব্দগুলো ব্যবহার করি, সেগুলো আমাদের সম্পর্কে অনেক কিছু বলে। কিছু শব্দ ও বাক্য আমাদের পরিশীলিত, বুদ্ধিদীপ্ত ও সংবেদনশীল করে তোলে, আবার কিছু ঠিক বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।

যদি আপনি বুদ্ধিমান, পরিশীলিত এবং আত্মসচেতন হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে চান, তবে কিছু কথা বলা এড়িয়ে চলা উচিত। এখানে এমন ৮টি বাক্য রয়েছে, যা শুনলেই বোঝা যায় যে কেউ মার্জিত নন।

১) “I don’t care” (আমি তো কিছু মনে করি না)

খোলাখুলিভাবে বলা যে আপনি কিছু নিয়ে ভাবেন না বা কিছু যায় আসে না—এটি অমার্জিত হওয়ার একটি স্পষ্ট লক্ষণ, বিশেষ করে যখন কথোপকথনে সৌজন্যের প্রয়োজন হয়।

ধরুন, কেউ আপনাকে কোথায় খেতে যাবেন বা কোন সিনেমা দেখবেন জিজ্ঞাসা করল, আর আপনি বললেন, "I don’t care". এটি আপনাকে উদাসীন ও অমনোযোগী করে তোলে।

একটি পরিশীলিত উত্তর হতে পারে, "আমি যে-কোনো কিছুতে রাজি, আপনার কোনো পছন্দ আছে কি?" এটি কথোপকথনকে সহজ ও স্বাভাবিক রাখে এবং আপনাকে বিনয়ী ও আন্তরিক করে তোলে।

২) "Whatever" (যাই হোক)

"Whateve" বলাটা অনেক সময় নির্লিপ্ত, অবহেলাসূচক এবং কিছুটা শিশুসুলভ মনে হয়।

যদি কাউকে কিছু বলার পর বারবার "যাই হোক" বলে প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়, তাহলে এটি কথোপকথনের প্রতি অনীহা প্রকাশ করে এবং অশ্রদ্ধাজনক মনে হতে পারে।

এর পরিবর্তে আপনি বলতে পারেন, "আমি আপনার ওপর ছেড়ে দিচ্ছি" বা "আমি পরামর্শ শুনতে আগ্রহী"—যা কথোপকথনকে আরও ইতিবাচক ও সংবেদনশীল করে তোলে।

৩) “It’s not my fault” (এটা আমার দোষ না)

নিজের ভুলের দায় না নেওয়া এবং সবসময় অন্যকে দোষারোপ করা আপনাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অপরিণত দেখায়।

পরিশীলিত মানুষ জানেন যে ভুল করা দোষের কিছু নয়, বরং ভুল স্বীকার করে সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

এর পরিবর্তে আপনি বলতে পারেন, "আসুন দেখি কীভাবে এটি ঠিক করা যায়" বা "আমি যে অংশটি সামলাতে পারি, সেটি দেখছি"—যা আপনাকে দায়িত্ববান ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

৪) “I’m just being honest” (আমি তো শুধু সত্য বলছি)

সত্য বলা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এটিকে অমার্জিত আচরণের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক নয়।

কেউ যদি কঠোর বা অপ্রয়োজনীয় কিছু বলে এবং তারপরে বলে "আমি তো শুধু সত্য বলছি", তাহলে এটি আসলে সংবেদনশীলতার অভাব প্রকাশ করে।

পরিশীলিত মানুষ জানেন কীভাবে সত্য বলতে হয় বিনয়ের সঙ্গে, যাতে এটি গঠনমূলক ও সহানুভূতিশীল শোনায়।

৫) “That’s not my job” (এটা আমার কাজ না)

যেকোনো দায়িত্ব বা অনুরোধ সরাসরি অস্বীকার করা এবং বলা "এটা আমার কাজ না" আপনাকে আত্মকেন্দ্রিক ও অসহযোগী দেখায়।

একজন সত্যিকারের মার্জিত মানুষ দলগতভাবে কাজ করতে জানেন এবং প্রয়োজন হলে সহায়তা করেন।

এর পরিবর্তে আপনি বলতে পারেন, "আমি সাধারণত এটা করি না, তবে দেখছি কীভাবে সাহায্য করতে পারি"—যা আপনাকে দায়িত্বশীল ও সদয় প্রমাণ করবে।

৬) “I don’t have time for this” (আমার এটার জন্য সময় নেই)

যখন কেউ কোনো কথা বলছে বা ছোট কোনো অনুরোধ করছে, তখন সরাসরি বলা "আমার এটার জন্য সময় নেই" আপনাকে অহংকারী ও আত্মমগ্ন দেখায়।

পরিশীলিত মানুষ জানেন কিভাবে বিনয়ের সঙ্গে সময়ের সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করতে হয়।

এর পরিবর্তে বলা যেতে পারে, "আমি এখন ব্যস্ত, তবে পরে কথা বলি?"—যা আপনাকে আরও পরিশীলিত ও সংবেদনশীল হিসেবে উপস্থাপন করবে।

৭) “Do you know who I am?” (তুমি জানো আমি কে?)

এই বাক্যটি বলা মাত্রই বোঝা যায় যে কেউ আত্মগর্বিত ও উদ্ধত। সত্যিকারের মার্জিত মানুষ কখনোই তাদের পরিচিতি বা ক্ষমতা জাহির করেন না, বরং তাঁরা তাদের আচরণ ও ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে শ্রদ্ধা অর্জন করেন।

৮) “I’m not like other people” (আমি অন্যদের মতো নই)

নিজেকে আলাদা বা বিশেষ দেখানোর চেষ্টা করতে গিয়ে "I’m not like other people" বলা আসলে আপনাকে অনিরাপদ ও আত্মকেন্দ্রিক দেখাতে পারে।

সত্যিকারের পরিশীলিত মানুষ কখনোই নিজেদের বিশেষ প্রমাণ করতে চান না; বরং তাঁদের আচরণ, নীতি ও মূল্যবোধ তাঁদের আলাদা করে তোলে।

আমরা কীভাবে কথা বলি, তা শুধু আমাদের চিন্তাভাবনাই প্রকাশ করে না, বরং এটি নির্ধারণ করে অন্যরা আমাদের কিভাবে দেখবে।

পরিশীলিত হওয়া মানে কঠিন বা জটিল শব্দ ব্যবহার করা নয়—বরং সংবেদনশীলতা, শ্রদ্ধাশীলতা ও আত্মসচেতনতার সঙ্গে কথা বলা।

সায়মা ইসলাম

×