ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

লড়াকু সাংবাদিক আঁখি

নাজনীন বেগম

প্রকাশিত: ০০:৫৮, ৮ নভেম্বর ২০২৪

লড়াকু সাংবাদিক আঁখি

দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের জন্য সম্মানজনক লাভলী মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড

সমাজ সভ্যতার ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাওয়া উন্নয়ন ধারাবাহিকতার নির্ণায়কসূচক। তা অবশ্যই সিংহভাগ মানুষের প্রয়োজনীয়, প্রাসঙ্গিক অংশগ্রহণে। কিন্তু শ্রেণি বিভক্ত সমাজে সব মানুষের মধ্যে ব্যবধানের যে প্রাচীর গড়ে তোলে সেখানে সমসংখ্যক নারীও পড়ে বৈষম্যের নির্মম পেষণে। আধুনিক শিল্পোন্নত সমাজ সভ্যতা প্রযুক্তির নিত্য নতুন অভিগমনে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে। তবে ব্যবধান আর বৈষম্যকে সমাজের মূল জায়গায় জিইয়েও রেখেছে। সেখানে যেমন বিত্ত-নির্বিত্তের তারতম্য দৃষ্টিকটু একইভাবে লিঙ্গ সমতাও কেমন যেন দূর অস্ত। আমাদের উন্নয়নশীল বাংলাদেশও হরেক বৈষম্য আর সংকটকে সম্মুখ সমরে সামলিয়ে সামনে যাওয়ার প্রচেষ্টায় সচেতন সাবধানতায় ধাবিত হওয়ার চিত্র সত্যিই স্বস্তিদায়ক। 
তবে নারী-পুরুষের বৈষম্যপীড়িত সমাজ একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকেও হরেক অপসংস্কারে আবর্তিত। তার পরও উন্নয়ন যখন সতত দৃশ্যমান বুঝতে হবে জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত অংশগ্রহণে তা উজ্জ্বলভাবে আলোকিত অধ্যায়ও বটে। বর্তমানে উন্নয়ন কার্যক্রমে গণমাধ্যমের ভূমিকা এক অপরিহার্য পর্যায়। গণমাধ্যম মানেই স্বাধীনভাবে শুধু কথা বলাই নয় মতপ্রকাশের অবাধ সুযোগও সামনে চলে আসে। সেখানেও সমসংখ্যক রমণী তাদের যৌক্তিক ও প্রাসঙ্গিক অংশগ্রহণে যুগ ও সময়ের আবেদন মেটাতে অত্যন্ত সক্রিয় এবং লড়াকুও বটে। লড়াই শব্দটি নারী সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে যেন অবিচ্ছেদ্য এক বাধনে আটকা পড়ে থাকে।

সেই ক্ষুদ্র পারিবারিক আঙিনা থেকে বৃহত্তর সামাজিক বলয়েও। তবু নারী সমাজের যুগান্তকারী ভূমিকা দৃশ্যমান তো বটেই, স্বস্তিদায়কও। তাই গণমাধ্যমের মতো স্পর্শকাতর, দায়বদ্ধতার অবিমিশ্র দ্যোতনায়ও রমণীদের দৃশ্যমান এগিয়ে চলা সমাজ সংস্কারের বরমাল্য। তাপসী রাবেয়া অঁঁখি একজন যোদ্ধা খবর পরিবেশনের সত্য, ন্যায়নিষ্ঠ আঙিনায়। আশৈশব পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্য বলয়ও তার জীবন গড়া, পেশা নির্বাচন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান সমতার ভিত্তিতে এগিয়ে যাওয়ার গল্প তো বটেই। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে জন্ম এই অসম সাহসী সংবাাদকর্মীর। পিতা ইউসুফ মিয়া সরকারি চাকরি করে অবসর নিয়েছেন।

মা ফাতেমা ইউসুফ একজন সুগৃহিণীর মর্যাদায় সংসার জীবন সামলানোর ইতিবৃত্তও কন্যাকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করেছে। জীবন গড়ার ব্যাপারে তো বটেই তার চেয়ে বেশি শিক্ষা কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে মাকে স্মরণ না করলে নিজেকে প্রকাশ, প্রমাণ করা অধরাই থেকে যেত। আলাপচারিতায় নির্দ্বিধায় এমন প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন আদরে বড় হওয়া আঁখি। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে চতুর্থতম সন্তান তিনি। এক সমতার স্বচ্ছ পরিবেশে বড় হওয়া আঁখি মনে করেন পিতা-মাতার অবাধ সুযোগও স্বাধীনতা নিতান্ত জরুরি। তবে যে কোনো সন্তান তিনি ছেলে-মেয়ে যাই হোন না কেন সবার জন্য অপরিহার্যও। আসলে সর্বংসহা জননীই সামনে এসে দাঁড়ান জীবন এগিয়ে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে। পিতা সরকারি কর্মকর্তা। 
পেশার কারণে নির্দিষ্ট একটা বড় সময় বাইরেই থাকতে হয়েছে তাকে। ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ¯œাতক-¯œাতকোত্তর করেন এই নির্ভীক সাংবাদিক। বাম ঘরানার রাজনীতি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়া জীবনের ভিন্ন মাত্রার আনন্দযোগ। দেশ ও জাতি নিয়ে ভাবতে বসলে রাজনৈতিক সচেতনতাও জরুরি এবং প্রাসঙ্গিক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের আসন অলঙ্কৃত করে সংশ্লিষ্ট অঙ্গনের শৃঙ্খলা বজায় রাখাও নিয়মিত দায়-দায়িত্ব হিসেবে লালন-ধারণ করেছেন। তবে পারিবারিক আবহে পুত্র-কন্যার বিষয়টা অনুভবই করেননি। নিজেকে মানুষ ভেবে বড় হতে কোনো বেগই পেতে হয়নি। যার সুষ্ঠু আর সফল পরিণাম আজকের গণমাধ্যম কর্মীর আদর্শ আর মননে জিইয়ে আছে। 
২০১০ সালে একুশে টেলিভিশনে যুক্ত হওয়া সাংবাদিকতার আঙিনায় শুভ পদার্পণ। আজও পেশাগত জীবনের পরম পাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ থেকে পূর্ণতর করে যাচ্ছে। কিন্তু বৈষম্য পারিবারিক প্রতিবেশে বাধা হয়নি কখনো। তবে পেশাগত জীবনে সেটাই মোকাবিলা করার দুঃসহ চিত্র ভাবিয়েও তুলছে। কেন নারীরা তার অর্জন আর যোগ্যতাকে পিছু হটাতে হবে বারে বারে চলার পথে। বিশেষ করে পেশাগত জীবনকে সাবলীলভাবে এগিয়ে নিতে ‘নারী’ শব্দটি কেন ফাঁদের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো থাকে? প্রশ্ন করছেন নিজেকে, সমাজ ব্যবস্থাকেও।

যেখান থেকে কেউই বিচ্ছিন্ন থাকি না থাকতে চাইও না। সঙ্কীর্ণতা, কূপম-ূকতায় সমাজের সমতার শক্তিকে বারবার লঙ্ঘনই শুধু নয় অবিচ্ছিন্ন থাকতেও ব্যবধান তৈরি করছে। ভাঙতে হবে এসব প্রতিবন্ধকতার কঠিন প্রাচীর। নারী নয়, মানুষ হিসেবে ভাবাও প্রত্যেকের সচেতন দায়বদ্ধতা। 
সহকর্মী হিসেবে নারী সাংবাদিকরাও সহজ আর নির্বিঘœ থাকেন না। আর পুরুষ সহকর্মীরা তো নারীদের উচ্চ পদে আসীন হওয়ার জায়গাটিকে সম্মানই করেন না। মানতেও দ্বিধাগ্রস্ত। আসলে সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক নাগরিক যদি তার অধিকার, স্বাধীনতা কিংবা সম্মান, মর্যাদা হারাতে বসে তা হলে নতুন বৈষম্যহীন সমাজ গঠন প্রক্রিয়াও ধীরে চলার গতিতে পিছু হটার আশঙ্কাও থেকে যেতে পারে। ২০২৪ সালে অর্জন করেছেন দক্ষিণ এশিয়ায় নারীদের জন্য সম্মানজনক লাভলি মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড। ভারতে মুম্বাই টাটা সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় এমন আয়োজন।

×