.
আফরিন জাহান- দেশের একটি নামকরা প্রাইভেট হাসপাতালে পুষ্টিবিদ হিসেবে কর্মরত আছেন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ডিউটি করে চলে যাচ্ছেন একটি বেসরকারি চ্যানেলের স্বাস্থ্যবিষয়ক টকশো- এর সঞ্চালনার কাজে। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চ্যানেলের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখে রাত ৮টার মধ্যে ফিরবেন নিজ গৃহে। নিজের শখ পূরণ করার জন্যই মূলত সঞ্চালনার কাজটি করে থাকেন। শখের পাশাপাশি এই কাজটি তার একটি বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে পরিণত হয়েছে এবং একইসঙ্গে তিনি হয়ে উঠেছেন এখন অনেকের কাছেই একটি পরিচিত মুখ।
সাফওয়ান খান- পেশায় একজন সফল ব্যাংকার। ১২ বছরের ক্যারিয়ারে বর্তমানে দেশের একটি জনপ্রিয় বেসরকারি ব্যাংকের এজিএম হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পেশাগত জীবনে সফল এই মানুষটির কাছে সফলতার আরেক নাম ব্যস্ততা। ব্যাংকের চাকরির পাশাপাশি বছর সাতেক আগে গড়ে তুলেছেন নিজের এগ্রো ফার্ম এবং ট্যুরিস্ট বিজনেস। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে অনেকটা শূন্য হাতে শুরু করেছিলেন কর্মজীবনের যাত্রা। শুধুমাত্র ব্যাংকের চাকরির ওপর ভরসা না করে নিজের পছন্দের ব্যবসাকেও পরিচালনা করছেন। গাড়িপ্রেমী লোকটি সম্প্রতি কিনেছেন তার পছন্দের গাড়ি টয়োটা প্রায়াস এস ট্যুরিং। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমের কারণে আজ তিনি ব্যক্তিগত এবং কর্মজীবনে একজন সফল মানুষ হিসেবে কাছের মানুষদের কাছে পরিচিত।
রাশিদা খাতুন- একজন গৃহিণী। বৃদ্ধ শ্বাশুড়ি, স্বামী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে পুরান ঢাকার নারিন্দাতে বাস করেন। সংসারের সমস্ত কাজ গুছিয়ে দিনের বাকি সময়টাতে সেলাই মেশিন নিয়ে দর্জির কাজ করেন। কাজের ব্যস্ততা ও গ্রাহকের চাহিদার জন্য সঙ্গে রেখেছেন একজন সহচারীও। তার কাজের দক্ষতার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকাজুড়েই। অন্যের পোশাক সেলাইয়ের পাশাপাশি এলাকার অনেক মেয়েকে চুক্তি ভিত্তিতে সেলাইয়ের কাজও তিনি শিখিয়ে থাকেন। এভাবেই গত বারো বছর ধরে নিজেই উপার্জন করছেন। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে শুধু স্বামীর আয়ের ওপর নির্ভরশীল হতে চাননি বলেই বেছে নিয়েছেন এই কাজ। সংসারের বিভিন্ন প্রয়োজন ও ছেলে-মেয়েদের চাহিদা পূরণে তার এই উপার্জনের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই।
উপরের প্রতিটা গল্প যেন বাস্তবজীবনেরই প্রতিচ্ছবি। একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য অর্থের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এই অর্থ উপার্জনের সঙ্গে ব্যস্ততা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিজের সময়টা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমে যেভাবে বানিয়ে নিতে পারেন আয়ের একটি উৎস, পাশাপাশি এই ব্যস্ততাই হয়ে উঠতে পারে এক একটা পরিচিতি। কেউ শখ করে কাজ করে, কেউ বা পেটের ক্ষুধা নিবারণে। উদ্দেশ্য যেমনই হোক, সেই উদ্দেশ্য সফল করার পেছনে থাকতে হবে অক্লান্ত পরিশ্রম, বিনিয়োগ করতে হবে সময়। শুয়ে-বসে অলস সময় কাটিয়ে, অন্যের বিষয়ে সমালোচনা করে, নিজের মূল্যবান সময়কে কাজে না লাগিয়ে কখনোই সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছানো সম্ভব নয়।
তবে শুধু যে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্য নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হবে ঠিক তা নয়, কেননা সফলতার সংজ্ঞা একেকজনের কাছে একেক রকম। অর্থ উপার্জনের জন্য না শুধু, ব্যস্ততা হয়ে উঠতে পারে আপনার মানসিক শান্তির কারণও। নিজের কাজগুলো গুছিয়ে ঘুরে আসতে পারেন আপনার পছন্দের কোনো জায়গায়, নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারেন নির্জন কোনো দ্বীপে। দেখতে পারেন নেটফ্লিক্সে আপনার পছন্দের কোনো মুভি। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে নিয়ে নিতে পারেন মানসিক প্রশান্তি। দিন শেষে এসব ব্যস্ততাই হতে পারে আপনার স্বস্তি এবং সফলতার প্রধান কারণ।