.
পূজার ঘণ্টা বাজল বলে। শরতের শুভ্র রূপ ও বৈচিত্র্যের মাঝে চলে এসেছে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আয়োজন, শারদীয় দুর্গোৎসব। এ উৎসবে ধর্মীয় আচার আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি অনুষ্ঠানের ভাব-গাম্ভীর্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নানা পোশাক ও আনুষঙ্গিক সাজে সেজে উঠবার রীতি বহু শতাব্দীর।
পূজা শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন থেকে আর পাঁচ দিন পরে দেবী বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয়। ষষ্ঠী থেকে দশমী, কুমারী পূজা থেকে সিঁদুর খেলা, ধুনুচি নাচ থেকে প্রসাদ বিতরণ, সন্ধ্যা আর সকালের অঞ্জলি থেকে ভাসান- প্রতিটি উপলক্ষকে বর্ণময় আর আনন্দময় করতে রয়েছে ভিন্ন সাজ পোশাক। তবে এই দিনগুলোতে বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন প্রিয় মানুষগুলোর দিকে। সারা দিনের কর্মব্যস্ততায় হয়তো তারা নিজের যতœও নিতে পারে না। তাই এবারের পূজায় কাছের মানুষদের পছন্দের পোশাক উপহার দিন। একই সঙ্গে সময় বের করে ঘুরে আসুন শহর থেকে দূরে। বয়োজ্যেষ্ঠ মা-বাবা দুর্গার আরেক রূপ। তাই তাদের প্রাণবন্ত রাখতে উৎসবের দিনগুলো বিশেষভাবে কাটানোর চেষ্টা করুন। উৎসবের রঙে সবাইকে সাজাতে পূজার বর্ণিল কালেকশন এনেছে প্রতিটি ফ্যাশন হাউস। পোশাকের প্যাটার্নে বৈচিত্র্য থাকছে গতানুগতিক তারুণ্যনির্ভর। শাড়ির আঁচল, কামিজ বা কুর্তার নেক লাইন ও পাঞ্জাবির ক্যানভাসেও থাকছে স্বতন্ত্রতা। এবারের পূজার কালেকশনে থাকছে শাড়ি, পাঞ্জাবি, লং ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ ও শিশুদের পোশাক। উৎসবের ফ্যাশনে শুধু নতুনত্বই নয়, ঐতিহ্যের ছোঁয়া আছে বলেই উৎসবের সাজে সার্বজনীনতা খুঁজে পাওয়া যায়।
বছরজুড়ে যতই পোশাক কেনা হোক না কেন, পূজায় নতুন পোশাক চা-ই চাই। আর পূজার পোশাক মানেই স্টাইল ও ডিজাইন হতে হবে নতুন। না হলে যেন মন ভরে না। হাজার হোক, উৎসব তো। আর উৎসবে কে না চায় একটু অন্যরকম পোশাক পরতে? কিছুটা সাবেকি হলেও আমাদের দেশে উৎসবের পোশাক মানেই পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি আর নারীদের জন্য শাড়ি। পূজাও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে পূজার পাঞ্জাবি আর শাড়ি হতে হবে হাল ফ্যাশনের, মনের মতো রঙের, নজরকাড়া নকশার। আর সেগুলো প্রিয় নকশাকারের যদি হয়, তাহলে তো কথাই নেই।
রঙ বাংলাদেশের কর্ণধার সৌমিক দাস জানান-‘জন্মলগ্ন হতেই ক্রেতার পছন্দ, সন্তুষ্টি ও স্বাচ্ছন্দ্য তাদের মূল লক্ষ্য। দুর্গোৎসব বাংলার সংস্কৃতির একটি বৃহত্তম অংশ। একসময় দুর্গাপূজার কেনাকাটার জন্যে পাশর্^বর্তী দেশের উপর নির্ভর করতে হতো পুরোপুরি। যে কটি ফ্যাশন হাউজ পোশাক শিল্পের নান্দনিক সব সৃষ্টি দিয়ে এই নির্ভরতা কমিয়েছে, রঙ বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। তিনি আরও বললেন, যেকোনো উৎসবে আমরা প্রিয়জনকে উপহার দিয়ে থাকি, তাই রঙ বাংলাদেশ এবারের পূজায় প্রিয় ক্রেতাদের জন্যে দিচ্ছে সকল কেনাকাটায় নিশ্চিত উপহার।’
শরতের পোশাকের থিম রং নীল। আর ঋতুকে প্রাধান্য দিয়ে দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোতে কমবেশি সব পোশাকেই আছে নীলের নানা শেড। এজন্য অনেক ডিজাইনার পূজা আর শরত দুই উপলক্ষ সামনে রেখে পোশাকের নকশা করেছেন। সিম্পল ও গর্জিয়াস দুই ধরনের পোশাকের ফেব্রিকস হিসেবে থাকছে সুতি, মসলিন, তসর ও সিল্ক। ফেব্রিকসে ব্লক, শিবরি, টাইডাই ও প্যাচওয়ার্ক বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার হয়েছে।
মোটিফে থাকছে ফ্লোরাল, জিওম্যাট্রিক, ইস্টার্ন, ওয়েস্টার্ন, বার্মিজসহ কিছু আঞ্চলিক মোটিফ। শাড়িতে পাড় ও আঁচলের ডিজাইন প্রাধান্য পেয়েছে। আছে হ্যান্ডপেইন্টের শাড়ি ও সিঙ্গেল কামিজ। কাপড়, রং আর নকশা ভেদে পোশাকের দামের পার্থক্য হয়। শরতের শাড়ি পাবেন ১০০০ থেকে ৮ হাজার টাকার মধ্যে। সালোয়ার-কামিজ ১ হাজার থেকে ৫ হাজার, ফতুয়া ৩০০ থেকে ২০০০ আর টপস ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় । অঞ্জন’স, রঙ বাংলাদেশ, লা রিভ, বিবিয়ানা, সেইলর, ইয়েলো, দেশাল, কে-ক্র্যাফট, নিত্য উপহারসহ ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোতে পাবেন। এছাড়া বসুন্ধরা শপিং মল, এলিফ্যান্ট রোড, ইস্টার্ন প্লাজা, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, সীমান্ত স্কয়ারের পাশাপাশি হকার্স মার্কেটগুলোতেও পাওয়া যাচ্ছে। পূজাকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন হাউজগুলো দিচ্ছে কেনাকাটার ওপর বিশেষ মূল্য ছাড়।
ফ্যাশন প্রতিবেদক