![বিবাহ বিচ্ছেদ নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছা বিবাহ বিচ্ছেদ নারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছা](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2023May/oparajita-2-2309141952.jpg)
ধর্মীয় বিধিবিধান এবং সামাজিক রীতিনীতি, সংস্কারের মধ্য থেকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া
ধর্মীয় বিধিবিধান এবং সামাজিক রীতিনীতি, সংস্কারের মধ্য থেকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বহু যুগ ও কালের প্রচলিত ধারা। শুধু বিদ্যমান সমাজই নয় বরং ধর্মীয় আইনে বিবাহ বন্ধন এক সুদৃঢ় পারিবারিক সম্পর্ক। যা কখনো ভেঙে যাওয়ার ব্যাপারই নয়। তারপরেও এমন শক্ত বাধন হালকা হয়, সংসারের ভিত নড়ে ওঠে। দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কে ফাটল ধরলে দাম্পত্য কলহ মিটমাট করতে বিচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়াও বিভিন্ন ধর্মে নির্দেশ করা আছে। তবে এক সময় মেয়েদের পক্ষে এমন বিচ্ছেদ ঘটানো কিংবা দাম্পত্য বাধনকে হাল্কা করার কোনো সুযোগই থাকেনি।
শিক্ষা, দীক্ষা, অর্থ, বিত্তে অপেক্ষাকৃত পাশ্চাতে থাকা মেয়েরা ভাবতেই পারেনি সংসার ভাঙার যোগ্যতা কিংবা ক্ষমতা তাদের আছে কিনা। তবে সময় পাল্টেছে, নতুন যুগের হাওয়ায় অনেক পুরনো বিধিনিষেধ ও আধুনিকতার নতুন জোয়ারে ভেসে যাওয়া এক প্রকার সময়ের গতি প্রবাহ। শারীরিকভাবে দুর্বল ও অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া সমসংখ্যক নারীদের জীবনে এসেছে নতুন যুগের নবতর আহ্বান। বিশেষ করে জীবন গড়ার মূল কার্যক্রম শিক্ষাব্যবস্থাপনায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার জোরালো বোধ। ফলে শিক্ষায় যত মেয়েরা এগিয়ে যেতে থাকে সেখানে তার আত্মসম্মান। মর্যাদা, অধিকার এবং আইনগত দাবিগুলোও স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়। যা থেকে বুঝতে পারছে অধিকারের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের তেমন কোনো বৈষম্য নেই। বরং সমতাভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থাই নতুন যুগের অনন্য মাইল ফলক। সঙ্গত কারণে যে বিচ্ছেদ এক সময় স্বামীর একচেটিয়া এখতিয়ারে ছিল পরবর্তীতে জানা গেল একই অধিকার স্ত্রীর থাকা বাঞ্ছনীয়। যা দেশের প্রচলিত আইন এবং ধর্মীয় বিধানেও উল্লেখ থাকে।
লেখাপড়া শিখে নারীরা যখন স্বাধীনচেতা কিংবা অধিকার সচেতন হলো সে সময় তাদের মনে হলো পারিবারিকভাবে একসঙ্গে থাকা না থাকার বিষয়টিও তারা নির্ধারণ করতে পারে। বিংশ শতাব্দীর শেষ দশক থেকে শুরু হওয়া নারী শিক্ষার হার যত বাড়তে থাকে বিবাহ বিচ্ছেদেও পড়ে তার ইতিবাচক প্রভাব। আগে স্বামীর ইচ্ছেমতো বিচ্ছেদ হতো এখন কিন্তু স্ত্রীদেরও ইচ্ছা-অনিচ্ছার দাম দিতে হচ্ছে প্রচলিত আইন আর সামাজিক রীতি-নীতিতে। এখন বিভিন্ন পরিসংখ্যানে উঠে আসছে বিবাহ-বিচ্ছেদের আবেদনে স্ত্রীদের সংখ্যা বেশি। আধুনিক যুগের হাওয়া তো বটেই। এখন স্ত্রীরা যদি মনে করছেন বর্তমান সংসার তার জন্য অনুকূল নয় কিংবা আত্মসম্মান, মর্যাদা নিয়ে পরিবেশটা বিষময় হয়ে উঠছে তাহলে স্ত্রী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করা আইন ও সামাজিক রীতিতে গ্রহণীয় বিধি।
অধিকার এবং স্বাধীনতার অনবদ্য স্ফুরণে নারী সমাজও তার ইচ্ছে-অনিচ্ছের বিরোধ কিংবা আশা-আকাক্সক্ষার গরমিলকে আইনি ব্যবস্থাপনায় মিটিয়ে ফেলতে আর পিছিয়ে থাকেনি। বিভিন্ন অমিল আর গরমিলে যখন পারিবারিক ঝামেলা চরম অতিষ্ঠ পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখন মেয়েরা নিজেরাই এগিয়ে আসছে বিবাহ-বিচ্ছেদের আবেদন নিয়ে। ২০২২-২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিবাহ-বিচ্ছেদের আবেদনে নারীরা ৭০-৬৫% এগিয়েÑ বাকি ৩০-৩৫% পুরুষ। গত দুই বছরের পরিসংখান ব্যুরোর তথ্যে এমন উপাত্ত উঠে আসে।
অপরাজিতা প্রতিবেদক