
সবুজ কার না ভাললাগে। এক রাশ সবুজে মন ভাসিয়ে দিয়ে অনেকেই উদাস হয়ে যায়। সেই সবুজের তৃষ্ণা থেকেই মানুষের বাগানের প্রতি ঝোঁক। ইদানীং খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ছাদ বাগান। প্রায় প্রতিটা বাড়ির ছাদেই এখন সবুজের সমারোহ। কেউ ফুলের গাছ লাগাচ্ছে, কেউ বা ফলের। কেউ আবার সঙ্গে গড়ে তুলছে শখের সবজি বাগান। শীতের পর এখন গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ শুরু করেছে শখের ছাদ বাগানীরা। এ সময় ঢেঁড়স, ধুন্দুল, করল্লা, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, চাল কুমড়া ইত্যাদি সবজিগুলো ছাদে চাষের জন্য বেশি জনপ্রিয়। আর গ্রীষ্মকালীন এসব সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। এ সময় ঘাম বেশি হওয়ায় শরীর থেকে প্রয়োজনীয় ‘নিউট্রিয়েন্ট’ ঘামের সঙ্গে বের হয়ে যায়। ফলে শরীরে ভিটামিন, মিনারেলের ঘাটতি হওয়ার পাশাপাশি দেখা দেয় পানি স্বল্পতা। গ্রীষ্মকালীন এসব খাদ্যগুলো শরীরের পানিস্তর ঠিক রাখাসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, ত্বক ও চুল ভাল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই এই ছাদবাগান একদিকে যেমন মনের চাহিদা মিটায়, তেমনি খাবারের চাহিদাও পূরণ করে। আর বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে উর্ধগতি, তা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাচ্ছে এই শখের ছাদ বাগানীরা। কারও বাগানের এত নেশা যে ভাড়া বাসার ছাদেও বাগান করে চাহিদা মিটাচ্ছে। এমন একজন লুৎফা বেগম। তিনি বাড়িওয়ালার অনুমতি নিয়ে ছাদে বেশ কয়েকটি টবে লাগিয়েছেন ড্রাগন ফলের গাছ, মালটা, মিষ্টি কুমড়া, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা. বেগুন, ধুন্দুল, করল্লা, কাঁচা মরিচ, লেটুসপাতা। এলাকায় মাত্র ৩/৪ বছর হলো বাড়িটা কিনে বসবাস করছেন জহির সাহেব। বাড়ির ছাদের একপাশটায় তিনি লাগিয়েছেন করল্লা, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, ডালিম গাছ। শীতে তিনি শিম আর লাউ খেয়েছেন। তার ইচ্ছে রোজার পর একপাশটায় পুরো সবজি করবেন। আরেক পাশে রাখবেন ফল আর ফুলের বাগান। রোকেয়া জহুরা-স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরিজীবী। তবু মা আর মেয়ের সহায়তায় ফল আর সবজি দিয়ে পুরো ছাদজুড়ে বাগান করেছেন। তার আছে- পেয়ারা, ডালিম, বিলম্বি, সফেদা, পেঁপে, শশা, আঙুর, করমচা,। সবজির মধ্যে আছে পুঁইশাক, পুদিনাপাতা, লেবু, ঢেঁড়স।
আরেক দম্পতির দুজনেই ডাক্তার। ৩/৪ বছর হলো উত্তরাধিকার সূত্রে বাড়িটা বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন ভদ্রলোক। তিনি বিভিন্ন রকম ফুল আর পাতা বাহার দিয়ে সাজিয়েছেন। অনেক ফুল ফুটে আছে। সঙ্গে পাতাবাহার থাকায় অন্যরকম এক সৌন্দর্যে ভরে আছে পুরো ছাদ। সবুজের মাঝে লাল-নীল-হলুদ ফুলেরা যেন খিলখিল করে হাসছে।
বর্তমান যান্ত্রিক সভ্যতা আমাদের উন্নত বিশ্বে পৌঁছে দিয়েছে। আর উন্নত জীবন-যাপনের জন্য অবশ্যই তা আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু এর ফলে তৈরি বড় বড় দালান-কোঠা, ব্রিজ-কালভার্টের ভিড়ে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সবুজ প্রকৃতি। যেখান থেকে বেঁচে থাকার প্রধান উপাদান অক্সিজেন মুক্ত বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে আমাদের সাহায্য করে। আর বিষাক্ত উপাদান কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিয়ে প্রাকৃতিক সামঞ্জস্যতা রক্ষা করে। তাছাড়া চোখের জন্যও সবুজ অনেক উপকারী। আর এই ছাদ বাগানের ফলে বৈশ্বিক যে তাপমাত্রায় অতিষ্ঠ জনজীবন, তার থেকেও মুক্ত থাকা সম্ভব। ছাদে গাছ থাকলে বাড়ির তাপমাত্রার ভারসাম্যতাও রক্ষা পায়। অনেকে এই উদ্দেশ্যেই গড়ে তুলছেন ছাদবাগান। তাই এই ছাদ বাগানের মাঝে আমরা একটু হলেও ফিরিয়ে আনতে পারব সবুজ প্রকৃতিকে। একদিন প্রতিটা বাড়ি হবে সবুজ অক্সিজেনের নিরাপদ ভা-ার।