॥ এক ॥
‘খেলবে?’
‘না।’
‘কেন?’
‘সম্ভব না।’
‘কেন সম্ভব না?’
‘তুমি বুঝ।’
‘কী বুঝি?’
‘কেন সম্ভব না, সেইটা।’
‘আমি বুঝি না।’
‘বুঝ।’
‘তুমি বললেই হলো?’
‘তবে কি তুমি বললেই হলো!’
‘তুমি পচা একটা!’
মেঘেরা খুব পচা! আমার সঙ্গে খেলে না! মেঘেদের সঙ্গে কোনদিন কথা বলব না!
॥ দুই ॥
‘তুমি খেলবে?’
‘না।’
‘কেন?’
‘সম্ভব না।’
‘কেন সম্ভব না?’
‘তুমি বুঝ।’
‘কী বুঝি?’
‘কেন সম্ভব না, সেইটা।’
‘আমি বুঝি না।’
‘বুঝ।’
‘তুমি কী করে জান?’
‘তুমিও জান।’
‘জানি না।’
‘জান।’
‘আমি সত্যিই জানি না।’
‘তুমি সবই জান।’
‘তুমি বললেই হলো?’
‘তবে কি তুমি বললেই হলো!’
‘তুমি! তুমিও পচা একটা!’
পাখিরা খুব পচা, খুব! আমার সঙ্গে খেলতে আসে না! পাখিদের সঙ্গে আর কোনদিন কথা বলব না!
॥ তিন ॥
‘আচ্ছা, তুমি খেলবে?’
‘না।’
‘কেন খেলবে না?’
‘সম্ভব না।’
‘কেন সম্ভব না?’
‘তুমি জান।’
‘কী জানি?’
‘কেন সম্ভব না, সেইটা।’
‘আমি জানি না।’
‘জান।’
‘আচ্ছা, তুমিই বল না!’
‘জানা থাকলে বলার প্রয়োজনটা কী?’
‘আমি তো জানি না।’
‘জান।’
‘আসলেই জানি না।’
‘ভাল করেই জান।’
‘তুমি বললেই হলো!’
‘তবে কি তুমি বললেই হলো!’
‘তুমি পচার চেয়েও পচা একটা!’
টিকটিকিরাও খুব পচা! আমার সঙ্গে খেলতে চায় না! টিকটিকিদের সঙ্গে জীবনে আর কথাই বলব না!
॥ চার ॥
মেঘ, পাখি, টিকটিকি সবাই খুব পচা! কেউ আমার সঙ্গে খেলতে চায় না! আমার আর কোন খেলার সঙ্গী নেই! আমার তাই খেলা হয় না! আমি তাই একলা বসে থাকি!
আমার কোন ভাইবোন নেই। বাবা-মা সেই সকালে অফিসে চলে যায়। ফিরে আসে রাতে। বাসায় থাকে কেবল বুয়া। স্কুল থেকে ফেরার পর আমার সঙ্গী কেবল এই বুয়া। সঙ্গীই বটে একটা! বাবা-মা বাসায় না থাকলে আমার দিকে তার বিশেষ একটা খেয়াল থাকে না! সে টিভি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মুখ হা করে, চোখ বড় বড় করে ব্যাপক মনোযোগ দিয়ে সে টিভি দেখে! এই সময় কোন মশা তার গায়ে বসে পেট ফুলিয়ে রক্ত খেয়ে চলে গেলেও সে টের পায় না! বুয়া তাই আমার খেলার সঙ্গী হয় না, হতে পারে না!
বাসার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই আমার। স্কুল থেকে ফেরার পর আমাকে ঘরের ভেতরেই বন্দি থাকতে হয়! বুয়াকে বিশেষভাবে শাসিয়ে রেখেছে বাবা-মা- কোনভাবেই যেন আমি বাইরে যেতে না পারি! বাইরে গেলে নাকি বখে যাবো! বুয়া তাই বাসার ভেতর দিকেই এত্ত বড় একটা তালা মেরে রাখে! আর চাবিটা সবসময় মুঠোর ভেতর পুরে রাখে! টিভি দেখার বেখায়ালেও চাবির প্রতি তার খেয়াল সরে না! বুয়াকে ফাঁকি দিয়ে কখনো যদি বাইরে গিয়েও থাকি, তাতেও বিশেষ একটা লাভ নেই! দৌড় সেই মূল গেট পর্যন্তই! বুয়ার মতো দারোয়ানকেও বিশেষভাবে শাসানো আছে! আমাকে ধরে আবার বাসার ভেতরে রেখে যায়! আমার তাই আর বাইরে যাওয়া হয় না! খেলা হয় না! ঘরের ভেতর একলা বসে থাকি!
অবশ্য খেলার জায়গাই বা কই! বাবার কাছে শুনেছি তাদের স্কুলে বিশাল মাঠ ছিল। আমাদের স্কুলে কোন মাঠ নেই। থাকলেও বিশেষ কিছু আসত-যেত না! এক টিচারের ক্লাস শেষ হতে না হতেই আরেক টিচার চলে আসে। টিফিনের সময়ও খেলার তেমন সুযোগ নেই। ওই সময় টিফিনের পরের ক্লাসগুলোর পড়া-হোমওয়ার্ক ঝালিয়ে নিতে হয়। আমাদের বাসার আশপাশেও তেমন কোন মাঠ নেই। কেবল বাসার পেছন দিকটায় খানিক দূরে একটা ছোট মাঠ আছে। মাঠও অবশ্য না, ছোট্ট একটা জায়গা। সেখানে কিছু ছেলেমেয়ে খেলে। ওদের আমি চিনি না। ওরা দৌড়ায়-লাফায়-হাসে-মজা করে! দশতলা বিল্ডিংয়ের সাততলা থেকে জানালার পাশে বসে ওদের খেলা দেখি। খুব ইচ্ছে করে গিয়ে ওদের সঙ্গে খেলি। কিন্তু সে সুযোগটাও আমার নেই! আমি তাই মেঘেদের ডাকি, পাখি-টিকটিকিদের ডাকি! আমি জানি এটা সম্ভব নয়, তবুও ডাকি! ওরা আসে না! আমার তাই আর খেলা হয় না! আমি তাই একলা বসে থাকি! দূরে, নাম না জানা ওদের খেলা দেখি...