ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

এবার ইরান যে কারণে নিজেদের পরমাণু বিজ্ঞানীকে ফাঁসি দিলেন

প্রকাশিত: ০৭:২৭, ৯ আগস্ট ২০২৫

এবার ইরান যে কারণে নিজেদের পরমাণু বিজ্ঞানীকে ফাঁসি দিলেন

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বাসঘাতকতা, ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া ও নাশকতার সহযোগিতার মতো অপরাধের শাস্তি যুগে যুগে কঠোর হয়েছে। ইরান এ ক্ষেত্রে বরাবরই কঠোর এবং সোজাসুজি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে থাকে। সম্প্রতি ইসরাইলের সঙ্গে ১২ দিনের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী ও শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার মিশনে ইসরাইলকে গোপন তথ্য দিয়ে সহযোগিতার অভিযোগে একের পর এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে দেশটি।

এবার জানা গেছে, নিজেদের শীর্ষস্থানীয় এক পরমাণু বিজ্ঞানীকেই ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে ইরান। রুজবে বাদী নামের ওই বিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে তার সহকর্মীদের গোপন তথ্য ইসরাইলি গোয়েন্দাদের কাছে সরবরাহের প্রমাণ পাওয়া গেছে। যুদ্ধ-পরবর্তী সময়েও একইভাবে ইসরাইলকে সহায়তা করে যাচ্ছিলেন তিনি। ইসরাইলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গত বুধবার রুজবে বাদীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে ঘোষণা করেছে ইরানের বিচার বিভাগ।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, রুজবে বাদী ছিলেন একজন পরমাণু বিজ্ঞানী এবং ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার অধীনে পারমাণবিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সদস্য। তার গুগল স্কলার প্রোফাইল অনুযায়ী, তিনি রিয়্যাক্টর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী এবং ২০১১ সালে ইরানের সিনিয়র পারমাণবিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একটি গবেষণাপত্রে সহলেখক ছিলেন।

১২ দিনের যুদ্ধের সময় নিহত দুই বিশিষ্ট পারমাণবিক বিশেষজ্ঞ — আব্দুল হামিদ মিনুচের এবং আহমেদ জুলফাগারীর সঙ্গে তিনি একটি গবেষণাপত্রে সহলেখক ছিলেন। আমির কোভিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিগ্রাম চ্যানেলে উল্লেখ রয়েছে, বাদী বিশ্ববিদ্যালয়টির ডক্টরেট স্নাতকও ছিলেন।

ইরানি বিচার বিভাগের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বাদীকে ওই হামলায় নিহত একজন বিজ্ঞানীর সম্পর্কে গোপন তথ্য মসাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তিনি জেনে-শুনে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করছিলেন। ইরানের সরকারি কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, তাকে অনলাইনে নিয়োগ করেছিল মোসাদ। চূড়ান্ত নিয়োগের আগে মোসাদের একজন কর্মকর্তা তাকে যাচাই করেন এবং পরে “কেভিন” নামে পরিচিত এক হ্যান্ডলারের কাছে তার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।

বিচার বিভাগের মতে, বাদীর কর্মক্ষেত্র ও অবাধ যাতায়াতের সুবিধা তাকে ইসরাইলের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান উৎসে পরিণত করে। এরপর তাকে মোসাদের শীর্ষ বিভাগগুলোর একটি সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তার অনুরোধে, প্রতিটি মিশনের জন্য আলাদা পুরস্কারের পরিবর্তে মাসিক ভিত্তিতে একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট মারফত অর্থ প্রদান করা হতো।

মামলার নথিতে বলা হয়েছে, নিরাপদ যোগাযোগ স্থাপনের জন্য তাকে একটি ডেডিকেটেড ফোন, ল্যাপটপ এবং দুটি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ কিনতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর তাকে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সফল প্রশিক্ষণ শেষে সংবেদনশীল ও শ্রেণীবদ্ধ তথ্য সংগ্রহ এবং সেসব মোসাদের কাছে পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় রুজবে বাদীর ওপর।

শেখ ফরিদ 

×