
ছবি: সংগৃহীত
সায়েন্স ফিকশনের কল্পনার অস্ত্র যেন এবার বাস্তবে রূপ পেল। ইসরায়েল প্রথমবারের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করল লেজারভিত্তিক এক আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। হুথি ও হিজবুল্লাহর ধারাবাহিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বিপর্যস্ত তেল আবিব এখন আশ্রয় নিয়েছে এই 'অদৃশ্য' লেজার শিল্ডে, যা আক্ষরিক অর্থেই চোখে দেখা যায় না।
সম্প্রতি লেবাননের হিজবুল্লাহ ছোড়া ৩০ থেকে ৪০টি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে এই সিস্টেমের মাধ্যমে। দাবি তেল আবিবের— এটাই বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে সফলভাবে ব্যবহৃত লেজার অস্ত্র। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) প্রকাশ করেছে যে, বহু বছর গবেষণা ও উন্নয়নের পর তারা "আয়রন বিম" নামক লেজারভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রস্তুত করেছে, এবং এবার বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে এর ব্যবহার হয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট ও টাইমস অফ ইসরায়েল-এর তথ্য অনুযায়ী, আয়রন বিম মূলত স্বল্পপাল্লার রকেট, ড্রোন এবং মিসাইল ধ্বংসে সক্ষম। প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার তুলনায় এই প্রযুক্তির খরচ অনেক কম— একটি মিসাইল প্রতিহত করতে যেখানে 'আয়রন ডোম' ব্যবস্থায় গড়ে ৫০০ ডলার ব্যয় হয়, সেখানে লেজার অস্ত্র দিয়ে তা সম্ভব মাত্র কয়েক ডলারে।
লেজার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটি একাধিক ধাপে কাজ করে। প্রথমে রাডার হুমকি শনাক্ত করে, এরপর সেটিকে লক্ষ্য করে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন লেজার নিক্ষেপ করা হয়। এটি সম্পূর্ণ অটোমেটিক এবং টার্গেট নিখুঁতভাবে ধ্বংসে সক্ষম। এমনকি শত্রুপক্ষও সহজে বুঝতে পারে না, কোথা থেকে এই আঘাত এসেছে।
২০১১ সাল থেকেই এই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে ইসরায়েল। ২০২১ সালে প্রথম প্রোটোটাইপ প্রকাশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘রাফাল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস’-এর সহায়তায় এটি বাস্তবায়ন করা হয়। তবে সাম্প্রতিক যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত সংস্করণটি পুরোপুরি আইডিএফ-এর নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি।
নেটানিয়াহু প্রশাসন এতদিন এই বিষয়ে মুখ না খুললেও হুথি ও হিজবুল্লাহর ক্রমাগত আক্রমণে বাস্তব প্রয়োগ শুরু করেছে ‘আয়রন বিম’। এটির মাধ্যমে খরচ কমিয়ে আনার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের ওপর প্রযুক্তিগত দাপট দেখানোর সুযোগও পাচ্ছে ইসরায়েল।
অস্ত্রের জগতে এটি নিঃসন্দেহে এক যুগান্তকারী মোড়— যেখানে কল্পবিজ্ঞান এখন বাস্তব প্রতিরক্ষার হাতিয়ার।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=AdNnbsY-DMc
এম.কে.