
ফেডারেল শিক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে গুটিয়ে ফেলার পরিকল্পনা স্পষ্ট করলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা বিভাগে একযোগে ১৫ শতাংশ বাজেট কাটছাঁট এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা কর্মসূচিতে বড় পরিবর্তনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বাজেটের খুঁটিনাটি দেখে বোঝা যাচ্ছে, প্রশাসন কেবল ব্যয় কমাচ্ছে না একটা গোটা মন্ত্রণালয় ধীরে ধীরে বন্ধের দিকেই এগোচ্ছে।
বাজেটের সূচনায়ই ট্রাম্পের একটি বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে: "আমরা শিক্ষা ফিরিয়ে দিচ্ছি রাজ্যগুলোর হাতে, যেখানে এর প্রকৃত স্থান।" গত মাসেই একটি ফেডারেল আদালত শিক্ষা বিভাগ বন্ধের তাঁর নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়নে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তবু বাজেটের ভাষা বলছে, শিক্ষা বিভাগ 'দায়িত্বপূর্ণভাবে গুটিয়ে নেওয়ার পথে' রয়েছে।
তবে প্রক্রিয়াটি হঠাৎ করে নয়, দীর্ঘমেয়াদি। কারণ এখনও শিক্ষা বিভাগের জন্য ৬৬.৭ বিলিয়ন ডলারের বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
ফেডারেল বাজেটে 'টাইটেল আই' নামের যে গুরুত্বপূর্ণ তহবিলটি রয়েছে, তা মূলত দরিদ্র অঞ্চলের স্কুলগুলোতে অতিরিক্ত সহায়তা দিতে ব্যবহৃত হয়। অনেকেই ধারণা করছিলেন, এই তহবিলও বাতিল বা কমিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু বাজেটে বলা হয়েছে, আগের দুই বছরের মতোই এই খাতে বরাদ্দ থাকবে ১৮ বিলিয়নের বেশি।এটা অবশ্যই স্বস্তির খবর, বিশেষ করে যারা দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের জন্য।
শিক্ষা বিভাগ বিভিন্ন স্কুলে প্রায় ৬.৫ বিলিয়ন ডলার পাঠায় ১৮টি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামের মাধ্যমে। এর মধ্যে আছে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, দুর্বল শিক্ষার্থীদের সহায়তা, গ্রামীণ স্কুল উন্নয়ন, শিল্পকলার শিক্ষা, স্কুল নিরাপত্তা এবং গৃহহীন শিক্ষার্থীদের সহায়তা।
বাজেট প্রস্তাব বলছে, এসব প্রোগ্রাম একত্র করে একটাই বড় তহবিল করে ফেলা হবে, যার পরিমাণ হবে মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার। প্রশাসনের দাবি, এতে করে স্কুলগুলো নিজেদের প্রয়োজনে অর্থ ব্যয় করার সুযোগ পাবে।
তবে সমালোচকদের আশঙ্কা, একত্রিত এই তহবিলে যদি গৃহহীন শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বরাদ্দ না থাকে, তাহলে তাদের জন্য তহবিল ব্যয় না-ও হতে পারে। স্কুল সুপারিনটেনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে এই ধরনের ছাঁটাইকে “দায়িত্বের বদলে দক্ষতার অজুহাত” বলে উল্লেখ করেছে।
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ IDEA তহবিলের পরিমাণ বাড়িয়ে প্রায় ১৪.৯ বিলিয়ন ডলার করার প্রস্তাব এসেছে বাজেটে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে আগে যে কয়েকটি ছোট প্রোগ্রাম আলাদাভাবে চলত, সেগুলোও মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রকৃত অর্থে বিশেষ শিক্ষার জন্য অতিরিক্ত কোনো অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে না বললেই চলে।
উচ্চশিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা ‘ফেডারেল পেল গ্রান্ট’ কেটে ৭৪০০ ডলার থেকে কমিয়ে ৫৭০০ ডলারে নামানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে একটি চার বছর মেয়াদি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার খরচ বছরে গড়ে ২২ হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
জাতীয় ছাত্র অর্থ সহায়তা সংগঠনের (NASFAA) প্রধান মেলানি স্টোরি এই সিদ্ধান্তকে “উচ্চশিক্ষাকে সবার নাগালের মধ্যে রাখার দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির ওপর আঘাত” বলে উল্লেখ করেছেন।
শুধু পেল গ্রান্ট নয়, শিক্ষার্থীদের পার্ট-টাইম চাকরির সহায়তা হিসেবে যে ‘ফেডারেল ওয়ার্ক-স্টাডি’ প্রোগ্রাম আছে, সেটার বাজেটও কমিয়ে প্রায় ৮০ শতাংশ ছাঁটাই করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মজুরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বহন করতে হবে, যা অনেক প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে।
প্রস্তাবিত বাজেট দেখে স্পষ্ট বোঝা যায়, ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ধীরে ধীরে রাজ্যগুলোর হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। যদিও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য টাইটেল আই-এর মতো কিছু সহায়তা ঠিকই রাখা হয়েছে, তবে অন্যান্য অনেক প্রয়োজনীয় খাতের বাজেট ছাঁটাই ভবিষ্যতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
শিক্ষা বিভাগের ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। কংগ্রেসে এই বাজেট অনুমোদনের প্রক্রিয়া কীভাবে এগোয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে এটুকু পরিষ্কার যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল শিক্ষা সহায়তা যে বড় রকমের পরিবর্তনের পথে হাঁটছে, তা আর অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
সূত্র:https://tinyurl.com/5968zvmk
আফরোজা