ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফ্রান্স কি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির পথ দেখাবে বিশ্বকে?

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ২৮ মে ২০২৫

ফ্রান্স কি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির পথ দেখাবে বিশ্বকে?

ছবি :সংগৃহীত

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে এগোচ্ছেন— এমন ইঙ্গিতেই আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তবে কূটনীতিক ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত এখনো চূড়ান্ত নয় এবং এটি সময়ের আগে নেওয়া হলে তা ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেয়ে বরং পশ্চিমা জোটের মধ্যে আরও বিভাজন তৈরি করতে পারে।

রয়টার্স জানায়, ফ্রান্স ও সৌদি আরব যৌথভাবে আগামী ১৭ থেকে ২০ জুন নিউ ইয়র্কে একটি জাতিসংঘ সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে। ওই সম্মেলনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রোডম্যাপ এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে। এর আগেই ফ্রান্স এই পদক্ষেপের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১,২০০ মানুষ নিহত হওয়ার পর ম্যাক্রোঁ ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তবে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে ৫০,০০০ এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে ফ্রান্সের ভাষা ও অবস্থানে স্পষ্ট পরিবর্তন এসেছে।

এদিকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেওয়া হলে ফ্রান্স হবে প্রথম বড় পশ্চিমা দেশ, যারা এই ধরনের পদক্ষেপ নেবে। বিষয়টি ইসরায়েলের জন্য ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর পারমাণবিক বোমা’ সদৃশ হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন কিছু বিশ্লেষক।

ফ্রান্সের সম্ভাব্য এই স্বীকৃতিকে ঠেকাতে ইসরায়েল কয়েক মাস ধরেই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নেতানিয়াহু ইতোমধ্যেই এই পদক্ষেপের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কানাডা যখন এই মাসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের হুমকি দেয় এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির কথা বলে, তখন নেতানিয়াহু এই দেশগুলোর নেতাদের ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলেও অভিযুক্ত করেন।

ম্যাক্রোঁর উপদেষ্টা আন-ক্লেয়ার লেজঁদ্র বলেছেন, “শুধু কথায় নয়, কাজের মাধ্যমেই শান্তির রাস্তা খুঁজে নিতে হবে। এখন সময় এসেছে দৃশ্যমান ও বাস্তব পদক্ষেপের।” তবে কিছু ইউরোপীয় দেশ মনে করছে, এই স্বীকৃতি এখনই দিলে তা তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না এবং অন্য দেশগুলোকে উৎসাহিতও করবে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তাহলে তা যেন কেবল প্রতীকী না হয়— এর সঙ্গে অবৈধ ইসরায়েলি বসতিতে বাণিজ্য নিষিদ্ধকরণ ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো পদক্ষেপও থাকতে হবে।

ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সৌদি আরবও গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে মুসলিম বিশ্বের ক্ষোভের কারণে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের অবস্থায় নেই। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপদেষ্টা মানাল রাদওয়ান নিউ ইয়র্কে বলেন, “আঞ্চলিক শান্তি শুরু হবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিয়ে। এটি কেবল প্রতীকী নয়, এটি একটি কৌশলগত প্রয়োজন।”

ম্যাক্রোঁর সমালোচকরা বলছেন, স্বীকৃতি দুই-রাষ্ট্রভিত্তিক আলোচনার অংশ হিসেবেই আসা উচিত — আগে নয়। আগেভাগে স্বীকৃতি দিলে তা ফিলিস্তিনিদের আলোচনায় অংশগ্রহণের আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে।

ফরাসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক চাপ বা সমালোচনার কাছে তারা নত হবেন না। এক শীর্ষ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “যদি স্বীকৃতির সঠিক সময় থাকে, তবে এখনই সেই সময়। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ হয়তো ২০২৭ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ইতিহাসে একটি ছাপ রেখে যেতে চান।”

 

সূত্র - https://www.reuters.com/world/middle-east/macron-navigates-rocky-path-recognising-palestinian-state-2025-05-28/

 

 

সা/ই

×