
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা বিদেশি শিক্ষার্থীদের খরচ নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন। তাঁর অভিযোগ, এসব শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা খাতে কোনো অর্থসাহায্য করে না, বরং হাভার্ডসহ অন্যান্য মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদই ব্যবহার করে তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে।
রবিবার সকালে নিজ প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, "হাভার্ড কেন বলছে না যে তাদের প্রায় ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী বিদেশি, অথচ এসব দেশের সরকার, যাদের অনেকেই আমেরিকার বন্ধুও না, এই শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য এক পয়সাও দিচ্ছে না, এমনকি ভবিষ্যতেও দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। এটা তো কেউ আমাদের বলেনি!"
ট্রাম্প আরও বলেন, "আমরা জানতে চাই, এই বিদেশি শিক্ষার্থীরা কারা, সেটা জানা একেবারে যৌক্তিক অনুরোধ, কারণ আমরা হাভার্ডকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়ে থাকি। কিন্তু হাভার্ড কোনো কিছু স্পষ্টভাবে বলছে না। আমরা নাম চাই, দেশ চাই। হাভার্ডের ৫২০০ কোটি ডলার রয়েছে, সেটাই ব্যবহার করুক, আর ফেডারেল সরকারের কাছে সাহায্যের ভিক্ষা না করুক।"
এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এল যখন ট্রাম্প প্রশাসন ও হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের বিষয়ে বিরোধ তুঙ্গে। শুক্রবার একটি ফেডারেল আদালত সাময়িকভাবে প্রশাসনের হাভার্ডের শিক্ষার্থী ভিসা প্রোগ্রাম বাতিলের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ জারি করে। হাভার্ড সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে জানায়, প্রশাসনের নতুন নীতি ৭ হাজারেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থীকে প্রভাবিত করবে, যা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ।
হাভার্ডের মামলায় বলা হয়, "এই পদক্ষেপ সরকারের প্রতিশোধমূলক আচরণের সর্বশেষ উদাহরণ। কারণ হাভার্ড সরকারের নির্দেশ মেনে তার প্রশাসন, পাঠ্যক্রম ও শিক্ষকদের মতাদর্শে হস্তক্ষেপ মেনে নেয়নি। এটি সংবিধানের প্রথম সংশোধনী, যথাযথ প্রক্রিয়া এবং প্রশাসনিক আইন লঙ্ঘনের পরিষ্কার উদাহরণ।"
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ অভিযোগ করে, হাভার্ড তাদের অনুরোধ অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভিসাধারীদের আচরণগত তথ্য, প্রতিবাদে অংশগ্রহণের ভিডিও ফুটেজ ও শাস্তিমূলক রেকর্ড জমা দেয়নি। এসব তথ্যের মধ্যে ছিল গত পাঁচ বছরে কোনো ভিসাধারী শিক্ষার্থী অপরাধ না করলেও প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন কি না, কিংবা কোনো হুমকি বা সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন কি না, এমন তথ্য।
হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের নতুন নীতিকে "দুরভিসন্ধিমূলক" বলে উল্লেখ করে জানায়, এটি দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত রীতি ভঙ্গ করেছে এবং এর জন্য কোনো যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় আরও জানায়, প্রশাসনের এমন আচরণে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জীবন এক ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
হাভার্ডের অন্তত ১২ জন শিক্ষার্থীর ভিসা ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার অভিযোগে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও কংগ্রেসে বলেন, এখন পর্যন্ত সম্ভবত হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে, এবং "আরও বাতিল করতে পেরে আমরা গর্বিত।"
এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির গবেষণাকেন্দ্রিক প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিল স্থগিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। অভিযোগ, হাভার্ড ক্যাম্পাসে অ্যান্টিসেমিটিজম বা ইহুদিবিরোধী আচরণের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি এবং বৈচিত্র্য, সাম্য ও অন্তর্ভুক্তির চর্চা বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রাপ্তির সুযোগ নিয়ে সরকারের কঠোর অবস্থান, হাভার্ডের স্বাধীনতা ও নীতিগত অবস্থান ঘিরে এই সংঘাত ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে থাকতেই পারে।
সূত্র:https://tinyurl.com/3p3v37ax
আফরোজা