ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পৃথিবীর একমাত্র দেশ যা আপনাকে অবাক করবেই

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ২৬ মে ২০২৫

পৃথিবীর একমাত্র দেশ যা আপনাকে অবাক করবেই

ছবিঃ সংগৃহীত

আইসল্যান্ড—একটি দেশ, যাকে কেউ একবার দেখলে মনে রাখে সারাজীবন। কেউ হয়তো ঘুরে এসেছে এই বরফঢাকা জায়গা থেকে, আর কারও ভ্রমণ তালিকায় এর নাম জ্বলজ্বল করছে।
তবে শুধু বরফ বা উত্তরের আলোই নয়, এই দেশটির ভেতরে আছে অজস্র অদ্ভুত, মজার, আর অবাক করা গল্প—যেগুলো জানলে আপনি একদম নতুন চোখে দেখতে শুরু করবেন এই দেশকে। চলুন, আইসল্যান্ডকে একটু কাছ থেকে চিনি—

ভূমির নিচে বেক করা রুটি!
আপনি কি কখনও এমন রুটি খেয়েছেন, যেটা বানানো হয়েছে আগ্নেয়গিরির গরম বালিতে?
আইসল্যান্ডের রাই রুটি বা ‘লাভা ব্রেড’ ঠিক এমনই! মাটির নিচে থাকা প্রাকৃতিক ভূ-তাপে ধীরে ধীরে সেঁকা হয় এই রুটি। যেহেতু এই দেশে ভূ-তাপীয় গরমই এত  স্বাভাবিক, মানুষেরা সেটাকেই কাজে লাগিয়েছে রান্নার জন্য—সহজ আর পরিবেশবান্ধব!

দেশের ৮০% জায়গা একেবারে ফাঁকা!
আইসল্যান্ডের বিশাল এলাকা জুড়েই কোনো জনবসতি নেই।
শুধু ২০% জায়গাতেই মানুষ থাকে, বাকিটা বিশুদ্ধ প্রকৃতি—ঝর্ণা, পর্বত, আগ্নেয়গিরি আর হিমবাহে ঘেরা। আপনি যদি একটু নির্জনতা খুঁজে পান, মানুষের কোলাহল থেকে দূরে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে চান—তাহলে এই দেশ আপনার জন্যই।

সুপার জিপ—যেন প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধের বন্ধু
আইসল্যান্ডে যেসব জায়গায় সাধারণ গাড়ি চলবে না, সেখানেই চলে ‘সুপার জিপ’।
এই গাড়িগুলোর বড় বড় চাকা আর শক্তপোক্ত শরীর সহজেই পেরিয়ে যায় বরফ, নদী আর পাহাড়ি পথ।
সেই সব দূরের জায়গাগুলোতে পৌঁছানোর জন্য যেন প্রকৃতির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা এক বাহন।

গ্রীষ্মকালের ঠাণ্ডা, কিন্তু সহনীয়
আইসল্যান্ড মানেই বরফ আর হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা—এটাই সাধারণ ধারণা।
কিন্তু গ্রীষ্মে এখানে তাপমাত্রা খুবই আরামদায়ক। জুলাই মাসে গড়ে দিনে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর রাতে ৬ ডিগ্রি!
তাই যাঁরা বেশি ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারেন না, তাঁরাও নিশ্চিন্তে গ্রীষ্মে ঘুরে আসতে পারেন।

ভাইকিংদের খাবার, আজও টেবিলে
আইসল্যান্ডের অনেক ঐতিহ্যবাহী খাবারের ইতিহাস হাজার বছর পুরোনো—ভাইকিংদের সময় থেকে চলে আসা।
হাকার্ল, অর্থাৎ ফারমেন্টেড শার্ক মাছ—এই দেশের একটি বিশেষ খাবার। তাজা অবস্থায় এই মাছ খাওয়া বিষাক্ত, তাই মাটির নিচে চাপা দিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে সেটাকে ফারমেন্ট করা হয়। সাহসী না হলে খাওয়াই মুশকিল!

কোকা-কোলা দুনিয়ায় চ্যাম্পিয়ন!
যেখানে স্বাস্থ্যসচেতনতা এত বেশি, সেখানে সবচেয়ে বেশি কোকা-কোলা খাওয়া হয়—ভাবা যায়?
আইসল্যান্ডের প্রতি মানুষ বছরে গড়ে ৪১৭ বোতল কোক পান করে! মানে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৮ বোতল। তুলনায়, আমেরিকায় এই সংখ্যা মাত্র ৩।

টেলিফোন ডিরেক্টরি যেখানে পদবির দরকার নেই
আইসল্যান্ডের মানুষদের সবার নামের শেষে কোনো পারিবারিক পদবি নেই। তাই ফোনবুকেও মানুষদের নাম সাজানো থাকে কেবল তাদের প্রথম নাম ধরে। একটা দারুণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক, ঘনিষ্ঠ সামাজিক সম্পর্ক—যেখানে সবাই যেন একটু করে পরিচিত।

অস্ত্র ছাড়াই নিরাপদ জীবন
আইসল্যান্ডের পুলিশ বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র বা টেজার বহন করে না। তাদের প্রয়োজনও পড়ে না, কারণ এখানে অপরাধের হার অত্যন্ত কম। পৃথিবীর অন্যতম নিরাপদ দেশ এটি—যেখানে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অস্ত্রের চেয়ে বেশি দরকার বিশ্বাস ও সামাজিক সহনশীলতা।

উত্তরের আলো বিক্রি করতে চেয়েছিলেন এক কবি!
আইসল্যান্ডের এক সময়ের কবি ও আইনজীবী আইনার বেনেডিক্টসন একসময় চেষ্টা করেছিলেন “নর্দার্ন লাইটস” বা উত্তরের আলো বিক্রি করতে! তার বিশ্বাস ছিল, আইসল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর সম্পদ বিদেশি বিনিয়োগ এনে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো যেতে পারে। ভাবুন তো, কেউ যদি আকাশের আলো বিক্রি করতে চায়—কী দারুণ কল্পনা!

আইসল্যান্ডের প্রথম নাম ছিল ‘স্নোল্যান্ড’
নাদোডুর নামে এক ভাইকিং ভুল করে এসে পড়েন এই দেশে। তখন ছিল সেপ্টেম্বর মাস, আর পুরো দ্বীপ বরফে ঢাকা। তাই তিনি একে নাম দেন ‘স্নোল্যান্ড’। পরবর্তীতে সেই নাম বদলে হয় ‘আইসল্যান্ড’—যা আজ আমরা চিনি।

এই ছিল আইসল্যান্ডের কিছু হৃদয়ছোঁয়া, চমকপ্রদ গল্প।
এই দেশ কেবল তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেই নয়, বরং তার ইতিহাস, সংস্কৃতি আর জীবনযাপনের ভিন্নতায় প্রতিটি ভ্রমণপিপাসুকে গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়। আপনি যদি সত্যিই প্রকৃতি আর মানবিক গল্প ভালোবাসেন—আইসল্যান্ড একবার দেখে আসতেই হবে।
 

মারিয়া

×