
ছবিঃ সংগৃহীত
নির্বাচনের আগে একের পর এক জনসভায় দাঁড়িয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প সাহসের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন — “সিনিয়র সিটিজেনদের সোশ্যাল সিকিউরিটির ওপর আর কোনো কর থাকবে না।” এটা ছিল অনেক অবসরপ্রাপ্ত আমেরিকানদের জন্য একরকম স্বস্তির আশ্বাস। কিন্তু এখন, যখন তিনি আবার হোয়াইট হাউসে ফিরেছেন, দেখা যাচ্ছে সেই প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
কি বলেছিলেন ট্রাম্প?
গত বছর অক্টোবর মাসে অ্যারিজোনায় এক জনসভায় বলেছিলেন:
“সিনিয়রদের জন্য আর কোনো সোশ্যাল সিকিউরিটি ট্যাক্স থাকবে না — এবং এটা আপনারা প্রাপ্য।”
এরপর নভেম্বরেও একই কথা বলেছিলেন, আবার সম্প্রতি ফক্স নিউজে শান হ্যানিটির সঙ্গে কথা বলার সময়ও ট্রাম্প জোর দিয়ে বললেন, “সোশ্যাল সিকিউরিটির ওপর কর থাকবে না — এটা দারুণ ব্যাপার।”
কিন্তু বাস্তবটা কেমন?
এখন যা হচ্ছে, সেটা আসলে তার প্রতিশ্রুতির ছায়াও নয়। হাউস রিপাবলিকানদের নতুন ট্যাক্স পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, অবসরপ্রাপ্তদের জন্য $৪,০০০ ডলার পর্যন্ত ইনকাম ট্যাক্স ডিডাকশন থাকবে — অর্থাৎ বেশিরভাগ মানুষ বছরে সর্বোচ্চ $৪৮০ কর ছাড় পাবেন। অথচ ট্রাম্প বলেছিলেন, পুরোপুরি কর মওকুফ হবে।
সেই প্রতিশ্রুতি থাকলে কত উপকার হতো?
যেসব অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি বেশি সোশ্যাল সিকিউরিটি পান (কারণ চাকরি জীবনে তাঁদের আয় ভালো ছিল), তাঁরা এই প্রতিশ্রুতি থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হতেন।
উদাহরণস্বরূপ:
যাঁরা বছরে $৪৫,০০০ সোশ্যাল সিকিউরিটি পান, তাঁরা বছরে $১৪,০০০-এর বেশি কর ছাড় পেতেন।
যাঁদের মোট আয় $১০০,০০০, তাদেরও প্রায় $৮,৪০০ ছাড় হতো।
কিন্তু এখনকার পরিকল্পনায় তাঁরা পাবেন মাত্র $১,৪৮০ বা $৮৮০। আর যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত, তাঁদের জন্য করছাড় দাঁড়াচ্ছে মাত্র $৪৮০।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা আসলে একধরনের প্রতারণা
অর্থনীতিবিদ জেসন ফারম্যান বলছেন, “এই পরিকল্পনা মূলত এক ধরনের ‘বেইট অ্যান্ড সুইচ’। বেশিরভাগ অবসরপ্রাপ্ত এমনিতেই সোশ্যাল সিকিউরিটির ওপর খুব সামান্য কর দেন বা দেনই না। তাই কর পুরোপুরি মাফ করার কথা বলে ভোট নেওয়া এবং পরে অল্প ছাড় দেওয়া — এটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।”
কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন?
যাঁরা জীবনে কম আয় করেছেন, এখন কম সোশ্যাল সিকিউরিটি পান, তাঁদের ওপরই এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। কারণ পুরো কর মওকুফ হলে তাঁরা কিছুটা হলেও বাড়তি সঞ্চয় করতে পারতেন।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া কী?
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প অতীতে বারবার দেখিয়েছেন — যে নীতিগুলো সরাসরি তাঁকে উপকার দেয় না, সে বিষয়ে তাঁর খুব একটা আগ্রহ থাকে না।
যে প্রতিশ্রুতি ছিল অনেক অবসরপ্রাপ্ত আমেরিকানদের জন্য আশার আলো, তা এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে ভুল বোঝানো একটি রাজনৈতিক কৌশল। সামান্য এক করছাড়ের পরিকল্পনা দিয়ে ট্রাম্প আর তাঁর দল সেই বড় প্রতিশ্রুতিকে গিলে ফেলেছেন। নির্বাচনের আগে যা শোনা গিয়েছিল, তার তুলনায় বাস্তব এখন অনেকটাই ফিকে।
মারিয়া