
ছবিঃ সংগৃহীত
কাশ্মীরের তরুণদের মধ্যে একসময় জনপ্রিয় ছিল ‘আজাদি’, অস্ত্র বা বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের নাম লেখা ট্যাটু। এগুলো ছিল ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি বদলেছে—ট্যাটু এখন আতঙ্কের কারণ। ভারতের দমন-পীড়ন ও নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় হাজারো কাশ্মীরি তরুণ এসব ট্যাটু লেজার দিয়ে মুছে ফেলছেন।
শ্রীনগরের এক লেজার ক্লিনিকে বসে নিজের হাতে 'আজাদি' শব্দটি মুছে ফেলছিলেন সামির ওয়ানি। ২৮ বছর বয়সী এই তরুণ বললেন, আগে এটি ছিল প্রতিবাদের প্রতীক, এখন তা ভবিষ্যতের জন্য হুমকি।
পেহেলগামে ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়। ভারত ‘সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর পর থেকেই কাশ্মীরে দমন-পীড়ন আরও বাড়ে। গ্রেফতার হয় ১,৫০০-র বেশি মানুষ। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত ট্যাটুর কারণে সন্দেহভাজন হয়ে উঠছে অনেকেই।
শোপিয়ানের রাইয়েস ওয়ানি বলেন, “বন্ধুরা পর্যন্ত এখন জিজ্ঞাসা করে ট্যাটু নিয়ে। পুলিশ, প্রতিবেশী, সবাই আলাদা চোখে দেখে।” পুলওয়ামার ১৯ বছরের আর্সালান বলেন, রাজনৈতিক বার্তা-সম্পন্ন ট্যাটু থাকলে এখন প্রোফাইলিং বা হয়রানির শঙ্কা বেড়েছে।
তবে শুধু রাজনৈতিক ঝুঁকি নয়, ধর্মীয় অনুশোচনা, পেশাগত ভবিষ্যৎ এবং ব্যক্তিগত বিকাশও ট্যাটু মুছে ফেলার কারণ। কেউ কেউ বলেন, আগে যা ছিল সাহসের প্রতীক, এখন তা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাধা।
শ্রীনগরের জনপ্রিয় ট্যাটু শিল্পী মুবারক বশির জানান, ২০১৯ সালে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে হাজার হাজার ট্যাটু মুছে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। এখন এক মাস আগেই লেজার সেশনের বুকিং নিতে হয়।
সামির ওয়ানি বলেন, “আমি কাঁদিনি যখন ট্যাটু করিয়েছিলাম, কেঁদেছি যখন সেটা মুছেছি। এটা ছিল আমার জীবনের একটা অধ্যায়, যেটা আমি এখন পেছনে ফেলতে চাই।”
আজ ‘আজাদি’ শব্দটি শুধু একটি ক্ষীণ দাগ হয়ে রয়ে গেছে তার হাতে। কিন্তু মন থেকে মুছে যাক বা না যাক, তিনি এখন অন্যরকম এক জীবনের পথে হাঁটছেন—যেখানে অতীত নয়, শান্ত ভবিষ্যৎই প্রাধান্য পাবে।
মুমু