
ছবি : জনকণ্ঠ
হিমালয়ের পাদদেশীয় দেশের উত্তরের নদ-নদী বেষ্টিত সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম। জীবনের প্রয়োজনে এ অঞ্চলের মানুষ প্রত্যন্ত গ্রামের পুকুরে বাংলা বা দেশীয় মিশ্রিত মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ করে সফলতা পেয়েছে। এতে করে মাছ চাষের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলেছে কুড়িগ্রামে। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে এটি অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বৈদ্যের বাজার এলাকায় পল্লব চন্দ্র রায়ের ৪০ শতক একটি পুকুরে জেলেরা জাল টানছে। পুকুর পাড়ে জালে ধরা মাছ আনতেই স্থানীয়রা অবাক হয়ে যায় বড় বড় সাইজের গলদা চিংড়ি দেখে! কিছুটা আশ্চর্য হওয়ার মতোই মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ির চাষ। জেলায় প্রথমবারের মতো কার্প, পাঙ্গাস, সিলভার কাপসহ দেশীয় জাতের মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। কার্প জাতীয় মাছের তুলনায় এ জাতীয় মাছ চাষে অধিক লাভ পাওয়া যাচ্ছে।
প্রায় ৭ মাস আগে পিএল সাইজের ৬০০ পিস গলদা চিংড়ি ছাড়া হয় পুকুরে। মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষে সফলতা দেখে খুশি স্থানীয়রাও। অন্যান্য মাছের সাথে চিংড়ি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। এতদিন পুকুরে শুধু কার্প জাতীয় মাছ চাষ হতো। আরডিআরএস বাংলাদেশের সহায়তায় প্রথমবারের মতো দেশীয় কার্প জাতীয় মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন মৎস্যচাষীরা। এক খাবারেই পুকুরের সব মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় আগ্রহী হচ্ছেন মৎস্যচাষীরা। রফতানিযোগ্য গলদা চিংড়ি চাষ এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে মৎস্যচাষীরা লাভবান হবেন এবং কুড়িগ্রাম জেলার অর্থনীতিতে যোগ হবে নতুন মাত্রা।
মৎস্যচাষী পল্লব চন্দ্র রায় বলেন, “প্রতি কেজিতে ৮/১০টি করে গলদা চিংড়ি উঠছে। বর্তমানে ১২০০ টাকা কেজি বাজার দরে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় করবো বলে আশা করছি। মাছ চাষে মাছের খাবারসহ পুকুর প্রস্তুতকরণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫-৩০ হাজার টাকা। সময়মতো খাবার ও সঠিক পরিচর্যা করায় মাছের ওজনও ভালো হয়েছে। এক খরচে বাড়তি দেশীয় মাছ বিক্রি করে আরও লক্ষাধিক টাকা আয় হবে।”
মাধবী রাণী বলেন, “বাজারে গলদা চিংড়ির দাম বেশি। গরিব মানুষের সামর্থ্যের বাইরে এই মাছ। জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে এই মাছ খাওয়া এখন স্বপ্নের মতো। তবে এখন নিজের পুকুরে দেশীয় মাছের সাথে বাড়তি খরচ না করেই গলদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। সাইজেও বড়, খেতেও সুস্বাদু।”
স্থানীয় মৎস্যচাষীরা বলেন, “বাংলা বা দেশীয় মাছের সাথে গলদা চিংড়ি চাষ হয়—এটা আমাদের জানা ছিল না। কিন্তু পল্লব রায়ের পুকুরে গলদা চিংড়ির চাষ দেখে আমরা অবাক হয়েছি। আগামীতে আমাদের নিজের পুকুরেও এই মাছ চাষ করবো।”
স্বপ্না রাণী বলেন, “সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পেলে আমাদের গ্রামে আরও অনেক পুকুর আছে, সেখানে গলদা চিংড়ি চাষ করা সম্ভব।”
আরডিআরএস বাংলাদেশের টেকনিক্যাল অফিসার মোজাম্মেল হক বলেন, “কুড়িগ্রাম সদর ও রাজারহাট উপজেলার ১০ জন চাষীর প্রায় চার একর পুকুরে ছয় হাজার পিস গলদা চিংড়ির চাষ হয়েছে। কার্প জাতীয় মাছের সাথে গলদা চিংড়ির মিশ্র চাষের জন্য খুবই অনুকূল পরিবেশ রয়েছে এই জেলায়। তাই গলদা চাষ অত্যন্ত লাভজনক ও সম্ভাবনাময়। আগামীতে আমরা গলদা চিংড়ি চাষে প্রসারের পরিকল্পনা করছি।”
রাজারহাট উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, “সরকারি-বেসরকারিভাবে গলদা চিংড়ি চাষে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। জেলায় ২৬ হাজারের অধিক পুকুরে সাড়ে ২০ হাজার চাষী মাছ উৎপাদন করছেন।”
সা/ই