
ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, গাজা উপত্যকার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইসরায়েল ‘সীমিত’ পরিমাণ মানবিক সহায়তা আবার চালু করবে।
সোমবার (১৯ মে) এই ঘোষণা দেন তিনি। তিনি সতর্ক করে বলেন, গাজায় ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তা ইসরায়েলের জন্য কূটনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে এবং মার্কিন সমর্থন হারানোর কারণ হতে পারে।
সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা গাজা উপত্যকার পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য শক্তিশালী সামরিক পদক্ষেপ নিচ্ছি, তবে বাস্তব ও কূটনৈতিক কারণেই আমরা এমন পরিস্থিতিতে পৌঁছাতে পারি না যেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।”
তিনি বলেন, ইসরায়েলের ‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা’, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকরা, এখনো দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে চলেছেন, তবে তারা “দুর্ভিক্ষের ছবি সহ্য করতে পারছেন না।”
ব্রিটেন, কানাডা ও ফ্রান্স এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় মানবিক বিপর্যয় ‘সহ্যসীমার বাইরে’ চলে গেছে এবং ইসরায়েল যদি সামরিক অভিযান বন্ধ না করে ও খাদ্য সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেয়, তবে তারা ‘নির্দিষ্ট পদক্ষেপ’ নেবে।
তারা আরও জানায়, “নেতানিয়াহু সরকার যদি এই কঠোর পদক্ষেপ চালিয়ে যায়, তাহলে আমরা চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকব না।”
গাজায় হামাসের সঙ্গে আট সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির পর গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল সব খাদ্য, জ্বালানি ও সহায়তা বন্ধ করে দেয়। তবে সোমবার ইসরায়েল আবার সীমিত সহায়তা চালু করার নির্দেশ দেয়।
দুটি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র গোপন আলোচনায় হামাসকে আশ্বাস দেয় যে, যদি তারা ২১ বছর বয়সী আমেরিকান-ইসরায়েলি জিম্মি এড়ান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেয়, তবে ইসরায়েল কিছু ত্রাণ ঢুকতে দেবে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সিওজিএটি বিভাগ জানায়, সোমবার পাঁচটি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে, যার মধ্যে ছিল শিশু খাদ্য।
তবে জাতিসংঘের জরুরি সহায়তা সমন্বয়ক টম ফ্লেচার এক বিবৃতিতে বলেন, “এটা সাগরে এক ফোঁটা জল।”
নেতানিয়াহু জানান, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি নতুন ত্রাণ সরবরাহ ব্যবস্থা গঠিত হবে যেখানে বেসরকারি আমেরিকান কন্ট্রাক্টররা সরবরাহকেন্দ্র পরিচালনা করবে এবং জাতিসংঘকে বাইপাস করবে। তবে ২০টিরও বেশি দাতা দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা এই ব্যবস্থায় অংশ নেবে না, কারণ এটি মানবিক সহায়তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে যুক্ত করছে।
নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় বিতর্ক সৃষ্টি করে। নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গিভির বলেন, “তিনি মারাত্মক ভুল করছেন।” তবে আরেক কট্টর ডানপন্থী নেতা অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেন, “এই সহায়তা গাজাবাসীদের খাওয়াবে, আমাদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এবং আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারব।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ১৯ মাসের যুদ্ধে ৫৩,৩০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। সোমবার ইসরায়েল খানের ইউনিসে ব্যাপক হামলা চালায় এবং বাসিন্দাদের উপকূলবর্তী এলাকা মাওয়াসিতে আশ্রয় নিতে নির্দেশ দেয়।
“দৃশ্যপট ভয়াবহ-বিচার দিবসের মত,” বলেন স্থপতি মালিক শিবারী, যিনি সন্তানদের নিয়ে পালিয়ে এসেছেন।
তিনি জানান, “মানুষজন হাঁটতে হাঁটতে এখানে আসছে, কারও কাছে তাবু পর্যন্ত নেই।”
সূত্র: https://www.washingtonpost.com/world/2025/05/19/israel-gaza-aid-netanyahu/
মিরাজ খান