
ছবি :সংগৃহীত
ধনীরা সমাজের দুর্দশা থেকে নিজেদের লাভ বের করে আনে এবং সমাজে দুর্দশা আরও বাড়ায় - এমনটাই দাবি করছেন সমাজ ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা ।
'প্যাট্রিয়টিক মিলিওনিয়ার্স ইউকে'-এর সদস্য জুলিয়া ডেভিস এর মতে, যুক্তরাজ্যের ধনীদের অস্বাভাবিকভাবে সম্পদ বাড়ার কারণ হলো—তারা সমাজের দুর্দশা থেকে লাভ করছে এবং সেই দুর্দশা আরও বাড়াচ্ছে। এতে করে তারা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যেমন: কার্বন নির্গমন কমানো, লন্ডনের বাইরের এলাকায় অর্থনীতি ছড়িয়ে দেওয়া, গৃহসংকট দূর করা, পরিবেশবান্ধব নতুন শিল্প গড়ে তোলা এবং স্থানীয় কমিউনিটিকে শক্তিশালী করা।
জুলিয়া ডেভিস বলেন, "অতিরিক্ত সম্পদ এখন টিকে থাকার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের টিকে থাকতে হলে অর্থনৈতিক কাঠামো পাল্টাতে হবে এবং এমন নীতি আনতে হবে যাতে আর কোনো বিলিয়নিয়ার তৈরি না হয়।"
তিনি আরও বলেন, "ধনীদের ধনী তালিকায় থাকা লজ্জার বিষয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত । এইভাবে ধন-সম্পদ কেবল অল্প কিছু মানুষের হাতে জমা হওয়া পুরো সমাজের জন্য ক্ষতিকর। অনেক মানুষ আমাদের সন্তানদের শিক্ষা দেয়, স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে রাখে—তারা তো এত সম্পদ পান না।"
তিনি আরও বললেন, ধনীদের অনেক সময় "চাকরির স্রষ্টা" বলা হয়, কিন্তু আমি তাদের বলি ‘চাকরি ধ্বংসকারী’। কারণ, তারা যখন অনেকগুলো ব্যবসা একত্রে নিজের হাতে নেয়, তখন ছোট ছোট ব্যবসা টিকতে পারে না। বড় চেইন ব্যবসাগুলো সস্তায় বিক্রি করে বাজার দখল করে নেয়।
আরেকটি বড় সমস্যা হলো—তারা এত ভালোভাবে ট্যাক্স (কর) ফাঁকি দেয় যে সাধারণ মানুষ আর ছোট ব্যবসাগুলোর তুলনায় অনেক কম ট্যাক্স দেয়, ফলে রাষ্ট্রের আয় কমে যায়।
এদিকে নিউ ইকোনমিকস ফাউন্ডেশনের রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ ফারনান্ডা বালাতা বলেন— যুক্তরাজ্য এমন এক অর্থনৈতিক পথে গেছে যেখানে কিছু অতি ধনী মানুষকে সবার ওপরে রাখা হয়েছে। এটা দুর্ঘটনাবশত হয়নি, ইচ্ছাকৃতভাবে হয়েছে। ধনীদের ও প্রভাবশালীদের মধ্যে এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে যে তা এখন সরকারি প্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়েছে।
‘Extreme Wealth Line’ (অত্যধিক ধন-সম্পদের একটি সীমা) নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেন তিনি ।
ড. বেঞ্জামিন টিপেট, অর্থনীতিবিদ ও ধন-বৈষম্য বিশেষজ্ঞ, কিংস কলেজ লন্ডনের শিক্ষক দেখিয়েছেন,
যদি ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ধনীদের ওপর বছরে ২% হারে সম্পদ কর (wealth tax) আরোপ করা হতো, তাহলে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫৫ বিলিয়ন পাউন্ড রাজস্ব পাওয়া যেত। যদি এই অর্থ বিনিয়োগ করা হতো, তাহলে এখন তার মূল্য ৩২৫ বিলিয়ন পাউন্ড হতো—যা প্রতিটি পরিবারকে গড়ে ১১ হাজার পাউন্ডের বেশি দিতে পারত। তবুও, এই কর দেওয়ার পরও ধনীদের মোট সম্পদ বেড়েই যেত।
সা/ই