
অনিবন্ধিত ১ লাখ ৪০ হাজার
কোনো কারখানায় পাঁচজন বা তার বেশি শ্রমিক থাকলে সেই কারখানাকে শ্রম আইনের আওতায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) থেকে নিবন্ধন নিতে হয়। অন্য যে কোনো ধরনের দোকান ও প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন লাগে কোনো শ্রমিক না থাকলেও।
অর্থাৎ, কোনো দোকান মালিক এককভাবে চালালেও তাকে নিবন্ধন নিতে হবে। এমন নিয়ম থাকলেও দেশের সিংহভাগ কারখানা, দোকান ও প্রতিষ্ঠান এখনো নিবন্ধনের বাইরে। সারাদেশের মাত্র ৯৪ হাজার ৫১৫টি কারখানা, দোকান ও প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত। অনিবন্ধিত প্রায় দেড় লাখ।
এ পরিস্থিতিতে দেশের সব কারখানা, প্রতিষ্ঠান ও দোকান শ্রম আইনে নিবন্ধের আওতায় আনতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। প্রাথমিকভাবে ঢাকা জেলার সব আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, সুপারশপ, শপিংমল ও বড় মার্কেটের দোকান নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব জায়গায় এ কার্যক্রম শুরু করা হবে। শ্রম ও কর্মংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
যা বলছে প্রতিবেদনের তথ্য ॥ সারাদেশের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত কারখানা, দোকান ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে শ্রম ও কর্মংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। সারাদেশে অবস্থিত ৩১টি উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয়ের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে ডিআইএফই। এতে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময়ের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, আমাদের হিসাবে সারাদেশে দোকান আছে প্রায় ৭২ লাখ। কারখানা এই হিসাবের বাইরে। শুধু দোকানই আছে ৭২ লাখ। সুতরাং, সারাদেশে যদি আড়াই লাখের মতো কারখানা, দোকান ও প্রতিষ্ঠান আছে বলা হয়, তাহলে সেই তথ্য সঠিক নয়। শুধু ঢাকায়ই আড়াই লাখের বেশি আছে।
এই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে নিবন্ধিত কারখানা, দোকান ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯৪ হাজার ৫১৫টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক (আরএমজি) কারখানা তিন হাজার ২৪৮টি ও নন-আরএমজি কারখানা ৪৫ হাজার ১৪৬টি। এ ছাড়া দোকান ২৬ হাজার ৯৯৬টি এবং প্রতিষ্ঠান ১৯ হাজার ১২৫টি।
অপরদিকে অনিবন্ধিত কারখানা, দোকান ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক লাখ ৪০ হাজার ২৬টি। এর মধ্যে দোকানের সংখ্যা এক লাখ ২৪ হাজার ৭৮৯টি এবং প্রতিষ্ঠান ৮ হাজার ৮৯৯টি। কারখানার সংখ্যা ৬ হাজার ৩৩৮টি। এর মধ্যে আরএমজি কারখানা ৮৫টি এবং নন-আরএমজি কারখানা ৬ হাজার ২৫৩টি।
সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত ॥ তবে অনিবন্ধিত কারখানা, দোকান ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর যে তথ্য দিয়েছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সারাদেশে দোকানের সংখ্যাই ৭০ লাখের ওপরে। সব মিলিয়ে কারখানা, দোকান ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় এক কোটি হবে। সেখানে ৯৪ হাজার ৫১৫টি নিবন্ধিত এবং এক লাখ ৪০ হাজার ২৬টি অনিবন্ধিত দেখানো হচ্ছে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে আড়াই লাখও হচ্ছে না, এ সংখ্যাটি হাস্যকর।
সারাদেশে কত সংখ্যক কারখানা, দোকান ও প্রতিষ্ঠান আছে, সে বিষয়ে আপনাদের কোনো সার্ভে আছে কি? শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ডিআইএফই বলতে পারবে। আপনি ডিআইএফই-এ খোঁজ নেন।’ এ সময় ডিআইএফের তথ্য তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, আমাদের পারফেক্ট কোনো স্ট্যাটিস্টিক নেই। আমাদের ইন্সপেক্টররা বিভিন্ন জায়গায় আছেন। ওরা পর্যায়ক্রমে সমস্ত ডাটা সংগ্রহ করবে। নিবন্ধনের আওতায় আনতে আমরা বসুন্ধরা, যমুনা ফিউচার পার্ক থেকে শুরু করে এখন বড় বড়গুলো ধরছি। আমাদের জনবলেরও সংকট আছে।’
আপনাদের হিসাবে ঢাকায় ১১ হাজার ১৮০টি কারখানা, দোকান ও প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত এবং ২৫ হাজার ২৯৫টি অনিবন্ধিত। ঢাকায় অনিবন্ধিতের যে সংখ্যা দেওয়া হচ্ছে তা কম মনে হচ্ছে কি না? এমন প্রশ্ন করা হলে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ঢাকা কার্যালয়ের উপমহাপরিদর্শক মো. আতিকুর রহমান বলেন, ‘অবশ্যই কম। আমরা রেগুলার পরিদর্শনে গিয়ে যে তথ্য পাচ্ছি, তার ভিত্তিতে তথ্য দেওয়া হচ্ছে। সার্ভে করার মতো সক্ষমতা বা লোকবল ডিআইএফইর নেই।’
এদিকে ডিআইএফইর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় নিবন্ধিত আরএমজি কারখানা ৬৯৫টি ও নন-আরএমজি কারখানা দুই হাজার ৬৭৫টি। আর পাঁচ হাজার ৫৭০টি দোকান ও দুই হাজার ২৪০টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত। চট্টগ্রামে নিবন্ধিত ২৮৯টি আরএমজি ও তিন হাজার ৭১১টি নন-আরএমজি এবং তিন হাজার ৯৮৪টি দোকান ও দুই হাজার ৪০টি প্রতিষ্ঠান। গাজীপুরে এক হাজার ১২৫টি আরএমজি ও এক হাজার ৫১৯টি নন-আরএমজি এবং ৪৩০টি দোকান ও ১০৯টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত।
শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান, এ কারণেই আমরা সবাইকে নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা বলছি। সবাই নিবন্ধিত থাকলে তো এটা বলতে হতো না। যেহেতু সবাই নিবন্ধিত নয়, সে জন্য সবাইকে আমরা নিবন্ধনের আওতায় আনতে চাচ্ছি। আপাতত আমরা ঢাকায় কার্যক্রম শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এই কার্যক্রম চালাব।