ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পোল্যান্ডে ভোটযুদ্ধ, জয়ী হলে অচল হবে সরকার!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:০৭, ১৮ মে ২০২৫

পোল্যান্ডে ভোটযুদ্ধ, জয়ী হলে অচল হবে সরকার!

ছবি: সংগৃহীত

বিদেশনীতি, সমকামী অধিকার ও গর্ভপাত প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের শাসনামলে এসব ইস্যুতে তুমুল বিতর্ক দেখা দিয়েছে। পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, যেখানে রাজধানী ওয়ারশোর উদারপন্থী মেয়র এবং এক রক্ষণশীল ইতিহাসবিদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে।

রবিবার সকাল ৭টা (বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টা) থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। স্থানীয় সময় রাত ৯টা (বাংলাদেশ সময় রাত ১টা) ভোটগ্রহণ শেষে প্রাথমিক ফলাফল (এক্সিট পোল) প্রকাশের কথা রয়েছে। চূড়ান্ত ফল সোমবার প্রকাশিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন ইউরোপপন্থী ওয়ারশোর মেয়র রাফাল ট্রাশকভস্কি এবং জাতীয়তাবাদী দল ল অ্যান্ড জাস্টিস সমর্থিত ইতিহাসবিদ কারোল নাভরক্কি। দলটি ১৮ মাস আগে ক্ষমতা হারায়।

কোনো প্রার্থীর জন্য ৫০ শতাংশ ভোট পাওয়া কঠিন মনে করা হচ্ছে। ফলে আগামী ১ জুন দ্বিতীয় দফা (রান-অফ) ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই নির্বাচন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এই কারণে যে, জনগণ ইউরোপপন্থী প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের নীতিকে সমর্থন করবে কিনা, নাকি ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির জাতীয়তাবাদী পথে ফিরে যেতে চায়।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে টাস্ক ল অ্যান্ড জাস্টিসকে হারিয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য, দলটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একাধিক সংঘাতে জড়িয়েছিল।

পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট পদটি সীমিত নির্বাহী ক্ষমতা বহন করে। তবে প্রেসিডেন্ট দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, বিদেশনীতি নির্ধারণে ভূমিকা পালন করেন এবং পার্লামেন্টে পাস হওয়া বিল ভেটো দিতে পারেন।

পোল্যান্ড, ইউক্রেন সীমান্তবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ নেটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সদস্য রাষ্ট্র সেখানে নিরাপত্তা ইস্যুতে উদ্বেগ বেড়েছে। এর ফলে প্রচারে বিদেশনীতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের শাসনামলে দুর্বল হয়ে পড়বে কিনা। এ নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। টাস্কের মধ্যমপন্থী দল সিভিক প্ল্যাটফর্মের উপনেতা ট্রাশকভস্কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে পোল্যান্ডের ভূমিকা জোরদার করবেন। অন্যদিকে, ল অ্যান্ড জাস্টিস প্রায়ই ব্রাসেলসের সঙ্গে সংঘাতে জড়াতো আইনের শাসন বিষয়ক কারণে।

তিনি বলেন, “আমি অবশ্যই নেটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে আমাদের অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করব।” শুক্রবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন টিভিপি ইনফো-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে।

সমাজ ইস্যুতে দ্বিমত নির্বাচনী প্রচারে সমাজসংক্রান্ত ইস্যুগুলোর গুরুত্ব ছিল। নাভরক্কি নিজেকে রক্ষণশীল মূল্যবোধের রক্ষক হিসেবে তুলে ধরেছেন, আর ট্রাশকভস্কি গর্ভপাত ও সমকামী অধিকার সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে উদারপন্থী ভোটারদের আকৃষ্ট করেছেন।

৪১ বছর বয়সী পর্যটন সংস্থার কর্মী মালগোজাতা মিকোসজেভস্কা এএফপিকে বলেন, “আমি ট্রাশকভস্কির সামাজিক ইস্যুতে উদার অবস্থানের ভক্ত। আমি গর্ভপাত ও যৌন সংখ্যালঘুদের অধিকার বিষয়ে আইনের উদারীকরণ প্রত্যাশা করি।”

নাভরক্কি এ মাসে হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কিছুটা সুবিধা পেলেও পরে বিতর্কে জড়ান। অভিযোগ ওঠে, তিনি গদানস্ক শহরে এক বৃদ্ধ ব্যক্তির কাছ থেকে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তাঁর আজীবন দেখাশোনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, যা বাস্তবায়ন করা হয়নি। নাভরক্কি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

নির্বাচনের সময়ে বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছে পোলিশ কর্তৃপক্ষ। এতে টাস্কের জোটভুক্ত দলগুলোর ওয়েবসাইটে ডিওএস হামলা এবং ফেসবুকে বিদেশি অর্থায়নে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আন্না মাতের্সকা-সোসনোভস্কা বলেন, “নাভরক্কি প্রেসিডেন্ট হলে সরকার অচল হয়ে পড়বে এবং তাতে শাসক জোট ভেঙে পড়তে পারে।” তিনি আরও বলেন, “তাঁর বিজয়ে আগামী সাধারণ নির্বাচনে জনপ্রিয়তাবাদীরা নতুন করে শক্তি নিয়ে ফিরে আসবে।” বর্তমান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা দুই মেয়াদ পূর্ণ করেছেন এবং আইন অনুযায়ী আর নির্বাচন করতে পারছেন না।

শহীদ

×