ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হাজারো মানুষের সামনে পোপ যা বললেন, তা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিল

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:৩৫, ১৮ মে ২০২৫

হাজারো মানুষের সামনে পোপ যা বললেন, তা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিল

ছবি: সংগৃহীত

শপথগ্রহণের পর অনুষ্ঠিত মেস শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন পোপ লিও চতুর্দশ এ তথ্য জানিয়েছে ভ্যাটিকান। নবনির্বাচিত এই ক্যাথলিক ধর্মগুরু তাঁর প্রথম প্রার্থনায় ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “নির্যাতিত ইউক্রেন ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির জন্য আলোচনার প্রতীক্ষায় রয়েছে।”

সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে উপস্থিত হাজারো মানুষের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে পোপ দরিদ্রদের বঞ্চনা এবং একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। পোপকে তাঁদের সঙ্গে করমর্দন করতে দেখা যায়।

মেসে পোপ বলেন, “ঘৃণা, সহিংসতা, কুসংস্কার, পারস্পরিক ভিন্নতার ভয় এবং এমন এক অর্থনৈতিক ধারা যা পৃথিবীর সম্পদ শোষণ করে এবং দরিদ্রদের প্রান্তিক করে। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান নিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমি শাসন করব কখনোই একনায়ক হবার প্রলোভনে পা না দিয়ে।”

পোপ যখন তাঁর দাপ্তরিক প্রতীক গ্রহণ করেন, তখন হাজারো তীর্থযাত্রী দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি সবাইকে আশীর্বাদ দেন এবং ঐক্যের একটি শক্ত বার্তা প্রদান করেন। মেস শুরুর আগে পোপ যখন তাঁর ‘পোপমোবাইল’ গাড়িতে চড়ে সেন্ট পিটার্স স্কয়ার হয়ে ভিয়া দেলা কনসিলিয়াজিওনে রাস্তায় টাইবার নদীর দিকে যান, তখন ভক্তদের মধ্য থেকে উল্লাসধ্বনি শোনা যায়।

স্কয়ারজুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। জার্মানির মিশেল বিবিসিকে বলেন, “আমি শুধুই পোপকে দেখার জন্য এসেছি। গতকাল সকালেই এসেছি, কিছুক্ষণের মধ্যে চলে যাব। খুবই ব্যস্ত সময়, কারণ এখানে প্রচুর মানুষ। কিন্তু আমি পোপকে দেখতে চেয়েছিলাম।”

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কয়েক হাজার মানুষের বেশিরভাগই ছিলেন ক্যাথলিক, তবে অনেক পর্যটকও ইতিহাসের সাক্ষী হতে এসেছিলেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির বাসিন্দা জো বলেন, “আমরা ছুটিতে এসেছি, কিন্তু সময়টা একেবারেই সঠিক হয়েছে। আমরা পোপের প্রথম মেস দেখতে এসেছি। এটা খুবই বিশেষ। আমরা আগে এসেছিলাম বলে ভালো লাগছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি বিশেষভাবে গর্বিত, কারণ তিনিই প্রথম মার্কিন পোপ। এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। তিনি একজন চমৎকার পোপ হবেন। আমি এখন আর ক্যাথলিক নই, তবে আমি ক্যাথলিক পরিবেশেই বড় হয়েছি, তাই যেকোনো খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতেই এটি অনুপ্রেরণাদায়ক।” ভিড়ের মধ্যে ছিলেন চিলির পিয়া, যিনি রোমের পন্টিফিকাল ইউনিভার্সিটি অব দ্য হোলি ক্রস-এ দর্শনের অধ্যাপক। তিনি বিবিসিকে বলেন, “চার্চের মধ্যে যেন এক নতুন আশার জন্ম হয়েছে।”

পিয়া বলেন, পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর প্রথম কথাগুলোর মধ্যে ছিল “শান্তি তোমাদের সঙ্গে থাকুক”—যা যিশুর বাণী। এরপর তিনি বলেন, “ভয় পেয়ো না।” “তিনি জানেন বিশ্ব ও গির্জা কী চাইছে—একটি গির্জা, যা শান্তি ও আশার বার্তা দেয়। আমি মনে করি, অনেক মানুষই সেটাই অপেক্ষা করছে,”—বলেন পিয়া।

মেস শেষে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। এ সময় পোপের কাঁধে রাখা হয় ‘প্যালিয়াম’ নামে পরিচিত সাদা উলযুক্ত এক বিশেষ কাপড়, যা তিনটি পিন দিয়ে আটকানো হয়—ক্রুশের তিনটি পেরেককে প্রতীক করে।

পরে ফিলিপাইনের কার্ডিনাল লুইস আন্তোনিও টাগলে পোপের হাতে পরিয়ে দেন ‘রিং অব দ্য ফিশারম্যান’—যেখানে খোদিত থাকে সেন্ট পিটার-এর প্রতিকৃতি, যা পোপীয় ক্ষমতার প্রতীক।

শহীদ

×