ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরিয়ে দেয়া হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান বিচারককে

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ১৮ মে ২০২৫

সরিয়ে দেয়া হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান বিচারককে

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান প্রসিকিউটর কারিম খান যৌন দুর্ব্যবহারের অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছুটিতে থাকবেন বলে আদালত নিশ্চিত করেছে।

শুক্রবার আইসিসির প্রসিকিউশন ডিভিশনের কর্মীদের জানানো হয়, খান সাময়িকভাবে তার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন, যতদিন না একটি বহিরাগত তদন্ত এই অভিযোগগুলো পরীক্ষা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায় এবং আদালত সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

দ্য হেগে অবস্থিত আদালত এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, খান “তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছুটিতে থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।” খান ছুটিতে থাকাকালে আদালতের দুই ডেপুটি প্রসিকিউটর তার দায়িত্ব সামলাবেন বলে জানানো হয়েছে।

ব্রিটিশ আইনজীবী কারিম খান গত কয়েক মাস ধরে তার বেশ কিছু উচ্চপদস্থ সহকর্মীর কাছ থেকে ছুটিতে যাওয়ার আহ্বান উপেক্ষা করায় কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়।

“ক্রমবর্ধমান গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর প্রেক্ষিতে, আমি বিবেচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছুটিতে থাকব,” আদালতের কর্মীদের পাঠানো একটি ইমেইলে খান এ কথা বলেন। তিনি আরও জানান, তার দুই ডেপুটি প্রসিকিউটর তার দায়িত্ব পালন করবেন।

আইসিসি সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহান্তে গণমাধ্যমে অভিযোগের নতুন তথ্য প্রকাশের পর আদালতের সিনিয়র কর্মকর্তারা আবারও তাকে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে চাপ দেন। এরপরই খান এ সিদ্ধান্ত নেন।

জাতিসংঘের ওভারসাইট সংস্থা (ওআইওএস) কর্তৃক পরিচালিত এই তদন্তে খানকে গত সপ্তাহে দুই দিনের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

গত বছরের নভেম্বর মাসে খানের এক নারী সহকর্মীর প্রতি তার আচরণ নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর এই তদন্ত শুরু হয়। দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, অভিযোগের মধ্যে রয়েছে অনিচ্ছাকৃত যৌন স্পর্শ, দীর্ঘ সময় ধরে “অবমাননাকর আচরণ”, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জোরপূর্বক আচরণ।

৫৫ বছর বয়সি খানের আইনজীবীরা আগে জানিয়েছিলেন, তিনি “অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন” এবং তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করবেন।

তদন্ত শেষে জাতিসংঘের ওভারসাইট সংস্থা একটি প্রতিবেদন আইসিসির গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে জমা দেবে, যিনি তদন্তের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করবেন।

তদন্তের আওতায় খানের বিরুদ্ধে সাক্ষীকে ভয়ভীতি দেখানো এবং কর্মীদের ওপর প্রতিশোধমূলক আচরণের অভিযোগও রয়েছে বলে জানা গেছে।

২০২১ সালে খান আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে নয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন। এই আদালত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার করে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ফেডারেশন (এফআইডিএইস) এক বিবৃতিতে খানের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, “এই সিদ্ধান্ত আদালতের নিরপেক্ষতা রক্ষায়, তদন্তে হস্তক্ষেপ এড়াতে এবং ভুক্তভোগী, কর্মী ও জনসাধারণের আস্থা পুনঃস্থাপন করতে অপরিহার্য।”

এফআইডিএইস আরও জানায়, “এই সিদ্ধান্তই ছিল দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয় - এমনকি আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটরও নন।”

খানের দুই ডেপুটি – ফিজির নাজহাত শামীম খান এবং সেনেগালের মামে মানদিয়ায়ে নিয়াং – এখন আদালতের প্রায় ৪৫০ সদস্যবিশিষ্ট প্রসিকিউটর দপ্তরের দায়িত্ব সামলাবেন।

এটা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন আইসিসি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প কারিম খানের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, কারণ আদালত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াওভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

ডেপুটিরা বর্তমানে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সংঘটিত অপরাধের তদন্তের দায়িত্বে থাকবেন। গত মাসে দ্য গার্ডিয়ান জানায়, খান ইসরায়েলি সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে নতুন আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

তদন্ত কবে শেষ হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। ছয় মাস ধরে চলা এই তদন্তে এখন পর্যন্ত অভিযোগকারী নারী ও একাধিক কর্মীর পাশাপাশি খানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

যদি প্রমাণিত হয় যে খান “গুরুতর অসদাচরণ” বা দায়িত্বের মারাত্মক লঙ্ঘন করেছেন, তাহলে আইসিসির ১২৫ সদস্য রাষ্ট্রের গোপন ব্যালটে তার অপসারণ নিয়ে ভোট হবে।

সূত্র: https://shorturl.at/NOOGn

মিরাজ খান

×